কবি দুখু বাঙাল-এর জন্মদিনে কাব্যশীলনের শুভেচ্ছা
দুখু বাঙাল। জন্ম ৩০ জুন পটুয়াখালী জেলার ছোট ডালিমা গ্রামে। পিতৃপ্রদত্ত নাম মুহাম্মদ ইছহাক। মা আছিয়া খাতুন, বাবা আবদুর রশিদ হাওলাদার। দাদির আদুরে নাম দুখু। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া গ্রামের স্কুলে। নাজিরপুর-ছোট ডালিমা নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় (পূর্বে যা ছিল একটি মাদ্রাসা)। ১৯৬৯-এর ফেব্রুয়ারি। এইটে পড়াকালীন কতিপয় সহপাঠী ও বন্ধুদের নিয়ে তাঁর নেতৃত্বে একরাতের মধ্যেই স্কুলমাঠে গড়ে ওঠে শহিদমিনার। এই সাহসী ঘটনার জের ধরে ঘটে তাঁর স্কুলবদল। ভর্তি হন বাউফল হাইস্কুলে। এখান থেকেই ১৯৭২ এ (দ্বিতীয় ব্যাচ) তাঁর এসএসসি পরীক্ষায় পাস। ১৯৭৪ এ বাউফল কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ১৯৭৬ সনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রিলাভ। মহান স্বাধীনতাঁর যুদ্ধের কলমসৈনিক এবং মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের মার্চে ছাত্রনেতা আবুল কালাম খান ও থানা পুলিশের সহায়তায় বাউফল পাবলিক ফিল্ডে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ। একাত্তরের মে মাসে বরিশাল মেডিকেল কলেজে ভর্তি অসুস্থ বাবাকে দেখতে গিয়ে পাকিস্তানি সেনাদের হাতে আটক এবং নির্যাতনের শিকার হয়ে তিনদিন পর মুক্ত। স্কুলজীবন থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে জড়িত; ছিলেন ছাত্র ইউনিয়নের প্রথম সারির নেতা। ১৯৮১ সনে পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর পদে সরকারি চাকরিতে যোগদান। ১৯৮৭ সালে পদোন্নতি। ২০০৮-এর জুনে মাগুরা জেলায় কর্মরত থাকাকালীন বিভাগীয় এক বৈঠকে ক্রসফায়ার ও কমিউনিটি পুলিশিং নিয়ে দ্বিমত পোষণ করে বক্তব্য রাখার জের ধরে চাকরি ছেড়ে স্বেচ্ছাঅবসরগ্রহণ। বর্তমান পেশা লেখালেখি। লেখক নামেই অধিক পরিচিত। কলেজজীবনে বাউফলের কাচারি বাড়ির নাটমন্দিরে মঞ্চস্থ হয় তাঁর ‘আজব সংলাপ’ একাঙ্কিকা এবং ‘বিমূঢ় জিজ্ঞাসা’ নাটক। ছেলেবেলা থেকে বিভিন্ন পত্রিকার ছোটদের আসর ও শিশুতোষ পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে আত্মপ্রকাশ। সত্তর দশকের এই কবি কবিতায় ভিন্ন স্বাদ ও মাত্রার দাবিদার।
পুরস্কার ও সম্মাননা— সাহিত্য ও সংস্কৃতি সংগঠন ‘একাল’ জীবননগর কর্তৃক সংবর্ধনা (১৯৯৫), মোড়েলগঞ্জ নাগরিক কমিটি কর্তৃক গণসংবর্ধনা (১৯৯৭), বাগেরহাট প্রেসক্লাব কর্তৃক সংবর্ধনা (২০০৩), বর্ষবরণ ও বৈশাখী মেলা ১৪১০ উদযাপন পরিষদ বাগেরহাট কর্তৃক সম্মাননা (২০০৩), জীবননগর সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সম্মাননা পুরস্কার (২০১১), জেলা প্রশাসন সাতক্ষীরা কর্তৃক জীবনানন্দ সম্মাননা স্মারক (২০১২), সাতক্ষীরা উত্তর কালিগঞ্জ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক পদকপ্রদান (২০১২), নড়াইল অগ্নিবীণা সম্মাননা স্মারক (২০১২), নজরুল পাঠাগার ও ক্লাব রানিরবন্দর দিনাজপুর কর্তৃক সম্মাননা (২০১২), স্বাধীনতা সংসদ ঢাকা কর্তৃক কাজী নজরুল ইসলাম স্মৃতি পদক (২০১২), কবিতালাপ পুরস্কার ২০১১ (২০১২), মাইকেল মধুসূদন শুভেচ্ছা সম্মাননা (২০১৩), পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা গ্রন্থসাথী কবিসম্মাননা (২০১৪)। কবিতা পরিষদ সাতক্ষীরা কর্তৃক কবিসম্মাননা (২০১৭)সহ অনেক। এ পর্যন্ত প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম— নির্বাচিত নির্বাসন (১৯৮৬), নির্জন পাথর (১৯৯৪), কাছে আসি দূরে যাই (২০০১), সমুদ্র সান্নিধ্যে মন (২০১১), যে পাতে জনমলোহু (২০১৫), সোনার কবজ (২০১৮), হরিজন শব্দাবলি (২০১৮) ও ছড়ার বই পায়রা নদীর পট (২০১৫) এবং একাত্তর ও সপ্তম নৌবহর (২০১৬), নির্বাচিত কবিতা (২০১৯), ছড়া-সংগ্রহ (২০২০), শ্রেষ্ঠ কবিতা (২০২০) ও দীর্ঘ কবিতায় পিতা তুমি (২০২০) ।