অণুগল্প // মেয়েটি// নাহিদা নুর তমা
-এই সরি সরি…আসতে একটু দেরি হয়ে গেল (আনিতা) -একটু না অনেক দেরি। ভিজে গেছো পুরো। ছাতা নেই? (শুভ্র) -আছে…মাঝরাস্তায় ভেঙে গেছে, একটা বাচ্চাকে দিয়ে দিয়েছি। -তো রিক্সা নিতে পারতে, বাকি পথ রিক্সা করে আসতে পারতে হেটে না এসে -চলো তো হাটি… শুভ্র ছাতা ধরে আছে, পাশ ঘেসে হাটছে আনিতা। মেয়েটা পুরোটাই ভিজে গেছে বৃষ্টিতে, রিক্সায় না এসে কেন হেটে এসেছে তা বলে নি। এড়িয়ে গেছে। -এই চলো না, চা খাই -চলো… মামা দুইটা চা! (শুভ্র) -আহ! কি ভালো লাগছে ঝুম বৃষ্টিতে মাটির ভাড়ে চা। -হ্যা… ঠান্ডা লাগা থেকে কিছুটা হলেও বাচাবে -টাকা আমি দিব… -আচ্ছা চা খেয়ে হাটা ধরল ওরা… সোজা রূপনগর গিয়ে থামল। শুভ্র অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আনিতার দিকে। ভেজা চুল থেকে টপটপ পানি পড়ছে। আনিতা চুল ঝাড়ছে, পানির ছিটে এসে লাগছে শুভ্রর গালে। আনিতার চুড়ি রিনিঝিনি শব্দ করছে। কেমন যেন মাতাল আবহ তৈরি হয়েছে এতে। ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে কাছে টেনে কিছুক্ষণ জড়িয়ে রাখতে। এ কেমন উন্মাদনা! -এই নাও… (আনিতা) -কি? -তোমার জন্য ঘড়ি, পরশু ইন্টারভিউ। ঠিকমত দেবে, এটা সাথে রাখো। -হেটে আসার খুব দরকার ছিল? -বৃষ্টিতে হাটতে ভালো লাগে -ব্যাগে টাকা নেই বললেই তো পারো -না, আসলে -এত কষ্ট করে টাকা জমিয়ে আমার জন্য ঘড়ি কিনতে কে বলেছে? আমার তো চলে যাচ্ছিল -বা রে… তুমি ভালো জায়গায় গেলে মা-বাবাকে গর্ব করে তোমার কথা বলতে পারব -তোমার সাথে কথা বাড়াবো না। -পরীক্ষা কবে? – আগামী সপ্তাহে, এবার হয়ে যাবে মনে হচ্ছে -কেন? ঘুষ দিয়েছ? হাহাহা… -বেশি বাজে বকো আনিতা উঠে বড় বড় পা ফেলে হাটতে লাগল। মেয়েটা কোনো বড় ঘরের মেয়ে না, বেশ স্বচ্ছলতার সাথেও পা চালায় নি। টানাপড়েনের সংসারে বড় হয়েছে। খুব সাহস করে শুভ্রকে ভালোবেসেছে। টাকা জমায় অল্প অল্প করে। বেশিরভাগ গাড়িভাড়া শুভ্রর পেছনেই খরচ করে। দীর্ঘপথ, রোদ-বৃষ্টি সয়ে হেটে আসে। মধ্যবিত্ত বলে ওর আত্মসম্মান আর দুঃসাহসিক ভালোবাসাটাও চরমমাত্রার। -এই আনিতা, দাড়াও -তাড়া আছে… -ছাতা নিয়ে যাও -তুমি ভিজলে ঠান্ডা লাগবে, পরশু পরীক্ষা; ভুলো না -তোমার হলুদ গোলাপ থেমে গেল আনিতার পা, হাপাতে হাপাতে শুভ্র এসে বলল… -বাব্বাহ! এত জোরে হাটো তুমি? এই নাও একটা জায়গাতে মেয়েটার সব অভিমান গলে যায়। হলুদ গোলাপ! অন্যরকম টান কাজ করে আনিতার, হলুদ গোলাপ দেখলে চোখগুলো চকচক করে ওঠে। শুভ্র খুব কাছে এসে বলল, -এই কষ্টগুলো আমি দ্বিগুণ করে ফিরিয়ে দেব… চলো এগিয়ে দি। আনিতা পথজুড়ে ফুলটার দিকে তাকিয়েই ছিল। বাড়ির কিছুদূর আগে এসে মগ্নতায় ছেদ পড়ল। আনিতা ছলছল চোখে শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলল… -ভালোবাসি শুভ্র মিষ্টি হাসল, আনিতা চলে যাচ্ছে। শুভ্রর মনে হতে লাগল যত পা ও দূরে যাচ্ছে মেয়েটা আত্মার ততটুকু কাছে আসছে। শুধু ভালোবাসা নয়, প্রেম নয়, এই মোটামোটি ধরনের মেয়েটা এই যান্ত্রিকতার একটা পবিত্র অংশ…
সুন্দর লিখেছেন