সাক্ষাৎকার

সাংস্কৃতিক চর্চা তো শুধু নিজের জন্য নয়, তা দিয়ে একটা দেশকে চেনা যায়।। ড. মুকিদ চৌধুরী

জন্ম : ১২ নভেম্বর ১৯৬৮, মুকিমপুর, নবীগঞ্জ। পিতা : দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরী। মাতা : রত্নগর্ভা শিরীণ চৌধুরী।
ড. মুকিদ চৌধুরী একাধারে বিজ্ঞানী, ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, নাট্যকার ও কবি। বাংলা সাহিত্যের প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই রয়েছে তাঁর পদচারণা। নাট্যোপন্যাস : যোদ্ধা, আটই ফাল্গুন, অপূর্ণতার পরিপূর্ণতা (নাট্যোপন্যাস পঞ্চক), অশোকানন্দ, কর্ণপুরাণ, গোমতীর উপাখ্যান, তারকাঁটার ভাঁজে, রাজাবলি ইত্যাদি। নাটক : ত্রয়ী (নাটক : যোদ্ধা, কলকাতায় মির্জা গালিব, আটই ফাল্গুন), জলের ভেতর জলের বিসর্জন, অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি, বন্ধ্যা ইত্যাদি। গল্পসম্ভার : তীরের বৃক্ষরাজি, কস্তুরী গন্ধ, খুঁত। কাব্যসম্ভার : অনাহূত অতিথি, বিষের বিন্দু, কবিতাসমগ্র : এক। কাব্যনাট্য : গঙ্গাঋদ্ধির নারীবৃন্দ, রাজা গৌড় গোবিন্দ, মেঘদূত। গবেষণা : জার্মানি : অতীত ও বর্তমান, ইংল্যান্ড : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস, নেপোলিয়ন বোনাপার্ট, ফরাসি বিপ্লব (১৭৮৯—১৭৯৯), স্বরূপ অন্বেষণ (হবিগঞ্জের ইতিহাস)। সাহিত্য ও সংস্কৃতি : জার্মান সাহিত্য : প্রাম্ভর থেকে অধুনা, কথাকলির একটি মানচিত্র, নৃত্য। বিজ্ঞান : পৃথিবী।

বহুমাত্রিক লেখক ,গবেষক ও নাট্যকর ড. মুকিদ চৌধুরী। শিল্পের বহুবিধ ধারায় নিজেকে উপস্থাপন করেছেন বহুরৈখিক মত ও পথের মধ্য দিয়ে। যেখানে স্থান পেয়েছে সমাজ, রাজনীতিম শিক্ষাদীক্ষা, ধর্মকর্ম, নাটক, নৃত্য-সংগীত, শিল্প-সাহিত্য, ইতিহাস-ঐতিহ্য। এই লেখার মধ্য দিয়ে জাতির হৃদয়ে পাপড়ি মেলে বিকশিত হয়েছে নবচিন্তা-চেতনা। এই বিকাশের সাধনাই জাতির সত্য ও সুন্দরের সাধনা পূর্ণতার অভিমুখে অপূর্ব যাত্রা। সে যাত্রাপথ সুগম করতে ভাষা ও চিন্তার উন্নত নান্দনিকতা প্রয়োগে শিল্প সৃষ্টিতে নিমগ্ন তিনি। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন বাংলা সাহিত্যের এই সময়ের গুরুত্বপূর্ণ লেখক ও তরুণ বুদ্ধিজীবী- শামস সাইদ

প্রশ্ন: কম বয়সেই জন্মভূমি ছেড়ে অন্যদেশের বাসিন্দা হয়েছেন। বাংলাদেশে কাটানো আপনার শৈশব-কৈশোরের দিনগুলো কেমন ছিল? উল্লেখযোগ্য কোনো ঘটনা আছে যা আজও মনে পড়ে। কল্পনায় হারিয়ে যান সেই জীবনে।

উত্তর: ১৫ আগস্ট ১৯৭৫। ভোরে আমার মা শিরীণ চৌধুরী দোতলার সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে আমাকে ডেকে বললেন, ‘আমাদের সর্বনাশ হয়ে গেল। ওরা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে।’ সিঁড়ির ওপর বসে তিনি শোকের আগুনে জ্বলতে জ্বলতে বলতে থাকেন, ‘শেখ মুজিবকে হত্যার মধ্য দিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা আত্মঘাতী চরিত্রই তুলে ধরেছে। বঙ্গবন্ধুকে দৈহিকভাবে হত্যা করা হলেও তার মৃত্যু নেই। তিনি চিরঞ্জীব।’ ভোরটা (৫টা ১৫ মিনিট) এসেছিল ‘রক্ত স্রোতে ভেসে’। সেই ভোরেই শুরু হয় প্রকৃতির অশ্রুপাত। রক্তে ভেজা বাতাসও কেঁদেছে সেই ভোরে। ঘাতকদের উদ্যত অস্ত্রের সামনে গোটা বাংলাদেশ হয়ে পড়ে ভীতসন্ত্রস্ত। কল্পনাহীন শোকে থমকে যায় সমগ্র বাংলাদেশ। এই শোক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-সহ তার পরিবারের সবাইকে নৃসংশ হত্যার। খুব অল্প সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুসহ তার পরিবারের আঠারো জনকে সেই ভোরে ইতিহাসের জঘন্যতম হত্যাকাণ্ডের মাধ্যমে সরিয়ে দেওয়া হয় পৃথিবী থেকে। সেই বর্বরোচিত হত্যাকান্ডে পাষণ্ড ঘাতকদের হাত থেকে রেহাই পায়নি শিশু রাসেল, শিশু বাবু, এমনকি অস্তঃসত্ত্বা বধূও। এই ঘটনাটিকে অন্তরে ধারণ করেই আমার জীবন চলা। আমার চেতনার মূল : মুক্তিযুদ্ধ আর সাম্যবাদ।

