নির্বাচিত ছড়া- ওয়াহিদ ওয়াসেক
এমন যদি হতো
এমন যদি হতো—
হতাম আমি রিটন, রোমেন
ব্রত রায়ের মতো!
আমার ছড়া পত্রিকাতে
অনেক হতো ছাপা;
এগিয়ে যেতাম কদম কদম
কিংবা হেঁটে পা, পা!
এমন হতো যদি—
আমার ছড়া শিশুর খাবার
চিপস, চানাচুর, দধি!
আমার ছড়া পাঠ্যবইয়ে
পড়তো ছেলেমেয়ে;
বইমেলাতে উঠতো মেতে
আমায় কাছে পেয়ে!
এমন কি আর হবে?
আমার আজব স্বপ্নখানা
কল্পনাতেই রবে!
তাই তো রিটন, রোমেন এবং
আমার প্রিয় ব্রত;
একটা ছড়া যেও লিখেছে—
স্যালুট, সেলাম শত!
ঋতুই ছড়ার পুঁজি
সকাল, দুপুর, সন্ধ্যে এবং রাতে
লিখতে ছড়া বসেই টেবিলটাতে—
পাই না খুঁজে ছড়ার বিষয় কোনো
তখন আমি কী আর করি শোনো!
কলম চিবাই কাগজ ছিঁড়ি টেনে—
আর তো ভাবি, ক’জন আমায় চেনে?
এই যে আমি কই ছড়াকার নিজে;
আমার ছড়ায় শুকনো চিঁড়া ভিজে?
পত্রিকাতে আমার ছড়া ছাপে?
আমার ছড়া পাঠককুলে মাপে?
আবার ভাবি— ঝিমাই বসে বসে
আমার ছড়া কত্ত পাবে দশে?
এমন সময় বুদ্ধি মাথায় এলো—
ছড়ার একটা বিষয় পাওয়া গেল!
বিষয়টা কী— তোমার তো নেই জানা?
ভালোই হলো, বলতে আমার মানা।
আচ্ছা, শুনো— এখন গেলাম চলি…
যাওয়ার আগে একটা কথা বলি;
ছড়ার বিষয় করতে খোঁজাখুঁজি—
পড়ল মনে ঋতুই ছড়ার পুঁজি!
এখনও কি থাকোই পাশাপাশি
তোমার বাসার ছাদের উপর
চাঁদ উঠেছে অই—
এখন কি আর রাগ-অভিমান
খুব করো হইচই?
কিংবা— তোমার সকাল থেকে
রাত্রি গড়ায় ফোনে;
স্বপ্ন দ্যাখো, আমায় ভাবো
একমনে একমনে!
এখনও কি ঘুম থেকে রোজ
সকাল সকাল ওঠো;
উড়োমধুড়োম নাশতা সেরে
টিউশনিতে ছোটো?
হয় কি এখন মাথার ব্যথা—
চোখজ্বালা, চুলকানি;
চশমা ছাড়া আসলে আলোয়
গড়ায় চোখে পানি?
কাউকে এখন শাসন করে
হয় কি বলা— ‘চুপ’
পিক দেখে ফার্স্ট কমেন্ট করা
‘খুব মায়াবি রূপ’!
টোল পড়ে কি যখন হাসো—
মেরুনরাঙা হাসি;
এখনও কি ঝগড়া করে
থাকোই পাশাপাশি!
ডিমের ছড়া
‘হাট্টিমাটিম টিম’—
খাচ্ছো কেমন ডিম?
মূল্য শুনে হাত-পা আমার
খুব হয়ে যায় হিম!
ডিম খাওয়া আর সহজ নারে—
খাচ্ছি তো হিমশিম!
লক্ষ্মীসোনা কাননবালা
আমার আছে একটা পরি
গলায় থাকে গামছা পরা;
লেখতে পারে অনেককিছু—
কিন্তু লেখে মজার ছড়া!
আমার আছে একটা পরি
দুইটা দাঁত ওর একটু বাঁকা;
এই যে তুমি দ্যাখছো ছবি
এসব ছবি পরির আঁকা!
আমার আছে একটা পরি
এই পরিটা ভীষণ কালা;
আদর করে নাম দিয়েছি—
লক্ষ্মীসোনা কাননবালা!
তুমি তো আমার ছড়া
তুমি তো আমার শরতের চাঁদ
জোনাকির ঝিকিমিকি;
তুমি তো আমার খুব প্রিয় ঋতু
শুনো, বলি আর কী কী…
তুমি তো আমার আমলকী, তাল
আমনের ধানগোছা—
তুমি তো আমার মায়ের পাঠানো
ভাদরো মাসের মোচা!
তুমি তো আমার শাদা কাশফুল
শিশিরের ছোট ফোঁটা;
তুমি তো আমার আশ্বিনের ভোরে
রঙিন সূর্য ওঠা!
তুমি তো আমার শিউলি, বকুল
মিনজিরি, হিমঝিরি—
তুমি তো আমার এঁকেবেঁকে চলা
যৌবনা ধানসিঁড়ি!
তুমি তো আমার নারকেলপুলি
চিতই, ভাপার ধোঁয়া;
তুমি তো আমার রাত্রি শেষের
হালকা শীতের ছোঁয়া!
তুমি তো আমার আকাশের নীল
শাদা বকদের সারি—
ছড়া ছাড়া আর তোমার জন্যে
কিছুই লিখতে পারি?
এখানে থেমেছে
এখানে থেমেছে নদীর বহতা
গভীর জলধারা
থেমেছে এখানে আলোময় চাঁদ
ঝিকিমিকি সব তাঁরা!
এখানে থেমেছে বৃষ্টি ও ঝড়
গুড়ুম গুড়ুম মেঘ
থেমেছে এখানে সূর্যিমামার
তেজস্বী গতিবেগ!
এখানে থেমেছে ফুলের সুবাস
পুরনো শুকনো পাতা
থেমেছে এখানে মান-অভিমান
ছড়ায় লিখেছি যা তা!
এখানে থেমেছে তীব্র রোদ ও
বাতাসের গতিধ্বনি—
থেমেছে এখানে শুক্র, পৃথিবী
মঙ্গল, বুধ, শনি!
এখানে থেমেছে পাখিদের ডাক
গ্রীষ্ম, বর্ষা, শীত—
থেমেছে এখানে রবী, নজরুল
লালনের সব গীত!
এখানে থেমেছে হৈ-হুল্লোড়
লাফালাফি আর ঢঙ
থেমেছে এখানে হলদে, সবুজ
সাদা, কালো, নীল রঙ!
এখানে থেমেছে কত কত স্মৃতি
যত্তকথা না বলা—
থেমেছে এখানে তোমার-আমার
দীর্ঘ এপথচলা!
এ ঘর থেকেই
কত কত রাত কেটেছে আমার
যাবে না হিশেব করা;
একদা এ ঘরে কবিতা লিখেছি—
লিখেছি হাজার ছড়া!
জোৎস্না দেখেছি, চাঁদও দেখেছি
ডাকতে শুনেছি পাখি;
এ ঘর থেকেই— কত্ত শুনেছি
ঝিঁঝিদের ডাকাডাকি!
চুপ থাকা রাত বুঝেছি বুঝেছি
ক্যামনে বা যায় কেটে—
কখনো কখনো এমন হয়েছে
রাত গেছে বই ঘেঁটে!
কখনো শুনেছি শেয়ালের ডাক
কুকুরের ঘেউঘেউ—
হঠাৎ ভেবেছি আমার এ ঘরে
পায়চারী করে কেউ!
নিবিড় রাত্রে শীতল বাতাসে
গন্ধ শুঁকেছি কত—
জুঁইফোটা রাত, বেলিফোটা রাত
হয়ে গেছে সব গত!
ধীরে ধীরে ধীরে তাঁরা গেছে মুছে
আকাশে ফুটেছে নূর—
মসজিদ থেকে আজানের ধ্বনি
শুনেছি স্নিগ্ধ সুর!
এ ঘর থেকেই— রাত্রি পোহানো
দেখেছি বারংবার;
কিন্তু এখন, হয় না আমার
ভোর দেখা খুব আর!
Doll
এক ছিল Doll
ভেরি ভেরি স্মল
লাল, নীল জামা পরে
হাসে খলখল!
এক ছিল Doll
খুব খেতো জল
চকলেট, চানাচুর
আর আতাফল!
এক ছিল Doll
খেলে ফুটবল
গেয়ে যেতো রণগীত—
চল, চল, চল…
বৃষ্টি দিদি
সকাল সকাল ইশকুলে যাই—
পড়ার ভীষণ চাপ;
কিন্তু কড়া দুষ্ট রোদের
প্রচন্ড উত্তাপ!
পৃষ্ঠে বইয়ের কত্ত বোঝা
ক্যাডস পরেছি পায়ে;
নেই তো কোথাও একটু ছায়া
গাছ কাটুনের দায়ে!
দুঃখ আমার বলব কী আর—
এত্ত গরম ক্যান?
কেলাশরুমে ঘুমোয়, ঝিমোয়
তিনটে ডানার ফ্যান!
বৃষ্টি দিদি বলছি তোমায়
আমার সেলাম নিয়ো—
মিষ্টি হেসে আলতো করে
গা-ভিজিয়ে দিয়ো।