অণুগল্প// অনিশ্চিত জীবন// এনাম আনন্দ
আবির আর অনন্যা একই স্কুলে নবম শ্রেনীতে পড়ে। তাদের ভালোবাসার বিষয়টি স্কুলের প্রতিটি ইট কাঠ ও জানে। ওদের প্রেমের রসায়ন শুরু হয়। যখন তারা এক সাথে অষ্টম শ্রেনীতে বৃত্তি পরিক্ষা দিতে কুমিল্লা জেলা স্কুলে গিয়ে ছিল। তাদের বাড়ি থেকে জেলা স্কুল প্রায় ত্রিশ কিলোমিটার দূরে। স্কুলের শিক্ষকগণ দুইজনের যাতায়াতের জন্য একটি গাড়ির ব্যবস্থা করে পরিক্ষা সম্পন্ন করেন। একসাথে আসা যাওয়া, বিভিন্ন বিষয়ে কথাবলা সেই তখন থেকেই দুজনের মধ্য ভাল লাগা শুরু। তারপর এক সাথে স্কুলে আসা প্রাইভেট পড়া আবার টিফিনের সময় প্রতিদিন আবিরের জন্য বাড়ি থেকে কিছুনা কিছু নিয়ে আসা। আবির ছাত্র হিসেবে অত্যাধিক মেধাবি। অনন্যাও কিন্তু কম নয়। তাদের মধ্য সব সময় নোট আদান প্রদান চলে। একসময় মনের ভাব আবেগ প্রকাশ পায়। নোটের ভেতর নিয়মিত আসা যাওয়া করে প্রেমের চিরকুট। এভাবে চলে যায় বেশ কিছু সময়। হঠাৎ এক দিন অনন্যার মামা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে অনন্যাদের বাড়িতে আসে। ছেলের ঢাকা শহরে একটি পোশাক কারখানা আছে। সাধারণত গ্রামের মেয়েদের অষ্টম বা নবম শ্রেনীতে থাকা অবস্থায় অধিকাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায়। অনন্যা এখন দশম শ্রেণির ছাত্রী। অনন্যা শুধু নামেই নয় মেধা রুপে গুণেও অনন্যা। তাই প্রায়ই বিভিন্ন জায়গা থেকে বিয়ের প্রস্তাব আসতে থাকে। রহমত আলি মানে (অনন্যার বাবা) এই পাত্র হাত ছাড়া করতে চাইলেন না। বিয়ের কথা জানানোর জন্য অনন্যা দেখা করতে চেয়ে ছিল আবিরের সাথে। কিন্তু অসহায় কৃষক বাবার মুখের দিক তাকিয়ে আবিরের সাথে আর দেখা করতে আসেনি। আসলেইবা আবির কি করতে পারবে? কিছুই না? শুধু যন্ত্রনা বাড়বে। এ কথা চিন্তা করে অনন্যা, আবিরের সাথে আর দেখা করতে যায়নি। শুক্রবার অনন্যার বিয়ে হয়ে যায়। অনন্যার বিয়ের কথা শুনে আবির হতভম্ব। মনে হয় পুরো আকাশ মাথায় ভেঙ্গে পড়লো। আবিরের খাওয়া নেই, ঘুম নেই, শুধু মাথায় অনন্যার চিন্তা। এক বুক জ্বালা নিয়ে এসএসসি পরিক্ষয় অংশগ্রহণ করে আবির। কিন্তু বিধিবাম পরিক্ষায় ফেল করে আবির। একদিকে প্রিয়সীকে হারানোর ব্যথা অন্য দিকে পরিক্ষায় ফেল। দুশ্চিন্তা আর না ঘুমানোর কারণে আবির আজ পাগল। অনিশ্চিত ভবিষতের দিকে আবিরের জীবন। হয়তোবা আবির স্বাভাবিক জীবনে ফিরতেও পারে আবার নাও ফিরতে পারে।