প্রশ্ন : লেখালেখিতে কীভাবে এলেন? আপনার বাবা বিখ্যাত লেখক ও রাজনীতিবিদ। তাঁর লেখক জীবন আপনার ওপর কোনো বিশেষ প্রভাব ফেলেছে?

উত্তর: একজন সাহিত্যিক যখন সমাজে মহীরুহ হয়ে ওঠেন, সেটা শুধুই তাঁর লেখার জন্য হন না। লেখার সঙ্গে-সঙ্গে তাঁর যাপন, সামাজিক অনুভূতি ও দায়বদ্ধতা, মানবিক দিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, সহানুভূতিশীলতা– এই সবেরই সমন্বয় সেই ব্যক্তিকে এমন এক জায়গায় উপনীত করে, যেখানে তাঁর দিকে তাকালে মনে হয় তিনি আমাদের কল্পনার চেয়ে বৃহৎ, আদর্শের চেয়ে মহৎ। আমাদের সাধ্য কী তাঁকে আমাদের ভাবনার মধ্যে ধরি! খুব কাছ থেকে দ্রোহী কথাসাহিত্যিক আব্দুর রউফ চৌধুরীকে দেখতে-দেখতে আমার মনে হয়েছে, আমি খুব সৌভাগ্যবান যে আমি তাঁর উত্তরসূরি, আমি তাঁর সঙ্গে কথা বলতে পারছি, আড্ডা দিতে পারছি, নানা আবদার করতে পারছি, আর অক্লেশে তিনি আমাকে প্রশ্রয় দিয়ে যাচ্ছেন। এই আমি কিন্তু শুধুই আমি নই, এই আমি আমারই মতন আরও অনেক তরুণ, অতি তরুণ, অধিক তরুণ কবি বা লেখক যাঁরা আমারই মতন সমান সৌভাগ্যবান। তরুণতম কবি-লেখকদের হাজির হতে দেখেছি তাঁর কাছে তাদের অসহায়তা নিয়ে, তিনি পরম স্নেহে সাধ্যমতো চেষ্টা করেছেন সাহায্য করতে। এসব সত্ত্বেও আমাকে তাঁর খুব কাছের একজন, বন্ধুর মতো করে নিতে কোথাও আটকায়নি। খুব কাছাকাছি থাকতে-থাকতে যতবারই তাঁকে নিজের মতো করে বোঝবার প্রয়াসী হয়েছি, ততবারই তিনি প্রকাশিত হয়েছেন আরও মহৎ মানুষ হয়ে, আরও বৃহৎভাবে। বারবার ভাবতে চেয়েছি কী কী সেই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য যা তাঁকে করে তুলেছে এক মহীরুহ। তিনি ছিলেন অনাবাসী মুক্তিযুদ্ধ সংগঠক। ছিলেন মুক্তচিন্তার অধিকারী। তাঁর বক্তব্য, তাঁর রচনাবলি মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধুর ব্যাপারে আপসহীন। এই চেতনা ও দৃঢ়তা আমাকে প্রভাবিত করে। তাঁর লেখা পড়তে পড়তেই নিজে লিখতে শুরু করি। তিনিই আমার চেতনা, তিনিই আমার সাহিত্য গুরু।

প্রশ্ন: আপনি যেদেশে বাস করেন সেখানের ভাষা ইংরেজি। ইংরেজি ভাষায় লিখলে আপনার লেখা আন্তর্জাতিক বাজারে বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠত সেই সঙ্গে বহু পাঠকের কাছেও পৌঁছত। তা বাদ দিয়ে কেন বাংলাভাষায় লেখেন?

উত্তর: আমার গবেষণাগুলো ইংরেজিতেই। ছাত্রজীবনে লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সমাজের সাপ্তাহিক ছাত্রাবার্তায় আমার ‘বাংলাদেশের ইতিহাস’ ধারাবাহিকভাবে ইংরেজিতেই ছাপা হয়। পরবর্তীতে বিলাতের সাপ্তাহিক ‘সিলেটের ডাক’ পত্রিকায় এসব ‘পুরাণ কথার শুকপাখি’ নামে ধারাবাহিকভাবে বাংলায় ছাপা হয়। তাই বলা যায় যে, আমার লেখালেখি শুরু হয় ইংরেজিতেই। কিন্তু সাহিত্য চর্চা করতে গিয়ে মনে হয়েছে বাংলা ছাড়া অন্যকোনও উপায় নেই। আমি একজন পাঠক হতে চেয়েছি, লেখক নয়। এখনও আমার মনে হয়, আমি বাংলা সাহিত্যের পাঠকই হয়ে উঠতে পারেনি। আরও পাঠ করার বাকি রয়েছে। আমার ব্যক্তিগত পাঠাকারে তিন হাজারের মতো বই আছে। বাছাই করা ইংরেজি ও বাংলা বই। এসব সংরক্ষণে রাখার মতো। এগুলো আমি বারবার পড়ি। নতুন বই সংগ্রহ ও পাঠ করি। তারপরও বাংলা সাহিত্য আমাকে উন্মাদ করে। বাংলা ছাড়া সাহিত্য প্রকাশ আমার পক্ষে অসম্ভব। একটা উদাহরণ দিই : গত বিশ বছর ধরে বি‍লাতে যতসব নাটক আমি করেছি সেসব বাংলায়। কেউ যদি আমাকে বলেন দর্শক তো বাংলা নাটক বুঝবেন না। উত্তর : উৎকৃষ্ট নাটক বোঝার জন্য ভাষা নিষ্প্রয়োজন। তাহলে বুঝতেই পারছেন বাংলার ব্যাপারে আমি কতটা আপসহীন। খ্যাতির জন্য লিখি না। লিখি মনের প্রশান্তির জন্য। সাহিত্য মন্থনের জন্য।

প্রশ্ন: বলা, লেখা ও সাহিত্যের ভাষা আলাদা। একই ভাষার এই তিন রূপ আমরা দেখতে পাই। বলা যতটা সহজ লেখা তার থেকে কিছুটা কঠিন, সাহিত্যের ভাষাটা আরও কঠিন। আপনার লেখায় ভাষার কারুকাজ অপূর্ব। মনে হচ্ছে ভাষা নিয়ে আপনার ব্যাপক গবেষণা আছে। ভাষা নিয়ে নান্দনিক এক খেলায় মত্ত হতে পছন্দ করেন। বাংলাদেশ থেকে বহুদূরে থেকেও সাহিত্যের এই ভাষা কীভাবে রপ্ত করলেন?

উত্তর: আপনি ঠিকই উপলব্ধি করেছেন। আমি লেখার জন্য লিখি না। শব্দ নিয়ে খেলতে পছন্দ করি। হয়তো বিদেশি সাহিত্য সম্বন্ধে অবগত তাই, দেশি শব্দ দিয়ে জগৎ সৃষ্টি করতে চাই। আমার লেখায় বিদেশি শব্দ বর্জন করি। পুরাতন বাংলা শব্দকে নূতনভাবে ব্যবহার করতে চাই। আমার প্রিয় মাইকেল মধুসূদন দত্ত, বঙ্কিম চট্টপাধ্যায়। আমার বাবা আমাকে মাইকেল মধুসূদন দত্তের রচনাবালি পড়তে দেন আমি যখন বাংলায় ‘ও’ লেভেল পড়ি তখন। তারপর বঙ্কিম চট্টপাধ্যায়। আমার বাবাও নিজে তাদেরকেই অনুসরণ করতেন। ফলে তরুণ বয়সেই বাংলা সাহিত্যে যে অফুরন্ত সম্ভার রয়েছে, তা বুঝতে পারি। মায়ের স্তনের দুধ যেমন শিশুর তৃষ্ণা মেটায়, ঠিক তেমনই বাংলা ভাষা আমার তৃষ্ণা মেটায়। কিন্তু আমার কাছে বাংলা সাহিত্যের ভাষা মধুসূদন-বঙ্কিমের মতো হওয়া উচিত। অনন্তপক্ষে আমার পিতা তাঁর সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে আমাকে তাই শিক্ষা দিয়ে গেছেন। আবারও বলছি, জনপ্রিয় লেখক হওয়ার কোনও বাসনা আমার নেই। আমি বাংলা সাহিত্যের চর্চা করতে চাই, লেখক হওয়ার জন্য নয়, একজন বিশুদ্ধ পাঠক হওয়ার জন্য। আমি বাজারী বা ব্যবসায়ী হতে চাই না।

প্রশ্ন: আপনার প্রতিটি লেখায় মেধার সাথে শ্রমের একটা সংযোজন পরিলক্ষিত হয়। যেনতেনভাবে দায়সারা ভাব নেই। লেখার প্রতি কতটা যত্নশীল?

উত্তর: আমি একজন বাংলা একাডেমির পুরস্কার প্রাপ্ত এক লেখকের গল্প ও উপন্যাস সমগ্র নিয়ে আলোচনা করছিলাম। কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম, যদি আপনি আপনার কোনও কোনও গল্প ও উপন্যাসকে আবার একটু পরিবর্ধন, পরিমার্জন বা পরিবর্তন করেন তাহলে এগুলো অসাধারণ হয়ে উঠবে তাতে সন্দেহ নেই। উত্তরে তিনি বলেছিলেন : আমি যা লিখি তা প্রথমবারই অসাধারণভাবে লিখি। কাটছাটের কোনও প্রয়োজন নেই। আমি নিশ্চুপ হয়ে যাই। কারণ, আমি দেখেছি আমার বাবা তাঁর প্রতিটি পাণ্ডুলিপিই কমপক্ষে তিন-চারবার করে লিখেছেন। তার সবচেয়ে বিশাল উপন্যাস ‘নতুন দিগন্ত’ তিনি তিনভাবে রচনা করেছিলেন। তাছাড়া তো রয়েছে ‘নতুন দিগন্ত’র কাহিনি বিন্যাসের নথিপত্র, টুকরো টুকরো সংলাপ, ঐতিহাসিক চরত্রিগুলোর বিবরণ, চরিত্র বিশ্লেষণ, শহর-নগরের পরিচিতি ইত্যাদি। এসব উপন্যাসের সঙ্গে যুক্ত করলে আর-একটি উপন্যাস হয়ে যায়। তাই আমি মনে করি আপনি যাই রচনা বা সৃষ্টি করেন না কেন, বারবার পরিমার্জন করতে হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার উজ্জ্বল উদাহরণ। অনেক সময় দেখা যায় একটি বাক্য খুব প্রিয় হলেও তাকে বর্জন না করলে ত্রুটি থেকে যায়। যখনই সুযোগ আসে তখনই আমি চেষ্টা করি ভ্রুটিগুলো বর্জন করার। এই জন্য আপনি দেখবেন যে, একই নাট্যোপন্যাস কয়েক বছরের ব্যবধানে অন্যরকম হয়ে গেছে। যদিও মূল কাহিনির পরিবর্তন ঘটে না।

প্রশ্ন: আপনার অধিকাংশ বই ও নাটক ইতিহাস আশ্রিত। ইতিহাসের প্রতি আপনার এই দুর্বলতার কারণ কী?

উত্তর: কালের অমোঘ নিয়মে ইতিহাসের সকল বস্তুই বিবর্তনশীল। এই বিবর্তনশীল ইতিহাসের রথচক্র দুর্বার গতিতে স্মুখপানে ছুটে চলেছে। স্মরণাতীত কাল ব্যাপী— যুগের পর পর যুগ, শতাব্দীর পর শতাব্দী ব্যাপী— বিবর্তিত কা‍লের কথা জানতে আমার অনুসন্ধিৎসু মর অতীতের ফেলে আসা উপাদানের মাধ্যমে মানব সভ্যতার অগ্রগতির ধারা অনুসন্ধান করে চলেছে। তবে এও সত্য যে, প্রাচীন বাংলার, বিশেষ করে খ্রিষ্টপূর্ব ৩৪০০ অব্দ থেকে নন্দ বংশ পর্যন্ত ইতিহাস রচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তথ্যের অপ্রতুলতা, কেননা প্রাচীন বাংলার কোনও ইতিহাস গ্রন্থ রচিত হয়নি। তাই এই সময়ের ইতিহাস পত্নতাত্ত্বিক উপাদানে অনুসন্ধান করতে হয়। নন্দ বংশ পরবর্তী যুগের বাংলার ইতিহাস সন্ধান করা যায় সংস্কৃত ভাষায় রচিত মহাকাব্যগুলোয়। বৌদ্ধ, জৈন ও সিংহলীয় বৌদ্ধ সাহিত্যেরও বাংলার ইতিহাস রচনায় এক বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। শুধু সংস্কৃত, পালি ও প্রাকৃত ভাষায়ই নয়, তামিল ভাষায়ও পাওয়া যায় বঙ্গমগধের ইতিহাস। গ্রিক ঐতিহাসিকদের বিবরণও বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এসব পাঠ করে আমার মনে হয়েছে, বাঙালি তার গৌরবকে সহজেই ভারতকে দিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশিরা তো শুধু বর্তমান বাংলাদেশের সীমানায় খুঁজে বেড়াচ্ছে ইতিহাস। যা আমাকে ব্যথিত করে। কিন্তু ড. অতুল (অতুলকৃষ্ণ) সুরকে তারা পড়ে না। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ, লেখক। বাঙালির সভ্যতার উৎস নির্ণয়ে তার অবদান অন্যতম। তার তথ্য অনুযায়ীই আমি বাংলার ইতিহাস অনুসন্ধান করে আমার নাট্যোপন্যাস নির্মাণের চেষ্টা করি। ইতিহাস উত্থান-পতনময়। কর্মমুখর। দ্বন্দ্ব-বিক্ষুব্ধ। ইতিহাস আমার সাহিত্য-রুচিকে তৃপ্ত করে। পাশ্চাত্য অপেরা প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা ও শ্রেষ্ঠ নাট্যসাহিত্য পাঠের মধ্য দিয়েই নাটক বা নাট্যোপন্যাসের সংহতি, গতিবেগ, রসচেতনা প্রভৃতি বিষয় আত্মস্থ করি। কালিদাসের সাহিত্য আমার সামনে দৃপ্ত পৌরুষ ও শৌর্যের সৌন্দর্য প্রকাশ করে। তার ওজস্বী, বীরত্বব্যঞ্জক, কবিত্বমণ্ডিত, ধারালো সংলাপ রচনার পারদর্শিতা আমাকে তীব্রভাবে আকর্ষণ করে। বিশাল বা মহৎ চরিত্রের শোচনীয় পতনের মধ্য দিয়ে যে-করুণা ও ভয়ের মোক্ষণ, মৃত্যুর ঘনঘটা ও নায়ক-নায়িকার বিচ্ছেদ ঘটে তা ইতিহাস মন্থন করলে সহজেই পাওয়া যায়। তাছাড়া ইতিহাসের পাতার ভাঁজে ভাঁজে সৌন্দর্যময় অজস্র শিল্পের ফুল লুকিয়ে আছে; যা পড়ার সময় ঝিলিক দিয়ে উঠে আমার হৃদয়ে। আমার চিন্তায় ও চৈতন্যে বাংলার ইতিহাস। আমি বাংলার লুপ্ত গৌরব ও আধিপত্য সম্পর্কে সচেতন। ফলে ইতিহাসই আমার নাটক, আমার গবেষণা। এই সূত্রেই ইতিহাস বিশেষ করে বাংলার ইতিহাসের উপাদনের প্রতিফলন ঘটেছে আমার সৃষ্টিকর্মে। তাছাড়া আমি ইতিহাস নিয়ে প্রচুর পাঠ করি। ‘ইংল্যান্ড : সংক্ষিপ্ত ইতিহাস’ (২৩৯ পৃষ্ঠা), ‘জার্মানি : অতীত ও বর্তমান’ (১০০৮ পৃষ্ঠা), ‘ইতালি : আদ্যন্ত ইতিহাস’ (দুই হাজার পৃষ্ঠা), ‘জার্মান সাহিত্য : প্রারম্ভ থেকে অধুনা’ (৬৫৪ পৃষ্ঠা), ‘ইতালীয় শিল্প ও সাহিত্য : প্রাচীন থেকে আধুনিকোত্তর’ (৭৫০ পৃষ্ঠা), স্বরূপ অন্বেষণ (হবিগঞ্জের ইতিহাস) ইত্যাদি গ্রন্থগুলো ইতিহাসের প্রতি আমার আকর্ষণকেই প্রমাণ করে।

প্রশ্ন: আপনার বহু নাটক দেশ-বিদেশে মঞ্চস্থ হয়েছে। আপনার কল্পনা যখন শিল্পীর শারিরীক কসরতের মাধ্যমে পূর্ণ হয়ে বাস্তব দৃশ্য লাভ করে তখন অনুভূতি কেমন হয়?

উত্তর: আসলে নাটক হচ্ছে আমার নাট্যোপন্যাসের প্রথম পরীক্ষা ক্ষেত্র। কাহিনি কেমন হল? টানটান হল কি না? ভাষার ব্যবহার কেমন হল? দর্শক কেমন প্রতিক্রয়া দেখালেন? এসব পরীক্ষা করার জন্যই আমি নাটকের মাধ্যমে তা প্রথমে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে থাকি। অতিরিক্ত প্রাপ্য হচ্ছে একঝাঁক তরুণ শিল্পীর সহযোহিতা ও প্রেরণা। তাদের শ্রম। তাদের ভালোবাসা। তারা আমার ভাষা ও কাহিনিকে বাস্তবে পরিণত করেন। তাছাড়া আমার নাটকগুলো সাধারণ নাটকের মতো নয়। আমি বাংলা মুভেমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলীর জন্ম দিয়ে সমগ্র নাটকে অঙ্গাভিনয়ের ক্ষেত্র হিসেবে সৃষ্টি করেছি। শুধু সংলাপ নয়, দর্শককে সবসময় সচেতন ও সতর্ক থাকতে হয় সংলাপের সঙ্গে মঞ্চে অন্য শিল্পরা কী করছে। তাছাড়া আমি মঞ্চকে কমপক্ষে তিন স্তরে বিন্যাস করে থাকি। ফলে দর্শক তিন স্তরের দিকে দৃষ্টি রাখতে হয়। বাংলা মুভেমেন্ট থিয়েটার শিল্পশৈলীর প্রেরণা-পুরুষ নৃত্য পরিকল্পক উদয় শংকর। উদয় শংকরের ‘কল্পনা’ যারা দেখেছেন তারা বুঝতে পারবেন আমার নাটকগুলোও তেমনই জটিল। এই জটিল শিল্পধারা যখন শিল্পীরা পরিবেশন করে দর্শকের প্রশংসা অর্জন করেন, তখন আমি নিজেকে ধন্য মনে করি। গৌরববোধ করি আমার শিল্পীদের জন্য, কারণ তারা অসাধারণ সৃষ্টিকর্ম সাধন করেছেন।

প্রশ্ন: আপনার লেখায় অসাধারণ উপমা ও চিত্রকল্প পাই। আপনি চলে যান সেই পনেরোশ, দু হাজার বছর আগের জীবন ও জনপদে। কীভাবে সেসময়কে ধারণ করেন?

উত্তর: আমি একজন নির্জনতার মানুষ। অঢেল সময় দুই হাজার বছর আগে ফিরে যাওয়ার। ব্যক্তিক অনুভূতি, একাকিত্ব, দুঃখ-কষ্ট, হাহাকার বিচিত্র জীবনবোধ, অন্তর্গত বেদনার অনুরণন আমার সকল সময়ের সঙ্গী। ব্যক্তিগত অনুভূতি, অন্তর্দহন, আলাদা বোধকে ভিত্তি করেই আমার সৃষ্টিকর্মে নিমগ্ন হই। অদ্ভুত এই বোধ আমার অন্তরকে গভীরভাবে নাড়া দেয়। আর তাই যাপিত জীবনের বিচিত্র অনুভব ও অনুভবের ভেতরের অনুভব, বোধের ভেতর জেগে ওঠা বোধ আমার লেখায় উন্মোচিত হয়। এই বোধ আমাকে জড়িয়ে রাখে সবসময়। এই বোধের জন্য বাকিসব আমার কাছে তুচ্ছ মনে হয়। বোধের শৃঙ্খল থেকে আমি মুক্ত হতে পারি না কখনো। এটি শূন্যতা বোধের গভীর উপলব্ধি। উপস্থাপনা ভঙ্গি, বিষয় বৈভব, বহুমাত্রিক বক্তব্য রীতি, উপমার প্রয়োগ তাই সহজে ধরা দেয় আমার কাছে। এই ক্ষেত্রে দ্বিধাহীন চিত্তে উচ্চারণ করা যায় জীবনানন্দ দাশকে।

প্রশ্ন: একটি নাটককে কখন সফল ও উপন্যাসকে সার্থক মনে হয়?

উত্তর: আমরা জানি সার্থক কথার অর্থ হল সফল। আমাদের কাজ তখনই সার্তকতা লাভ করে যখন সেই কাজ একটি বিশেষ শ্রেণির কাজে আসে। অর্থাৎ সেই কাজ যখন শিল্পের এক বিশেষ ‍শ্রেণির কাছে ছড়িয়ে পড়ে। নাটক বা উপন্যাসের ক্ষেত্রেও একই দিক লক্ষ্য করা যায়। নাটক বা উপন্যাস এবং সার্থক নাটক বা উপন্যাসের মধ্যে পার্থক্য কী? এই কথার যদি বিচার করি তাহলে বলতে হয় নাটক বা উপন্যাস এবং সার্থক নাটক বা উপন্যাস এক নয়; কারণ সব সৃষ্টিকর্ম সার্থকতা পায় না। নাটক বা উপন্যাস বলতে কাহিনি, চরিত্র, সংলাপ, পরিবেশ বা বাস্তবতার উপর নির্ভর করে যে ঘটনা আকার ধারণ করে তাকে আমরা নাটক বা উপন্যাস বলে থাকি। এই নাটক বা উপন্যাস যখন একটি বিশেষ শ্রেণির কাছে গ্রহণ যোগ্যতা লাভ করে তখন তাকে সার্থক নাটক বা উপন্যাস বলা হয়ে থাকে।

প্রশ্ন: নাটক কিংবা উপন্যাস সমাজ পরিবর্তনে কতটুকু ভূমিকা রাখে?

উত্তর: সংস্কৃতি হোক জনগণের ইতিহাস রচনার হাতিয়ার— এই বক্তব্যে আমি বিশ্বাসী। পৃথিবীতে মানুষকে বেঁচে থাকতে হলে তাকে খেতে হয়, পোশাক পরতে হয়, সমাজের সঙ্গে চলতে হলে কিছু দায়বদ্ধতা থাকে, সবই নিত্যদিনের একটা অংশ। আর সাংস্কৃতিক চর্চা তো শুধু নিজের জন্য নয়, তা দিয়ে একটি দেশকে চেনা যায়। সাংস্কৃতিক চর্চার মধ্য দিয়ে চিন্তার প্রতিফলন ঘটে সমাজের আর সেখান থেকেই সৃষ্টি হয় নাটক কিংবা উপন্যাস— লালন, মাইকেল, রবীন্দ্রনাথ, নজরুল। গড়ে ওঠে প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের ভাষা। সৃষ্টি হয় সমাজ কাঠামো। বাংলাদেশ নামটি হওয়ার আগে ১৯৪৭ থেকে ১৯৭০ সময়কালে পূর্ববঙ্গের সাংস্কৃতিক চর্চার সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ কালপূর্বে সাংস্কৃতিক চর্চায় ধরা দিয়েছে তৎকালীন বাঙালি জাতির সংগ্রাম মুখর জীবন সংগ্রাম। ১৯৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪-এর ষড়যন্ত্র, পাকিস্তানের সামরিক আইন, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭০-এর স্বাধীনতা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ প্রভাব ইত্যাদি বাংলার নিজস্ব আঙ্গিক নির্মাণের প্রাচ্য ঐতিহ্য অনুসন্ধান সূচিত হয়। ১৯৫২-এর বাংলা ভাষা আন্দোলনের পটভূমিকায় প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক চর্চায় বাংলাদেশের লেখকরা সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য সাহিত্য রচনা করেন— একদিকে গান, অন্যদিকে নাটক। সেইসব রচনায় উপস্থাপিত হয় ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা, সামাজিক গোঁড়ামি, মিথ্যা আভিজাত্যবোধ, ধর্মীয় গোঁড়ামি ও অসহিষ্ণুতার বিরুদ্ধে উদার মানসিকতার স্বপক্ষে উদাত্ত সুর ধ্বনিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের বিখ্যাত কাব্য নাটক ‘বিসর্জন’। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে শহীদ মুনীর চৌধুরীর একাঙ্কিকা নাটক ‘মানুষ’। অন্যদিকে মুকুন্দ দাসের বিখ্যাত গান ‘বান এসেছে মরা গাঙে বাইতে হবে নাও তোমরা এখনো ঘুমাও…’ এমন গান মানুষকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে, সমাজের মেরুদণ্ডে আঘাত করে। যখন রাষ্ট্রের কাঠামোর দিকে আঙুল তুলে নাট্যকার দীনবন্ধু মিত্র রচনা করেন প্রতিবাদী চেতনায় ‘নীলদর্পণ’ নাটক তখনই পুষ্ঠু হয়ে ওঠে সামাজিক ও অর্থনৈতিক শোষণের বিরুদ্ধে।

বাংলাদেশের জন্য একুশে ফেব্রুয়ারি শুধুমাত্র একটি তারিখ নয়। একুশে ফেব্রুয়ারি মানে রক্তমাখা একটি সংগ্রামের দিন। শপথের একটি লাল দিন। বাংলাদেশের জনগণের কাছে প্রাণের, বিবেকের, জাতিসত্তার প্রতীক। বাংলাদেশের ভূখণ্ডটি খণ্ডিত হয়েও একক, স্বাধীন। আর তাই বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক চর্চায় নাটক, গান, কবিতা, গল্প উপন্যাস, রাজনীতি, প্রেম, নিসর্গ, ধর্ম, নাগরিক জীবন, সংশয়, বিষাদ এসবের মধ্যে উত্তর খোঁজে ইতিহাসে জীবনচিত্রে, পুঁথিতে, মধ্যযুগের কাহিনীতে, বাংলার পাঁচালীতে, কথকতায়, দেশের ঐতিহ্যের সংস্কৃতিতে। এজন্যই নাটক কিংবা উপন্যাস সমাজ পরিবর্তনে শক্তিশালী হাতিয়ার। সাহিত্যের জন্য মানুষকে চেনা খুবই জরুরি প্রসঙ্গ। সাধারণ মানুষের জীবন দেখা আরো জরুরি। এই দৃষ্টিকোণ থেকেই আমি রচনা করেছি ‘আট ফাল্গুন’, ‘তারকাঁটার ভাঁজে’, ‘জলের ভেতর জলের বিসর্জন’, ‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ ইত্যাদি।

প্রশ্ন: এই যে বিদেশে বসে বছরের পর বছর লিখে যাচ্ছেন অসাধারণ সব নাটক ও উপন্যাস, কোনো চাওয়া-পাওয়া নেই। পাঠককে ঘিরে রঙিন গল্প নেই। অনেক পাঠক আপনাকে কখনো দেখেনি। লেখার ভালোমন্দ জানাতে পারেনি। লেখার পেছনে আসলে আপনার কোন শক্তি কাজ করে? লেখালেখি তে আপনার তীপ্তির জায়গা কোনটা?

উত্তর: সে রকমভাবে খুব মন দিয়ে কোনোদিনও ভাবিনি যে লিখব। আমার তৃপ্তি শুধু বিরহে নয়, অবসাদে আর ক্ষুদ্রতার পরিচয়ে, আর উদাসীনতায়। গভীর জীবনবোধ, সুঠাম কাহিনিবিন্যাস ও চরিত্রচিত্রণের নৈপুণ্য। শিল্পের জন্য শিল্প– এই ভাবনা আমাকে আচ্ছন্ন করে রাখে।

প্রশ্ন: লেখালেখির পেছনে আপনি একটা গুরুত্বপূর্ণ সময় নষ্ট করেন। পরিবার ছেড়ে একা হয়ে যান। পরিবার থেকে কোনো বাধা আসে না?

