অণুগল্প

অণুগল্প।। হৃতপ্রবজ্যা।। অরুন্ধতী সাহা গুপ্ত

শ্রমণ পেরিয়ে চলেন অবন্তী কোশল-মগধ। মাঠ-ঘাট নদীজল, সুনীল প্রান্তর। বার্তাবাহক তিনি প্রেমপ্রীতির। গাছের শ্যামল ছায়া, পাহাড়ের সানুদেশ, জীর্ণ পর্ণকুটির সব জুড়ে তিনি বিলিয়ে চলেন শাশ্বত বাণী। যুযুধান আত্মমগ্ন নরহৃদয় যেন পাষাণ হয়ে না যায়। মাধুকরীকৃত অন্ন স্বল্প মুষ্ঠিতে গ্রহণ করেন তিনি।

অকস্মাৎ এক পড়ন্ত বিকেলে জনৈক উতলা বালক তাঁর সম্মুখে অঞ্জলি পেতে দেয় লাজুক নয়ন মেলে।
– দাও মোরে।
– কি চাও বৎস।
– আমার মুঠো ভরে দাও, হে সুধী; তোমার অর্জিত সম্পদে। তুমি আমারে স্বাস্থ্য দাও। জীবন দাও। দাও আনন্দ অবিরত। আমি তোমায় আমার সান্নিধ্য দেবো, সেবা দেবো, দেবো তুষ্টি।
ঝুলি উজাড় করে দিতে যান শ্রমণ। দুই পা পিছু হটে যায় কিশোর। কহে বালক, 
– আমারে দাও যা কিছু অর্জিত তোমার। যাহা প্রার্থিত; ভিক্ষালব্ধ – তাহা নহে।

তাকান ভিক্ষু অসহায় নয়ন পাতি। সমগ্র অতীতের ফেলে আসা দিনগুলোর স্মৃতি রোমন্থন করেও শুধু মাত্র মায়ের চোখের নোনাজল। বিদায়বেলার হাহাকারময় আক্ষেপ আর ফিরে আসার আকুতি ছাড়া তাঁর আর কিছু নিজস্ব অর্জন নাই এ জীবনে। তাঁর এতোকালের বিশ্বব্যাপী খ্যাতি, মানুষের স্বীকৃতি, তাঁর জ্ঞানের আলোতে আসার জন্য তাদের উচ্ছাস- তাঁর বাণী শোনার আকুতি- সব এক মুহূর্তেই মিথ্যা বলে মনে হতে থাকে। কর্মকে ইবাদত করা, পরিবারকে মর্যাদা, অপত্যকে স্নেহদান, গুরুজনকে সমীহ করে চলার বোধ তিনিই তো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন অবিরত। দেশ হতে দেশান্তরে তাই তো এই চারণ। এর মাঝে শীর্ণা মায়ের রুগ্ন দুটো হাত, সম্বলহীন বৈধব্যযাত্রা, নির্ঘুম চোখ আসেনি তো বাধা হয়ে, এক লহমারও তরে।

বালক সংকুচিত করে নেয় তার প্রসারিত হস্তদুটো। আজ কোমলমতি বালক আর প্রাজ্ঞ সন্ন্যাসী উভয়ের মাঝে মায়ের সন্তানহীন যন্ত্রণা যাপনের ভারি দু:সহনীয়তা অব্যক্ত বেদনা হয়ে মিশে যেতে থাকে।

ম্লান হেসে পিছুতে মিলিয়ে যায় বালকের অবয়ব। দীনতর শ্রমণ ন্যুব্জ দেহ সোজা করে উঠতে চেষ্টা করেন। বলহীন মনেহয় নিজেকে। কাঠের জড় 
বক্রযষ্ঠী ছাড়া এ মুহূর্তে অবলম্বনহেতু কাঙ্ক্ষিত আর কাউকে মনে পড়ে না তাঁর।

৩ thoughts on “অণুগল্প।। হৃতপ্রবজ্যা।। অরুন্ধতী সাহা গুপ্ত

  • Pradip Das

    Golpo ses hoye o hoila na ses! Mind blowing writing! Ma:am keep it up! God bless you 🙏

    Reply
  • অগ্নিমিতা দাস

    অপূর্ব! দার্শনিক ভাবনায় লেখা গল্পটির গভীরে অনেক তত্ত্বকথা লুকিয়ে আছে

    Reply
  • সোহেল নূর

    অপুর্ব! অসাধারণ বর্ণনাশৈলী ও দার্শনিক ভাব।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *