আজ ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ শিশুবন্ধু লিয়াকত আলী লাকী’র জন্মদিন
বাংলাদেশের প্রথিতযশা নাট্যব্যক্তিত্ব এবং দেশের সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরুষ লিয়াকত আলী লাকী ১৯৫৭ সালের ১৩ জানুয়ারি ঢাকার নবাবগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে নাট্য নির্দেশক, অভিনেতা, নাট্যকার, সঙ্গীতশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, প্রাবন্ধিক এবং সর্বোপরি একজন আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক সংগঠক হিসেবে তিনি দেশ-বিদেশে বিপুল সুনাম অর্জন করেছেন। এই অকুতোভয় শিল্পী ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার পর সারাদেশে প্রতিবাদ ও জাগরণ সৃষ্টির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি দেশের প্রথম সারির নাট্যদল ‘লোক নাট্যদল’-এর অধিকর্তা। ডাকসু’র সাংস্কৃতিক সম্পাদক হিসেবে তিনি ১৯৮২ থেকে ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত পাঁচ শতাধিক শিল্পী নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংস্কৃতিক দল গঠন ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ পুন:প্রতিষ্ঠায় ব্যাপক সাংস্কৃতিক কর্মকা- পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের শিশুনাট্য আন্দোলনের অন্যতম আলোকিত পুরুষ লিয়াকত আলী লাকী’র নেতৃত্বে ১৯৯০ সাল থেকে শুরু করে বর্তমানে প্রায় ২৬২টি শিশু ও যুব নাট্যদল সংগঠিত হয়ে নিয়মিত নাট্যচর্চা করে আসছে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত পিপল্স থিয়েটার এসোসিয়েশনের কার্যক্রম আজ দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও বিস্তার লাভ করেছে। তিনি শিশু-কিশোর ও যুবদের নিয়ে তিনশতাধিক নাট্যকর্মশালা পরিচালনা করেছেন। ১৯৬৪ সাল থেকে নিয়মিত নাট্যচর্চার মাধ্যমে তিনি ৮৫টি নাটক নির্দেশনা এবং ৬২টি নাটকে অভিনয় করেছেন। তিনি আন্তর্জাতিক নাট্য সংগঠন আইয়াটা ও আসিটেজের বাংলাদেশ প্রতিনিধি। তাঁর নির্দেশিত ‘কঞ্জুস’ বাংলাদেশের সর্বাধিক মঞ্চায়িত নাটক। তিন শতাধিক অভিনেতা ও কলাকুশলীর অংশগ্রহণে তাঁর নির্দেশিত প্রতœনাটক ‘মহাস্থান’ বাংলাদেশের নাট্যধারার এক অনন্য সংযোজন। দেশের প্রতœনাটক চর্চার প্রবর্তক এবং বাংলাদেশের বধ্যভূমিতে পরিবেশ থিয়েটার মঞ্চায়নে তিনি অনবদ্য ভূমিকা পালন করে চলেছেন।
বর্তমানে বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশানের চেয়ারম্যান এবং বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক হিসেবে তিনি বিশেষ দক্ষতার পরিচয় দিয়ে আসছেন। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির কার্যক্রম এখন জেলা থেকে উপজেলা পর্যন্ত সম্প্রসারিত। ‘শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু’, ‘শিল্পের আলোয় মহান মুক্তিযুদ্ধ’ শীর্ষক ব্যাপক শিল্পযজ্ঞ তিনি পরিচালনা করে আসছেন। ১৬ কোটি মানুষের জন্য শিল্পসংস্কৃতি এবং ৫৬ হাজার বর্গমাইলে শিল্পসংস্কৃতির আলো প্রজ্বালিত করে শিল্প-সংস্কৃতি-ঋদ্ধ সৃজনশীল মানবিক বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে চলেছেন।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের নাটককে সুপ্রতিষ্ঠিত করা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকা-ে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে তিনি ভারত, জার্মানি, জাপান, কানাডা, কোরিয়া, কিউবা, ফিলিপাইন, গ্রীস, সুইডেন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, তুরস্ক, সিঙ্গাপুর, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, মোনাকো, ফ্রান্স, হংকং, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, নেপাল, ইংল্যান্ড প্রভৃতি দেশ সফর করেছেন।
তাঁর রচিত ও সম্পাদিত গ্রন্থের মধ্যে: ‘বীরাঙ্গণা বীরমাতার জবানিতে একাত্তরের ভয়াল স্মৃতি’, ‘মুক্তিযুদ্ধের নাট্য সংকলন’- (এক ও দুই), ‘কবিতায় বঙ্গবন্ধু’, ‘মুক্তিযুদ্ধের পঙ্ক্তিমালা’, ‘মহান একুশে’, ‘চির উন্নত শির’, ‘ ছোটদের নাটক’, ‘বাংলাদেশের শতবর্ষী নাট্যমঞ্চ’, ‘কল্যাণ মিত্র নাট্য সমগ্র’ (এক, দুই ও তিন), ‘দ্রোহ ও মুক্তির গান’ এবং ‘কবিতা ও কবিতায় স্বাধীনতা ও বিজয়ের গাঁথা’ উল্লেখযোগ্য।
নাট্যকলায় গৌরবজনক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ঋত্বিক নাট্যপ্রাণ লিয়াকত আলী লাকীকে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ‘একুশে পদক ২০১৯’-এ ভূষিত করে। এছাড়াও তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্বর্ণপদক, মুনীর চৌধুরী পদক, কলকাতার ‘সমলয়’ কর্তৃক শ্রেষ্ঠ শিশুনাট্য পুরস্কার, পশ্চিমবঙ্গের ‘বাংলার মুখ’ কর্তৃক দুই বাংলার শ্রেষ্ঠ অভিনেতা পুরস্কার, আসিটেজ সম্মাননা, খেলাঘর আসর কর্তৃক ‘সাংবাদিক বজলুর রহমান ভাইয়া স্মৃতি স্বর্ণপদক ২০১৬’, আসাম সরকার ও ব্যতিক্রম কর্তৃক ‘ড. ভূপেন হাজারিকা ইন্টারন্যাশনাল এ্যাওয়ার্ড’ এবং জাপানের তাইয়ামা’র গভর্নর কর্তৃক প্রদত্ত সম্মাননাসহ বিভিন্ন পুরস্কার লাভ করেছেন।।
কাব্যশীলনের পক্ষ থেকে এই গুণীজন-কে জন্মদিনের শুভেচ্ছা।