উত্তর: লেখালেখির জন্য আমি পরিবার থেকে দূরে সরে পড়েছি। পরিবারের জন্য যতটুকু দায়িত্ব তাই শুধু পালন করি। তার বাইরে আমি যুক্ত হই না। লেখালেখি, বই প্রকাশ, নাটক নিয়েই সময় কাটে।

প্রশ্ন: সম্প্রতি কলকাতা থেকে আপনার একটি নাট্যোপন্যাস প্রকাশিত হয়েছে। আপনার লেখা নিয়ে কলকাতার পাঠকদের আগ্রহ কেমন?

উত্তর: দুটি বই এ বছর কলকাতা বই মেলায় আসবে। ‘অভিযান’ থেকে ‘জলের ভেতর জলের বিসর্জন’ আর বাংলার মুখ থেকে গোমীর ‘উপাখ্যান’। ‘জার্মানি : অতীত ও বর্তমান’ বইটি কলকাতার অনেক পাঠক বাংলাদেশ থেকে ডাকযোগে নিয়ে গেছেন বলে আগামী প্রকাশনী জানিয়েছে। তাছাড়া আমার বইগুলো বাংলাদেশ কলকাতা বই মেলায় পাওয়া যায়। নাটকের ক্ষেত্রে পশ্চিম বাংলার অনেক নাট্যদল আমার নাটক করেছে। ২০১৮ সালে বালিতে আমার নাট্য-উৎসব হয়েছে। এতে বুঝতেই পারছেন আমার নাটক পশ্চিম বাংলায় চর্চা হচ্ছে। তাছাড়া নাটক নিয়ে এরই মধ্যে দুটি বিশ্ববিদ্যালয় Phd করছে : Inter-cultural Shakespeare in Bangladesh— University of Malaya, বাংলাদেশের নাটকে নারী চরিত্র— শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়।

প্রশ্ন: সামনেই একুশে বইমেলা। নতুন কোনো বই প্রকাশ হবে? হলে সে বইটি সম্পর্কে কিছু বলেন।

উত্তর: আগামী বই মেলা আমার ‘ইতালি : আদ্যন্ত ইতিহাস’ (দুই হাজার পৃষ্ঠা), ‘ইতালীয় শিল্প ও সাহিত্য : প্রাচীন থেকে আধুনিকোত্তর’ (৭৫০ পৃষ্ঠা), ‘জলের ভেতর জলের বিসর্জন’, ‘গোমতীর উপাখ্যান’, ‘একটি আষাঢ়ে স্বপ্ন’, ‘অচিন দ্বীপের উপাখ্যান’, ‘রাজাবলি’, ‘অপ্রাকৃতিক প্রকৃতি’ ইত্যাদি প্রকাশ পাবে।

প্রশ্ন: একটু অন্যপ্রসঙ্গে আসি। পুরস্কার লেখকের জীবন ও লেখালেখিতে কতটা প্রভাব বিস্তার করে?

উত্তর: পুরস্কার বলতে ব্যক্তি বা দলগত পর্যায়ে সাফল্যের স্বীকৃতি কিংবা কর্মদক্ষতার উজ্জ্বল নিদর্শনের ফলস্বরূপ প্রাপ্ত পদক বা সম্মাননাকে বুঝায়। সাধারণত ব্যক্তিগত, প্রাতিষ্ঠানিক কিংবা দলগতভাবে বিশেষ বিশেষ পর্যায়ে অনন্য সাধারণ অবদান, কুশলতা, দক্ষতা, নৈপুণ্যকে স্বীকৃতি বা মূল্যায়নের লক্ষ্যে যে পদক্ষেপ নেওয়া হয় কিংবা খেতাব দেওয়া হয়, তা-ই সাধারণ অর্থে সম্মাননা বা পুরস্কার। কিন্তু আমার কা‍ছে সাহিত্য চর্চাই প্রধান।

প্রশ্ন : আপনি মূলত কখন লেখার টেবিলে বসেন? নিয়ম করে প্রতিদিন লেখেন, না যখন মন চায়?

উত্তর: আমি সাহিত্যের জন্য কর্ম ও ব্যক্তি জীবনকে বিসর্জন দিয়েছি। এখন ফুলটাইম সাহিত্য চর্চায় নিজেকে নিযুক্ত করেছি।

প্রশ্ন: ১২ নভেম্বর আপনার জন্মদিন। এইদিনটিকে ঘিরে জীবন কীভাবে সাজান? জন্মদিনের অগ্রিম শুভেচ্ছা ভালো থাকবেন।

উত্তর: ২০১৬ খিষ্টাব্দ থেকে আমি আর জন্মদিন পালন করি না। এই সালে ১৬ নভেম্বর আমার মা মৃত্যুরবণ করেন। এখন ১৬ নভেম্বরই আমার কাছে প্রধান ও স্মরণীয় দিবস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *