টুটলু ও কুড়িয়ে পাওয়া বিড়ালছানা।। শিশুতোষ গল্প।। অদ্বৈত মারুত
আজ খুব সকালে ঘুম ভাঙলো মা বানরের। দুহাতে চোখ কচলাতে কচলাতে তাকালো পাশের ডালের দিকে। ডালটিতে শুয়ে আছে টুটলু।
টুটলু মা বানেরর ছোট ছেলে। খুব চটপটে। দুষ্টু। এক মিনিটও চুপ থাকে না। সারাক্ষণ ডালে ডালে ছোটাছুটি করে। একে ওকে খামছে দেয়। যাকে তাকে ধাওয়া করে। ধরতে পারলে তো কথাই নেই। আছামতো মার দেয়। শুধু কি অন্যদর? সেদিন বড় আপুর চুল ধরেই টান মারলো। মারও খেলো খুব। ওর আম্মুই মারলো। উঁহু, কী যে মার রে বাবা!
বেশি দুষ্টুমি করায় টুটলু ফলও পায় হাতে হাতে। এই পা ভাঙল, তা পর মাথা ফাটলো। গতকালই ঘটল বড় এক ঘটনা। টুটলু বড় ডাল থেকে মারলো লাফ। ভাবলো পাশের ডালটা ধরতে পারবে। পারলো না। দুম করে পরে গেল নিচে। মাটিতে। নড়েও না, চড়েও না! পরে মাথায় পানি ঢালা হলো, চোখ-মুখে পানি ছিটানা হলো, ওর মা বুক-পিঠে হাত বোলানোর পরেই না চোখ খুললো সে।
টুটলুকে নিয়ে সবাই খুবই বিরক্ত। তাকে নিয়ে কী করা যায় ভাবলো টুটলুর মা।
পুটলু বললো, ওকে ছোট খালার বাড়ি রেখে এসো। ওরো ভালো লাগবে। ছোট খালার ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলা করবে। বাড়ির পাশেই তো ছোট্ট লেক। কী যে টলটলে পানি, বনজুড়ে কত্তো গাছ। এত চমৎকার পরিবেশে কেউ দুষ্টু থাকে? টুটলুও থাকবে না। লেকের পানিতে খেলতে পারবে। কুমির ভায়াও ভালো। কিছু বলে না। শুধু লেকর পাড়ে শুয়ে গায়ে রোদ লাগায়।
কী বলো আম্মু? পুটলু মায়ের উত্তর জানতে চাইল।
পুটলুর কথা মনে ধরলো মা বানরের। ভাবলো, ঠিকই তো। কতদিন ছোটবোনের সঙ্গে দেখা হয় না। বেড়াতে গেলে ভালাই হয়। বোনের সঙ্গেও দেখা হবে, ছেলেমেয়েদেরও ভোলা সময় কাটবে।
পুটলু, উটলু, কুটলু আর টুটলুকে নিয়ে মা যাচ্ছে ছোটবোনের বাড়ি। অনেক পথ। হেঁটে যেতে পারো হয়। তারা যাচ্ছেতার বহুদিন পর।
পুটলু : আম্মু, পথ চিনবো তো?
বানর : না চেনার কী আছে? কতবারই তো গেলাম।
পুটলু : না, বলছিলাম, আগে যখন যেতা, তখন তো পরিবেশ অন্য রকম ছিল।
বানর : হ্যাঁ, তা বদলে গেছে অনেকটা। গাছপালা কেটে একাকার।
পুটলু : শেষবার যখন খালাদের বাড়ি গেলাম, তখনো গাছপালা ছিল।
মা বানরের মন খারাপ হলো। আহারে, এইভাবে গাছ কেটে শেষ করলে আমাদের কী হবে? আমরা কোথায় থাকবো ভাবতে ভাবতে একটা ছোট গর্তে পড়ে যাছিল। নিজেকে সামলে নিল। ছেলেমেয়ের দিকে তাকালো। ওদেরও মনখারাপ। শুধু টুটলু ছাড়া। দুষ্টুমি এতটুকু কমেনি। একটা ফিঙপাখি দেখে তাকে ধরতে গেল। প্রজাপতিকে ধাওয়া করল। একটা ফড়িং মরা ডালে বসেছিল। ওকে ধরতে গেল। ধরবে কি করে? ওদের তো পাখা আছে। টুটলুকে দেখেই উড়াল দিল ওরা। টুটলুর দৌড়াদৌড়ি ভালোই লাগছিল মা বানেরর। ঘরের বাইরে এসে বাচ্চাটা খুব আনদ পেয়েছে মনে মনে ভাবলো মা বানর।
তারা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে এলো। আগের চেয়ে পথ বেশি। নানা পথ ঘুরে যেতে হচ্ছে। কোথাও কোথাও কানা বনেই নেই। বাড়ি হয়েছে। পাড়া বসপ গেছপ। হাট বসেছে। মানুষ আর মানুষ। কত্তো মানুষরে বাবা, কুটলু বললো।
তারা একটা গাছের নিচে এসে বসলো। সবাই খুব ক্লান্ত। পোঁটলা খুলে সবাই খেলো। সারা পথ ছোটাছুটি করে টুটলু ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। একবার বড়বোন কোলে নিয়ে হেঁটেছে। আবার ছোটবানটি। মা বানর কোলে নিয়ে হাঁটছিল সেই কখন থেকে!
তারা আবার যখন রওনা হলো, তখন সন্ধ্যা। সূর্য পুরা ডুবেনি। টুটলুর দুষ্টুমি তখন কিছুটা কমেছে। ও কি যেন দেখছে। মা ডাকলো টুটলুকে। নড়লো না। চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। এগিয়ে গেলো সে। টুটলু মাকে একটা ছানা দেখালো। বিড়ালছানা কাঁদছে।
তাড়াতাড়ি হাঁটতে গিয়ে মা বানর খেয়ালেই করেনি। বিড়ালছানাটা সে কোলে নিলো। কান্না থামাতে চাইলো। বাড়ি কোথায় জানতে চাইলো। বিড়ালছানা কিছুইু বলতে পারলো না। শুধু কান্না করছে।
টুটলু মাকে বললো, আম্মু, ওকে নিয়ে যাই আমাদের সঙ্গে? আপুকেও বললো। আপু মাথা নাড়ালো। আম্মুও।
বিড়ালছানা নিয়ে ওরা খালাবাড়ি গেল। দেখলো গায়ে প্রচণ্ড জ্বর। কাঁপছে। জলপটি দিল মাথায়। ডাক্তার ডাকলো। নানা রকম গাছগাছালির পাতা দিয়ে বানানো ওষুধ দিলো। খালাবাড়ি আসার পর থেকে টুটলুর দুষ্টুমি বন্ধ। বিড়ালছানার সঙ্গে থাকে, ওষুধ খাওয়ায়, মুখে খাবার তুলে দেয়, ঘুম পাড়িয়ে দেয়। বিড়ালছানার সঙ্গে খেলাধুলাও করে।
বিড়ালছানাটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। মা বানরের খুব ভালো লাগছে। এই ভোর সকালে বিড়ালছানাটার ঘুমানো মুখটা দেখে তার খুব আনদ হচ্ছে। নিশ্চয় ওর মা ওকে খুঁজছে।