নির্বাচিত ছড়া- রায়হান ফেরদৌস
আষাঢ়ে গল্প
বউয়ের মুখে হাসির রেখা; নেই কোনো তার বায়না,
এই জীবনে স্বামী ছাড়া আর কিছু সে চায়না।
বাজার পানে ছুটছি ভোরে সদাইপাতি কিনতে,
কিনছি হেসে, আজ মনে নেই; ফরমালিনের চিন্তে।
বাচ্চাগুলোর দুষ্টুমি নেই; বরং ভীষণ শান্ত,
এই সেদিনও জ্বালা দিয়ে- দিনরাত্তি বেশ কানত।
আমজনতা দেশের রাজা; বলছে নেতা, ঠিক তো,
দেখত যদি অন্যরা আজ এসব তারাও শিখত।
নেতার মুখে ফুটছে সদাই দেশ-প্রেমিকের ছন্দ,
চারপাশে সুখ; কারো সাথে কারোর নেই তো কোনো দ্বদ্দ্ব।
কেউ নারীদের রাস্তাঘাটে করছে না আজ ত্যক্ত।
করছে রোগী স্বাস্থ্যসেবার সুখ-সুবিধা ব্যক্ত।
ধর্মের ভেদ কোত্থাও নেই; কী অপরূপ দৃশ্য,
এদেশকে রোল মডেল এখন মানছে পুরো বিশ্ব।
দ্রব্যে মূল্য বাড়ছে কমই; বাড়লেও খুব স্বল্প,
স্বপ্নে তোদের আজ শোনালাম আষাঢ়ে এক গল্প।
নিথর খেচর
প্রতিবাদের সকল ভাষা
এখন তুলে রাখো,
অন্যায়ের ওই আলেখ্য সব
মনে মনেই আঁকো।
শরিক তুমি হতে পারো
তেলমালিশের দলে,
আসবে টাকা কাড়িকাড়ি
যাবে শপিংমলে।
সত্য বলে মরার চেয়ে
এটা ভালো কী না?
আখের ভাল হলে কারোর
সবাই করে ঘৃণা।
লোকের ঘৃণায় কী আসে যায়
ভালোই বেঁচে আছি,
প্রতিবাদী খেচররা আজ
সাজছে বিড়াল, মাছি।
মানা
চোখ রয়েছে, মুখ রয়েছে
তবু বোবা, কানা,
কোনটা সঠিক কোনটা বেঠিক
যায় কী বলা হা, না।
হাত রয়েছে, পা রয়েছে
বিকল প্রতিবাদে,
সরল পথে চলতে গিয়ে
কেউ পড়েন যান খাদে।
ভয় রয়েছে, ক্ষয় রয়েছে
পাছের বিষয় জানা,
ন্যায়ের কথা বলতে গেলেই
ওপর তলার মানা।
প্রকৃতিও আমরা
যখন আমার নেয়না খবর আত্মীয়-স্বজন কেউ,
তখন আমার কাছে ভিড়ে নদীর শীতল ঢেউ।
যখন আমি একলা থাকি সবাই বলে পর,
আমার থাকার জন্য পাখি তৈরি করে ঘর।
যখন প্রবল বিষন্নতায় বন্ধ হবে শ্বাস,
তখন শ্বাসে সাহস যোগায় কোমল দুর্বাঘাস।
স্বার্থ শেষে সবাই যখন আমায় করে দূর,
তখন আমায় আগলে রাখে নানান পাখির সুর।
কষ্ট পেয়ে আমার চোখে ঝরে যখন জল,
ভালবেসে বুকে জড়ায়,গাছ-গাছালির দল।
স্বজন হারার শোকে যখন মনে ভাসে ভয়,
তখন নদী,পাখিরদলে বুকে টেনে লয়।
বুকে টেনে আদর করে শান্ত করে মন,
কত্ত মানুষ পাখি মারে, পোড়ায় হাজার বন।
প্রভাবশালী দখল করে নদী এবং নদ,
ওদের মানুষ যায় কী বলা? ওরা ইতর,বদ।
পাখি নিধন, নদী দখল- নেচার করলে নাশ,
মানুষ তুমি জেনে শুনে গলায় পড়বে ফাঁস।
সেই না ফাঁসে মরবে তুমি এবং হবে লাশ,
বাঁচলে নেচার, বাঁচবে মানুষ; সুখে বারো মাস।
কই হারালো সেসব
এইখানে এক নদী ছিলো আরও ছিলো ঘাট,
ঘাটের পাশে রোজ সকালে বসত বিশাল হাট।
হাটে তাজা মাছ মিলিত আরও পেতাম ফল,
জেলের জালে পড়ত ধরা ইলিশ মাছের দল।
সেখানে আজ হাট বসে না, উদাও বাশের ঘাট
নদীর পানি বিলিন হয়ে হচ্ছে বালুর মাট।
ভুমি দস্যুর যেই পড়িলও নদীর বুকে চোখ,
তখন থেকে নদী বেটির বাড়ল জ্বালা দুখ।
নদীর পানি ভরাট হয়ে দালান হলো সেই!
হাট বেটাটা প্রাণ হারালো আর হারালো খেই।
ইলিশগুলো সুপ্ত হলো পাই না দেখা আর
কোথায় গেলো! কই হারালো; সঙ্গ নিলো কার।
পাখির জীবন
পাখির সঙ্গে ঘুমাই আমি
পাখির ঘরে থাকি,
পাখির সুরে সুর মিলিয়ে
সকাল, বিকেল ডাকি।
পাখির ডানায় উড়ে বেড়াই
পাখির সুখে হাসি,
পাখি আমার আত্মীয় যেনো
ফুফু এবং মাসি।
ঘুমের ভেতর এসব দৃশ্যে
উঠছি আমি হেসে,
বোনের ডাকে ভাঙ্গল অমন
মজার নিদ্রা শেষে।
বলতে পারো? কেউ কী আছে-
মুক্ত পাখির মত?
থাকত না দুখ; জীবন যদি
পাখির মত হত।
গাছ লাগান
গাছ আমাদের বন্ধু এবং
গাছ আমাদের প্রান,
এসব জেনেও; সেই গাছেদের-
কেড়ে নিচ্ছি জান।
গাছ আমাদের হৃদপিন্ড; আর-
গাছ আমাদের শ্বাস,
গাছ কেটে ভাই করছি ভিষণ
নিজের সর্বনাশ।
গাছ থেকে পাই বেঁচে থাকার
আসল রসদ ভাই,
শহর গাঁয়ে অনেক বেশি
গাছ লাগানো চাই।
শহর গাঁয়ে গাছ লাগানো
বন্ধ হবে যেই!
প্রকৃতিটা বদলে যাবে
আর হারাবে খেই।
খেই হারিয়ে প্রকৃতি তার-
নিবে কঠিন শোধ,
থাকতে সময় গাছের প্রতি
বাড়াও তবে বোধ।
তিন্নি’র মুড অফ
মন ভালো নেই তিন্নি মনি’র
অফ রয়েছে মুড,
মায়ের অনেক জোরাজুরি
খায় না তবু ফুড।
খেলতে এসে ডাকছে তাকে
পাশের বাসায় জয়,
খেলবে না আজ বলে তিন্নি
ফিরিয়ে দিল টয়।
দেখবে টিভি রিমোট নিল
হয় না টিভি অন,
ঠিক সে সময় কারেন্ট ব্যাটায়
বলছে খেঁকে ‘গন’।
বলছি খুলে তাঁর মুখে ক্যান
আজকে হাসি কম,
হয়নি দেখা মটু-পাতলু
জেরি এবং টম।
মাথা কেনো ধরল?
ভনভন টনটন
করে শুধু মাথা,
রাগ করে কে ফেললো?
ড্রয়িং এর খাতা।
বলে ফেলি ফেললো কে?
তার নাম আখিঁ,
আকঁতে সে ভালবাসে
হাতি আর পাখি।
রাগ কেন করল সে
বলা আছে বাকি,
ঘোড়াটোড়া আঁকতে
বলেছিল কাকি।
এ দুটির ভিতরে সে
ঘোড়াটাকে চেনে,
টোড়া আঁকতে গিয়ে তার
চাপ পড়ে ব্রেনে।
তাইতো সে রাগ করে
ফেলে দিছে খাতা,
টনটন করে তার
ধরেছিল মাথা।
আম চোরও দাদু
রায়হান ফেরদৌস
দাদুর গাছের আম পেঁকেছে
হিসেব রাখেন চোখে,
জাল টেনে দেন খায় না যেনো
বাদুড় কিংবা পোকে।
দাদুর হিসেব গোলমেলে হয়
থাকেন যখন ঘুমে,
ফাঁক বুঝে তার টকটকে আম
কে খেয়ে যায় ধুমে।
সেদিন চোরে গাছে বসেই-
খাচ্ছিল আম পেড়ে,
হঠাৎ দাদুর চোখ পড়ে যায়!
দৌড়ে আসেন তেড়ে।
পাইছি তোরে আম চোরা ওই-
ছাড় পাবি না আরে,
ভয় পেয়ে চোর ঢাল ভেঙ্গে ফের
পড়ল দাদুর ঘাড়ে।