শিশুতোষ গোয়েন্দা গল্পের দ্বিতীয় পর্ব।। গরমের ছুটিতে গোয়েন্দাগিরি।। আহমেদ রিয়াজ
দুপুরের খাবার শেষ। কাঁচা কাঠালের তরকারিটা যা হয়েছে! এখনও মুখে স্বাদ লেগে আছে সুমনের। খাওয়া সেরে দোলনা বিছানায় এসে শুয়েছে। শুয়ে শুয়ে দোল খেতে খেতে আম গুণতে লাগল সুমন। আম গুণতে গুণতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে টেরই পায়নি। ঘুম ভাঙল মাসুক ভাইয়ের ডাকে। ‘চলো চলো।’
‘কোথায়?’
‘হাটে।’
‘হাটে?’
‘হাটে অনেক মজা। অনেক কিছু দেখতে পাবে। চলো।’
চটপট দোলনা বিছানা থেকে নেমে পড়ল সুমন। হাতমুখ ধুয়ে চলল হাটের পথে। সূর্য ততক্ষণে পশ্চিম আকাশে হেলে পড়েছে। কিন্তু তেজ কমেনি। হাটও বেশি দূরে নয়। হেঁটে গেলে বিশ মিনিট।
হাট বসেছে বিশাল এক মাঠে। সপ্তাহে দুদিন হাট। বাকি দিন খেলাধুলা হয় মাঠে। ফুটবল, ক্রিকেট, ব্যাডমিন্টন, কাবাডি।
এই প্রথম হাট দেখল সুমন। এর আগে বেশ কয়েকবার মামাবাড়ি এসেছিল। কিন্তু কখনো হাট দেখা হয়নি। কত্তরকম জিনিস দেখা যায় হাটে। কত্ত মানুষের আনাগোনা। নাগর দোলায় চড়ল। গরম গরম জিলাপি খাওয়ালেন মাসুক ভাই।
ওদিকে সন্ধে হয়ে আসছে। সন্ধের সময়টায় আর জমাটি ভাবটা থাকে না হাটে। হঠাৎ এক জায়গায় অনেক মানুষের ভিড় দেখল ওরা।
সুমন জানতে চাইল, ‘ওখানে এত ভিড় কেন মাসুক ভাই?’
‘মনে হয় বানরের খেলা দেখাচ্ছে।’
‘বানরের খেলা দেখার জন্য এত ভিড়! তবে তো দেখতেই হয়।’
‘চলো তাহলে।’
‘নাহ। খেলা নয় নাচ। গানের তালে তালে নাচছে এক পাল বানর। ডিসকো নাচ। বানরগুলোর গায়ে ঝকমকে পোশাক। ঝিকমিক করছে নাচের তালে তালে। একেক বানরের গায়ে একেক রকম পোশাক। বানর গুণতে শুরু করল সুমন। নয়টা পর্যন্ত গুণতে পেরেছে। আর গুণতে পারল না। খুব নাচানাচি করছে বানরগুলো। ওলটাপালট হয়ে যাচ্ছে। তবে সব মিলে দশবারোটার কম হবে না। পনেরটাও হতে পারে। চারপাশে অনেক মানুষ। একটা করে নাচ শেষ হচ্ছে আর হাততালি দিচ্ছে। হাততালি শেষ হতে না হতেই কোত্থেকে বেরিয়ে এলো আরো চারটা বানর। শক্তপোক্ত গর্তওয়ালা গোল হ্যাট নিয়ে সবার সামনে যাচ্ছে বানরগুলো। মানুষজন দুচার-পাঁচটাকা করে দিচ্ছে। কেউ নোট কেউ কয়েন।
দেখতে দেখতে চারটা হ্যাট ভরে গেল। আর অমনি বানরচারটা কোথায় যেন হাওয়া হয়ে গেল। আরেকটা গান শুরু হলো। আবার নাচতে লাগল বানরগুলো। তারপর গান শেষ হতেই আবার সেই চার বানর উদয় হলো। হাতে সেই চারটা হ্যাট।
সন্ধেটা নামল ঝুপ করে। মাসুক ভাই তাড়া দিলেন, ‘চলো চলো। শিগগির বাড়ি ফিরতে হবে। নইলে মা রাগ করবেন।’
হঠাৎ কী মনে হলো, এক কাঁদি কবরি কলা কিনে ফেললেন মাসুক ভাই। বললেন, ‘দুধ দিয়ে কবরি কলা মেখে ভাত খেতে দারুণ লাগবে।’
মুখ বাঁকিয়ে সুমন বলল, ‘উঁহ! কলা মেখে দুধ ভাত? কক্ষণো না।’
‘তুমি পছন্দ করো না?’
‘একদম না।’
‘দুধ পছন্দ করো?’
‘করি। গ্লাস ভরে দুধ খাই।’
‘কলা পছন্দ করো?’
‘করি। নিজের হাতে কলা ছিলে খাই।’
‘ভাত পছন্দ করো?’
‘করি।’
‘সবই তো পছন্দ করো দেখছি। পছন্দ করো না, কেন বললে তাহলে?’
সুমন বলল, ‘কলা মেখে দুধভাত খেতে আমার ভালো লাগে না। বমি আসে।’
‘ও আচ্ছা আচ্ছা।’
কাঁধে করে কলার কাঁদিটা নিয়ে এলেন মাসুক ভাই। মামি বললেন, ‘এটা কী এনেছিস?’
‘কলা।’
‘তা তো দেখতেই পাচ্ছি। কিন্তু এককাঁদি?’
সুমনকে দেখিয়ে মাসুক ভাই বললেন, ‘ও খাবে।’
মামি আরো রেগে গেলেন। ‘ও খাবে মানে? ও কী এক কাঁদি কলা খাবে রে? পুরো এক কাঁদি কলা ও খেতে পারবে?’
মাসুক ভাই দমলেন না। বললেন, ‘অতিথিদের জন্য একটু বেশিই কিনতে হয়। পাতে একটু বেশি পরিবেশন করতে হয়। সবটা কি কোনো অতিথি খায়?’
মামি দমে গেলেন। নরম গলায় বললেন, ‘তাই বলে এক কাঁদি কলা? এটা ঘরে ঢুকাবি না। বাইরেই ঝুলিয়ে রাখ।’
আপত্তি জানালেন মাসুক ভাই, ‘কিন্তু মা বাদুড়ের যা উৎপাত।’
‘খাকগে বাদুড়। এত কলা সবাই খেয়ে শেষ করতে পারবে না। পশুপাখিও খাক।’
আর কী করা? বারান্দায় কলার কাঁদিটা ঝুলিয়ে রাখলেন মাসুক ভাই।
রাতের খাওয়া শেষে সুমনকে দুটো কলা দিলেন মামি। প্রথমে খেতে চাইল না সুমন। মামির অনুরোধে একটা কলা খেয়েই মুগ্ধ হয়ে গেল ও। মাখনের মতো মোলায়েম। এত সুস্বাদু কলা আগে কখনো খায়নি ও। একে একে চারটে কলা খেয়ে ফেলল ও।
মামি বললেন, ‘মাসুকের খুব কলা প্রিয়। গাছপাকা কলা দেখলে আর ওকে আটকানো যায় না। কিনবেই কিনবে। আরো দুটো খাবে?’
সুমন বলল, ‘পেটে জায়গা থাকলে অবশ্যই খেতাম মামি। আর খেতে পারব না।’