ছড়া

নির্বাচিত ছড়া- সুবর্ণা দাশ মুনমুন

সবুজ রঙের দেশ ছিল এক
সোনার ধানের মাঠ
টকটকে লাল সূর্য আঁকা
খুকুর সহজপাঠ।

সেই দেশেরি নদীর বুকে
রুপোলী রঙ ঢেউ
সঙ্গে ছিল কাশের খুশি
নদীর মাঝি সেও।

ছোট্ট গাঁয়ের পথের ধারে
মিলবে ছোট ঘর
মিশতো হেসে গাঁয়ের মানুষ
কেউ ছিলনা পর।

চাইলে বুঝি যায় পাওয়া যায়
রূপকথার এই দেশ?
বুকের রক্ত দিয়ে কেনা
সোনার বাংলাদেশ।

সন্ধ্যা হতেই মাদুর পেতে
বসলো চাঁদের বুড়ি
খুললো হেসে নীল রঙা এক
গপ্পে ঠাসা ঝুড়ি
ঝুড়ি খুলেই জিরোয় বুড়ি
একটু চিবোয় পান
বাজলো দূরে বেসুরো এক
খেক শেয়ালের গান।
খেক শেয়ালের বিয়ে দিয়েই
গপ্পো হলো শুরু
বিয়ের দিনে শেয়াল মামির
বুকটা দুরুদুরু।
বর‍যাত্রী বানরগুলো
আনন্দেতে নাচে
একটা হেসে ডিগবাজি খায়
একটা উঠে গাছে।
গপ্পে হঠাৎ গা ছমছম
ভয়ের উপক্রম
কনের মাসি ডোরকাটা বাঘ
পটকা ফোটায় দ্রম।

হাওয়ায় হাওয়ায় ভেসে
পার করে দিন
ভুতদের সোনামেয়ে
নাম টিনটিন।

জ্যামজেলি মেখে খায়
কুনোব্যাঙ ছা
মানুষ পেলেও ঘাড়
মটকায় না।

ভুতেদের ইসকুলে
পড়ে সে রোজ
খাতা জুড়ে অ,আ,ক,খ,
নামতার খোঁজ।

একটাই স্বপ্ন
চোখে ঝিকমিক
বড় হয়ে মানুষ সে
হবে ঠিক ঠিক।

রাত হলে মন বলে
হাউ মাউ খাও
মানুষের গন্ধটা
কোত্থেকে পাও?

বর্ষা এলেই বৃষ্টি নামে
হলদে ডুমুর পাতায়
বৃষ্টি ছোঁয়ার আনন্দে ব্যাঙ
তুললো পাড়া মাথায়।

বৃষ্টিজলে হাপুস হুপুস
লাগলো ব্যাঙের সর্দি
ছুট্টে গিয়ে বদ্যি ডাকে
সোনা ব্যাঙের বড়দি।

বদ্যি এসে পথ্যি দিল
নিম তেতুলের রস
তারচে সহজ ব্যাঙের জন্য
কান ধরে উঠ বস।

কান মলে ব্যাঙ শপথ নিল
ছুঁয়ে নিজের ঠ্যাং
ব্যাঙের ছাতা কিনেই তবে
ডাকবে ঘ্যাংর ঘ্যাং।

জুঁই কি বকুল আমের মুকুল
তাল শিশুদের গা,
একটু নুয়ে যাচ্ছে ছুঁয়ে
মেঘের বুড়ি মা।
কোন দেশে যায়, কোন সে পথে?
ফড়িং কি তার সাথি?
মা কি থাকে অপেক্ষাতে
মায়ার আঁচল পাতি?
রোজ সে দেশে আলতো হেসে
সুয্যি উঠে পূবে
হলদে সোনা রোদ ছড়িয়ে
পশ্চিমেতে ডুবে।
রোদ বিষ্টির মিষ্টি ছুঁয়ে
হাওয়ার লুটোপুটি
বোশেখ শেষে জষ্ঠি এলেই
আম কাঁঠালের ছুটি।

তিড়িং বিড়িং লাফায় ফড়িং
ঘাস ফড়িঙের ছা,
শালিক শুধোই কি হলো ভাই
নাচছো তাধিন না?
চার খানা পা বাড়িয়ে দিয়ে
হরিণ বলে হেসে,
বউয়ের সাজে শেয়াল মামী
ঘুরছে এলোকেশে।
রাঙা ঠোঁটে দিচ্ছে পুরে
সবুজ পানের খিলি,
বিয়ে বাড়ি সাজায় টিয়ে
রঙের ঝিলিমিলি।
বিয়ে বিয়ে পড়লো সাড়া
আনন্দেরই ধুম,
টুনটুনি বউ বর কনেকে
লাগালো কুমকুম।

একলা একা শীতের মেয়ে
বাজায় মাদল রৌদ্দুরে,
কুয়াশা গায়ে হঠাৎ হারায়
গ্রামগুলো আজ কোন্ দূরে।

শিশির ধোয়া ভোরে আকাশ
মিষ্টি হেসে দেয় উঁকি,
থির দুপুরে, জল নুপূরে
দুই বিনুনির ছোট্ খুকি।

গুড়- মুড়ি আর নাড়ু হাতে
রোদের খোঁজে থির ছোটা
শীত যেন সেই কমলা হলুদ
গাঁদা ফুলের নীল বোঁটা।

নলেন গুড়ের মধুর রসে
ধোঁওয়া ওড়ে পিঠের সুখ
শুকনো পাতায় জ্বলা আগুন
উষ্ণ করে দুই চিবুক।

মেঘ জমেছে মেঘের পিঠে
রোদ তবু দেয় উঁকি
দিচ্ছে পাড়ি আকাশ বাড়ি
ইলশেগুঁড়ির খুকি।

একশা ছুটে ইলশেগুঁড়ি
একটু থেমে চায় ?
হঠাৎ যেন ডাকলো পিছু
মেঘের বুড়িমা’য়।

কোথাওতো কেউ নেই দাঁড়িয়ে
চোখের পাতায় জল
হাত বাড়িয়ে ডাকছে কেবল
স্বচ্ছ ঝিলের জল।

ঝিলের জলে মাদল বাজায়
কোলা ব্যাঙের বর
নামছে দূরে ইলশেগুঁড়ি
কাঁপছে পাতার ঘর।

সন্ধ্যেটা নামতেই
উঠে এক ফালি চাঁদ
খোকা,বুড়ো সকলের
আনন্দ ভাঙে বাঁধ।
ফুল,পাখি হাসে সব
সাথে পুষি মিনিটাও
লাল ফ্রক পড়ে খুকি
দুলে দুই বিনিটাও।
ছোটদের মুঠো ভরে
সালামির খুশিতে
উৎসাহ বাড়ে জোর
কদমবুসিতে।
আজ ঈদ তাই কোন
ভেদাভেদ নেই তো
রাশি রাশি হাসি মেখে

গা ছমছম ভুতের বাড়ি
শুনতে কথা পাতলো আড়ি।
কথায় কথায় বিকেল যায়
সন্ধ্যা নামে দূরের গাঁয়।
গাঁয়ের নামটি ভুতুমপুর
ভুতের বিয়ে ভর দুপুর।
সকাল সকাল হলুদ আজ
বাদ্যি বাজায় নন্দ রাজ।
নন্দরাজের নাকটি বোঁচা
কান যেন শিং মারছে খোঁচা।
খোঁচা খেয়ে পালায় বর
শাঁকচুন্নির ভাঙলো ঘর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *