শম্পা সাহা’র অণুগল্প লাল ফ্রক
কি সুন্দর টুকটুকে লাল জামাটা, ফুলীকে পুরো পরীর মত লাগছে! ফুলী পরী দেখেনি কোনোদিন, এমনকি শোনেও নি সেইভাবে। একবার পদী ঠাকুমাকে একটা সুন্দর পুতুল দেখে বলতে শুনেছিল, “কী সোন্দর! যেন পরীর মত! “সেই থেকে ওর বদ্ধমূল ধারণা পরী মানে খুব সুন্দর কিছু।
ওমা! ওর মাথায় জট কোথায়? উকুনও তো নেই! মুখ-চোখ কেমন পরিষ্কার, চকচক করছে, ঠিক যেন ওদের ফুটপাতের এই চটের আস্তানার উল্টোদিকের বড় বাড়ির মেয়েটা! কি সুন্দর চুল! কি সুন্দর মুখ! ইয়া বড় গাড়িতে করে যায় আসে, ঠিক তেমন লাগছে ফুলীকে। ও ঘুরে ফিরে নিজেকে দেখতে থাকে, লাল রঙের ফ্রক ওর ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে গোল হয়ে ঘুরতে থাকে, আর ঘুরতে ঘুরতে মাথা ঘুরে পড়ে যায় ফুলী। ‘উঃ!’ ওর মাথাটা মেঝেতে ঢুকে গেছে জোর।
‘এই ফুলি, ফুলি, ওঠ তাড়াতাড়ি ওঠ, আজ যে পুজো, এত বেলা পর্যন্ত ঘুমোতে নেই। তাড়াতাড়ি চান করে নে, জল চলে গেলে আবার চান করতে পাবি না, বেলা বেড়ে যাবে। ‘ফুলী ঘুম জড়ানো চোখ খোলে, ও তাহলে এতোক্ষণ স্বপ্ন দেখছিলো? ওর মনটা খারাপ হয়ে যায়।
কিন্তু ওটা কি, মায়ের হাতে ! একটা লাল রঙের ফ্রক ! কি সুন্দর! ফুলী অবাক হয়ে মায়ের দিকে তাকায়। বাসন্তী হেসে মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বলে, ‘মণ্ডপের বাবুরা দিচ্ছিলো, আমি তোর জন্য লাইন দিয়ে এনেছি। কেমন সুন্দর না?’
ফুলীর মুখটা ওদের চটের আস্তানার ফাঁক দিয়ে ঢোকা সোনালি শরতের রোদ্দুরে অষ্টমীর দুর্গা প্রতিমার মত চকচক করছে যেন!