রম্যগল্প

রম্য গল্প।। সুপরামর্শ ।। হানিফ ওয়াহিদ

শুয়ে শুয়ে বই পড়ছিলাম। হঠাৎ এক বন্ধুর ফোন। ফোন দিয়েই বলল, কী রে, আজকে আমার গায়ে হলুদ আর তোর দেখা নাই,কাহিনি কী?
আমি বললাম, কাহিনি কিছু না, বউ আমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবে সেজন্য দু’ঘন্টা লাগিয়ে রেডি হচ্ছে। সে টাকলু জামাই পছন্দ করে না,ডাক্তারের সাথে কন্টাক্ট হয়েছে,  আমার চুল গজিয়ে দিবে । তা কাকে বিয়ে করছিস তুই? পাত্রী কে?
দূরশালী।
দূরশালী মানে কী! কিছুই তো বুঝলাম না! 
আরে আমার বড় ভাইয়ের দূরশালী। তার বউয়ের আপন বোন যদি শালী হয়, দূরসম্পর্কের শালী কী হবে? 
এইবার বুঝেছি। তুই গায়ে হলুদ মাখতে থাক।
বন্ধু হতাশ গলায়  বলল, আচ্ছা দোস্ত, বিয়ের আগে এসব হলুদ টলুদ মাখতে হয় কেন? আমার অসম্ভব বিরক্ত লাগছে। এসব আবিস্কার করেছে কোন শালা?
গাধার মতোই একটা কথা বললি, মাছ ভাজার আগে হলুদ না মাখলে হয়?
আমি কি মাছ?
অবশ্যই তুই মাছ, বিয়ের পর তোর বউ এসে তোকে ভাজবে। জীবন একেবারে ভাজাভাজা করে ফেলবে। তোর জীবনে সবচেয়ে খারাপ দিক কী বল তো?
বন্ধু অনেকক্ষণ চিন্তা করে বলল, দোস্ত বুঝতে পারছি না। জীবনে তো কোনো খারাপ কাজ করি নাই, প্রেমটেম করি নাই, মদ, গাঁজা, সিগারেট  ছুঁয়ে দেখি নাই। ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম, ভালো ছেলে হিসাবে এলাকায় সুনাম…
তার মানে তুই তোর কোনো ভুল খুঁজে পাচ্ছিস না, তাই তো? বউ আসতে দে, এরপর আর কোনো ভালো গুণ খুঁজে পাবি না, যা করবি সবই তোর দোষ, এমনকি জোরে বউয়ের সামনে কাশি দিলেও অপরাধ। রাতে নাক ডাকলে মাইরও খেতে পারিস।
যা কী বকিস তুই! পুরুষ মানুষ এতো ভীতু হলে চলে? পুরুষ হচ্ছে মরিচের মতো, তার ঝাঁঝ থাকবে…
পুরুষ মরিচের  মতো হয়েও লাভ নাই, আচার বানিয়ে খেয়ে ফেলে। মেয়েদের সবচেয়ে পছন্দ মরিচের আচার।
বন্ধু চিন্তিত গলায় বলল, বলিস কী রে! তুই আমাকে মহা টেনশনে ফেলে দিলি! আমার রাতে একা একা শোয়ার অভ্যাস। লুঙ্গি ঠিক থাকে না। আচ্ছা দোস্ত, রাতে বউয়ের কোন পাশে ঘুমাবো? ডানপাশে বা বামপাশে? 
যে পাশে ফ্যানের বাতাস বেশি লাগে তার উল্টা পাশে। বউকে সবসময় আরামের জায়গায় রাখবি। আরেকটা কথা মনে রাখবি, বউ ইজ অলওয়েজ রাইট। তারা যা বলে তা-ই স্বরণীয় বানী। ভুলেও বউয়ের সাথে দ্বিমত করবি না, মিথ্যা বলবি না। তারা সব সত্যি জেনে তারপরই কিন্তু প্রশ্ন করে। 
বন্ধু হায় হায় করে উঠলো, তুই তো আমাকে টেনশনে ফেলে দিলি। তোর টেনশন লাগে না? 
আমি ফোঁস করে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, টেনশন করতে করতে এমন এক লেভেলে চলে গেছি, টেনশন না থাকলেও এখন টেনশন হয়! রাখি রে দোস্ত, তোর ভাবি রেডি হয়ে চলে এসেছে। আবার না জানি কোন ভুল ধরে ফেলে! বলেই ফোন কেটে দিলাম। 
বউ দুই ঘন্টা ধরে রেডি হয়ে এসে বলল, এই তাড়াতাড়ি চল, দেরি হয়ে যাচ্ছে। তোমার সময় জ্ঞান না থাকলেও আমার আছে। কার সাথে এতক্ষণ ফুসুরফাসুর করলা?
আমি মিনমিনে গলায় বললাম, আরে, আমার এক বন্ধুকে পরামর্শ দিলাম সবসময় বউয়ের কথা মেনে চলার জন্য। বউয়ের কথামতো না চললে সংসারে উন্নতি হয় না এটাই গাধাটাকে বুঝালাম। 
বউ শাড়ির আঁচল ঠিক করতে করতে বলল, সবসময় মানুষকে এমন সুপরামর্শ দিবা, বুঝছো?
ন্যাড়া জামাই নিয়ে এখানে সেখানে যেতে বউ লজ্জা পায়, তাই আমাকে ধরে নিয়ে গেল এক চুলের ডাক্তারের কাছে। সে নাকি গ্যারান্টি সহকারে কাজ করে। গিয়ে দেখি শালার ডাক্তার আমার চেয়েও ন্যাড়া। আমার দুই চারটা চুল আছে, শালার ডাক্তারের মাথায় তা ও নাই। কিছুতেই ভেবে পেলাম সে কীভাবে বিশেষজ্ঞ চুলের ডাক্তার হলো। 
তার চেম্বারে লম্বা লাইন, সবাই টাকলু রোগী। 
আমি ফিরে আসতে চাইছিলাম, বউয়ের ধমক খেয়ে চুপচাপ বসে রইলাম। ডাক্তার আমাকে একগাদা ঔষধ দিয়ে দিল। সাথে কয়েকটা মালিশ।
বউ এখন দিনরাত মাথায় মালিশ করে। এর ফলে যে কয়টা চুল অবশিষ্ট ছিল তাও চলে গেল। এতে বউ আরও রেগে গেল। সবার ঔষধ কাজ করে, আমার কেন করছে না, নিশ্চয় মাথায় সমস্যা আছে! 
আমি আর কী বলি!
জামাইয়ের দুর্বলতা মানেই বউয়ের জন্য তা পৌষ মাস, কথায় কথায় জামাই  ঘায়েল করতে সুবিধা হয়। প্রতি মূহুর্তে সে আমাকে মনে করিয়ে দেয়, আমার মতো টাকলু বিয়ে করে সে কী ভুলটাই না করেছে! তার জন্য অপেক্ষা করছিল রাজত্ব সহ রাজপুত্র! সে বিয়ে করতে চাইছিল শাকিব খান, পাইছে ডিপজল।
সেদিন রাতে অভিমানী গলায় বললাম, সারাজীবন তুমি বউ রয়ে গেলা, প্রেমিকা হতে পারলা না। বিরাট আফসোস! সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি খাবার টেবিলে খাবারের পরিবর্তে একটা চিরকুট। তাতে লেখা- বাবু খাইছো?
গবেষণায় পাওয়া গেছে, ঘরের বউ জামাইকে সারাদিনে গালাগাল করে ১ ঘন্টা।  বাকী ২৩ ঘন্টা জামাই আরামে থাকে? উহু, বাকী ২৩ ঘন্টা বউ সন্দেহ করে। আমি বুঝে গেছি, জীবনে এই তিনটা কাজ কখনোই করা উচিত না। এক. নিজের পছন্দের বিয়ে। দুই. মা বাবার পছন্দের বিয়ে।  তিন. বিয়ে।
মাঝেমধ্যে বউকে খুশি করার জন্য বলি, তুমি অনেক ভালো মানুষ। 
বউ দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে, আমিও যদি তোমাকে এমন কথা বলতে পারতাম! কিন্তু তুমি তো ভালো না।
আমিও দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলি,ব্যাপার না। তুমিও আমার মতো মিথ্যা কথা বলে যাও। জানো বউ, আমি সত্যি সত্যি ভালো মানুষ হতে চাইছিলাম কিন্তু আশেপাশের মানুষের কান্ডকারখানা দেখে প্লান বাতিল করেছি। কারণ আমি হিসাব করে দেখেছি সাবান যে কালারেরই হউক, ফ্যানা সাদা-ই হয়। এই ভয়ে জীবনে কারও সাথে প্রেমও হয় নাই… 
বউ বলল, তুমি বিয়ের আগে কোনো মেয়েকে কখনো প্রপোজ করো নাই? 
না, আমি তো গণিতের ছাত্র ছিলাম, কাউকে পছন্দ হলে মনে মনে ধরে নিতাম ও আমার।
বউ আফসোসের সুরে বলল, অথচ, আমার বিয়ের আগে কত ছেলে যে আমার পিছনে ঘুরঘুর করতো…
আমি মাথা চুলকাতে চুলকাতে বললাম, সস্তা  জিনিসের কাস্টমার একটু বেশিই থাকে। আমি দামী ছিলাম বলেই কেউ আমার কাছে ঘেঁষত না।
তুমি দামী ছিলা? হাউ ফানি জরিনার নানি! কোনো সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়ে তোমাকে বিয়ে করতে রাজি হইতো?
আমি আরেকটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললাম, সুন্দরী বুদ্ধিমতী মেয়েরা রাজি হয় নাই দেখেই তো তোমাকে বিয়ে করেছি, নইলে কী আর…
কথা শুনে বউ আমার দিকে কঠিন চোখে তাকিয়ে রইল। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *