শিল্প-সংস্কৃতি

আজ কবি ফকির ইলিয়াসের জন্মদিন

২৮ ডিসেম্বর, কবি ফকির ইলিয়াসের জন্মদিন। ১৯৬২ সালের এই দিনে তিনি সিলেটে জন্মগ্রহণ করেন। প্রধান পরিচয় কবি হলেও তিনি নিয়মিত লিখছেন প্রবন্ধ, গল্প, গ্রন্থসমালোচনা। এই পর্যন্ত তার প্রকাশিত গ্রন্থসংখ্যা ২৭টি তার প্রকাশিত গ্রন্থগুলো হলো
১। বাউলের আর্তনাদ -গান-১৯৮৫
২। হৃদে গাঁথা মালা -গান-১৯৮৯
৩। এ নীল নির্বাসনে -কবিতা-১৯৯১
৪। অবরুদ্ধ বসন্তের কোরাস -কবিতা-১৯৯৬
৫। দাক্ষিণ্য বিষয়ক দিন -কবিতা-১৯৯৮
৬। বৃত্তের ব্যবচ্ছেদ -কবিতা-২০০১
৭। অনন্ত আত্মার গান -গান- ২০০২
৮। কবিতার বিভাসূত্র -প্রবন্ধ- ২০০৯
৯। চৈতন্যের চাষকথা -গল্প-২০১০
১০। গুহার দরিয়া থেকে ভাসে সূর্যমেঘ -কবিতা-২০১১
১১। ছায়াদীর্ঘ সমুদ্রের গ্রাম -কবিতা-২০১২
১২। গৃহীত গ্রাফগদ্য -কবিতা-২০১৪
১৩। অনির্বাচিত কবিতা -কবিতা-২০১৫
১৪। সাহিত্যের শিল্পঋণ -প্রবন্ধ-২০১৬
১৫। মুক্তিযুদ্ধের মানচিত্র ও স্বাধীনতার উত্তরাধিকার -প্রবন্ধ-২০১৭
১৬। মেঘাহত চন্দ্রের প্রকার -উপন্যাস-২০১৭
১৭। শহীদ কাদরী’র দরবারের দ্যুতি -প্রবন্ধ-২০১৮
১৮। প্যারিস সিরিজ ও অন্যান্য কবিতা -কবিতা-২০১৮
১৯। নক্ষত্র বিক্রির রাতে -কবিতা-২০১৯
২০। সম্মোহিত শব্দদাগ -প্রবন্ধ-২০১৯
২১। গ্রহান্ধ ঘরের কাহিনি -কবিতা-২০১৯
২২। ধানমণ্ডির ধ্বনিপুত্র -কবিতা- ২০২০
২৩। যতিকল্পের প্রতিপৃষ্ঠা -প্রবন্ধ ২০২২
২৪। নির্বাচিত সনেট -কবিতা ২০২২
২৫। বঙ্গবন্ধুর জ্যোতিরেখায় শেখ হাসিনা -প্রবন্ধ ২০২৩
২৬। শ্রেষ্ঠ কবিতা (জুলাই ২০২৩, নিউইয়র্ক বইমেলা)
২৭। নির্বাচিত প্রেমের কবিতা -২০২৪

দীর্ঘদিন ধরে ‘দ্য অ্যাকাডেমি অব আমেরিকান পোয়েটস’, ‘দ্য অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’, ‘কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস’, ‘আমেরিকান ইমেজ প্রেস’, – এর সদস্যের দায়িত্ব পালন করছেন।

অচল সেলাইকলে জমা হচ্ছে মেঘ,ঝড় আসবে কী না
তা জানার চেষ্টা না করেই,জড়ো হচ্ছে মানুষ,একটি
বৃক্ষ তাদের ছায়া দেবে বলে; ক্রমশ কাছে ভিড়ছে।
খুলে যাচ্ছে অগ্নির প্রতিটি অঙ্গ। খুলে যাচ্ছে প্রত্যঙ্গের
ভেতর সঞ্চিত বরফ। কয়েকটি শিশু নতুন বন্দোবস্ত
খুঁজে ছিঁড়ে ফেলছে বৃক্ষের অনেকগুলো পাতা।
এখানে পিতার হস্তরেখা ছিল। এখানে আমাদের মা,
দাঁড়িয়ে প্রতীক্ষা করতেন পিতার। আর সংসারের ছোট্ট
ছেলেটি সাইকেল চালাতে চালাতে পেরোতো যে পথ-
সেই পথেই এখন আগুন আগুন বলে সাইরেন বাজাচ্ছে
ফায়ার সার্ভিস। এমন অনেক গল্প বলতে বলতে-
একজন বৃদ্ধ পতাকা-বিক্রেতা, আনমনে হাঁটছেন।
এখানে কোনোদিন তুষারপাত হয়নি! অথচ আজ
কালো ধোঁয়ার বরফে আচ্ছাদিত হয়ে আছে পুরো শহর !

জন্মের বিধান পড়ে এই নদী চিনেছে সাকিন
আমি তার সাথী হয়ে দিয়েছি তো সেই পথ পাড়ি
তবুও বনের পাখি উড়ে গেছে সব সঙ্গ ছাড়ি
আমি তার অপেক্ষায় থেকে থেকে হয়েছি প্রবীণ !
যুগের লেখক হয়ে যে আকাশ ছায়া পেতে থাকে
তার পাশে তারাগুলো একা হয়ে নগ্ন শরীরে
কী মায়ায় আঁকে মুখ-কররেখা, জলভূমি ঘিরে
ভালোবাসা ভুল নয়, মাটি তাই নাম লিখে রাখে।
আবার ভূমিষ্ট হবো, সমতল মেঘ এলে কাছে
এমন প্রত্যয় নিয়ে গোলাপের একক বাগান
কুঁড়ির আঁচড় দেখে বৃষ্টিও করে জল দান
বাসন্তী রঙের মায়া এভাবেই তরুশাখে নাচে।
যে বিধান ছাপ রাখে মহাকালে, উত্তর সনদে
আমি তার রূপকল্পে মিশে যাই প্রতি পদে পদে।

কান্না কখনও আমাকে স্পর্শ করে না। সুতো ও সূচের সম্বন্ধ
পরখ করতে করতেই আমি জেনেছি,’ঢেউকান্ত সেন’ নামে
এই তল্লাটে এক কবি ছিলেন। তার খাদ্য ছিল বনজ স্মৃতি আর
বিছানা ছিল নির্জন দুপুরের মেঘ! শিয়রে শস্যশিমুল নিয়ে তিনি
পথ চেয়ে থাকতেন। কার অপেক্ষা করতেন- তা কেউ কোনোদিন
তাকে জিজ্ঞেস করেনি।জানতে চায়নি তার প্রকৃত সাকিন ও স্বদেশ!
কে ‌উদ্বাস্তু আর কে শরণার্থী- এর সঠিক পরিসংখ্যান জাতিসংঘের
কাছে আছে কী না; তা আমার জানা নেই ! অথবা যারা নিজ দেশেই
গৃহহারা আজ-; তাদের দিকে তাকিয়ে এসব বোমাবাজদের পাঁজর
কাঁপে কী না, তা জানতেও মন চায় না আর। মাথায় পাথর মেরে
যারা খুন করে, তাদের প্রকারভেদ আরেক খুনীই জানে ! নিরীহ
মানুষেরা গর্জে ওঠার পূর্ব পর্যন্ত জমাট বরফের মতো দাঁড়িয়ে থাকে।

ঘুমন্ত শঙ্খচূড়ের মতোই ছবিগুলো থেকে যাবে।
কারো সিথানে, কারো পৈথানে জাগ্রত বিবেক নিয়ে
কোনো কবি লিখবে ওই ছবির নতুন ইতিহাস।
যারা বাড়ি পুড়িয়েছিল,
যারা পুড়িয়েছিল সকল আসবাব-
তাদেরকে ক্ষমার অযোগ্য ঘোষণা করেই লিখিত হবে
নয়া বন্দোবস্ত ! আরেকটি নতুন সনদ নিতে কিছু
মুক্তিযোদ্ধা লাইনে দাঁড়াবেন।
সেনাপতি আবারও জোরে হাঁক দিয়ে বলবেন-
জয় বাংলা !

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *