অণুগল্প //সেলাইমেশিন// নুসরাত সুলতানা
তারাবিবি চার ভাইয়ের এক বোন। সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের মেয়ে। বাবা হাবিবুর রহমান মেয়েকে বিয়ে দিয়েছিলেন নিজ বাড়িতে লজিং মাষ্টার আসিফ মল্লিকের কাছে, আসিফের চরিত্র আর মেধা দেখে। আসিফ এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ডাকসাইটে গনিত শিক্ষক ছিলেন। বেশ নাম দাম তার। বিয়ের দশ বছরে হয়েছে দো’দুটি পুত্র। নয়ন আর মোহন। তারা-কে বাবা অষ্টম শ্রেনি অব্দি পড়িয়ে আর পড়ালেখা করাননি। শিখিয়েছেন সেলাই মেশিনের কাজ, হাদীস কোরান। কিন্তু তারার ভাগ্য সুপ্রসন্ন ছিল না। দশ বছরের মাথায় হঠাৎ হার্ট এটাকে মারা যান আসিফ। ছেলেদের মানুষ করার জন্য স্বামীর পেনশনের টাকায় কেনেন সেলাই মেশিন। আর আশেপাশের বাচ্চাদের আরবি শেখান তারাবিবি। তাই দিয়ে দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ, এবং সংসার চলে। এভাবে চলে গেছে বহু বছর। ছেলে দুটি আজ বাংলাদেশ সরকারের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তা। বিয়ে করে হয়েছে সংসারী। ছেলেরা অনেকবার তারাবিবি-কে নিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু স্বামীর ভিটা ছাড়েননি তারাবিবি। তাছাড়া বউদের সংসারে তিনি অপাংক্তেয় হতে চান না। তিনি বাগান করেন। বাচ্চাদের আরবি পড়ান। ছেলেরা সমৃদ্ধির ইঁদুর দৌড়ে মাকে দেখতে আসার সময় পায় না। এখন করোনা ভাইরাসের কারণে পুরো অবসর হলেও বাইরে যাওয়া নিষেধ। ছেলেরা আফসোস করে, বলে মা আমরা বাসায় আছি তোমাকে গাড়ি রিজার্ভ করে দেই তুমি ঢাকায় আসো। তারা বিবি এক কথায় বলে দিয়েছেন, না। আমি ঢাকায় যেয়ে আটকা পড়তে চাই না। মন খারাপ হলেই তিনি সেলাই মেশিন নিয়ে বসেন। ছোট বাচ্চাদের জন্য রঙ বেরঙের জামা বানান, উপহার দেন। এই সেলাই মেশিন তার রক্ত, ঘাম, সপ্ন, সমৃদ্ধি সবকিছুর নিবিড় স্বাক্ষী।
সুন্দর হয়েছে