গুচ্ছ ছড়া আনজীর লিটন
মিনিগাড়ি
বাসায় বাসায় তাগিদ দিয়ে
বাহনটা যায় যাত্রী নিয়ে
মিনিগাড়ির যাত্রী মিনি
তুমি আমি সবাই চিনি
ছুটির দিনটা ছাড়া বাহন
যাচ্ছে দেখি প্রতিদিনই।
মিনিগাড়ির যাত্রী ওরা
ছোট্ট ছোট ম্যান
ওদের নিয়ে যায় যে ছুটে
বিদ্যালয়ের ভ্যান।
রাগ
একটা ছিল বাঘ
বাঘের কত রাগ
মুছলো নিজের শরীর থেকে
ডোরাকাটা দাগ
বাঘিনী কয়, ভাগ!
একটা ছিল হাতি
তার ছিল না সাথী
সেও কি-না রাগের বশে
কাটলো নিজের শুঁড়
বোকা নাকি? ধুর!
একটা ছিল মিঁউ
ঢাকায় এলো নিউ
দুধ না খেতে পেরে সেদিন
কাটলো নিজের লেজ
বাব্বারে কী তেজ!
লেজ কাটা ঐ বেড়াল
শুঁড় কাটা ঐ হাতি
দাগ ছাড়া ঐ বাঘ—
সব হারিয়ে ভাবছে এখন
করবো না আর রাগ।
ঢাকাইয়া
নানান জেলার মানুষ এসে
এই শহরে জাঁকাইয়া
বসছে তারা, ব্যবসা করে
চলছে গাড়ি হাঁকাইয়া
ঢাকায় এসে খোশ মেজাজে
ঘুরছে যে গোঁফ পাকাইয়া
ঢাকার সাথে মিলেমিশে
তারাও এখন ঢাকাইয়া
আদিঢাকার ঢাকাইয়ারা
দেখছে ব্যাপার তাকাইয়া।
মাঝির সাগর দেখা
একটা মাঝি দেখতে গেছে
সাগর বুকে কী কী আছে
দেখল শুধু পানি আছে
নীল নীল নীল
আরেক মাঝি দেখতে গেছে
সাগর বুকে কী কী আছে
দেখল শুধু পানি আছে
নীল নীল নীল
শুধুই পানি? ধরল বাজি
এবার গেছে অন্য মাঝি
সাগর বুকে কী কী আছে
নীল নীল নীল
তিনটা মাঝি দেখল সাগর
নীল নীল নীল
পানির সাথে নেই তো রঙে
মিল মিল মিল।
খোকার ছড়া খুকুর ছড়া
সেই যে কবে-
খোকা ঘুমাল পাড়া জুড়াল বর্গী এলো দেশে
সব বর্গী তাড়িয়ে দিলো বলতে পার কে সে?
সেই তো খোকা, মায়ের খোকন ছড়ায় চিনি যাকে
দুধমাখা ভাত কাক খেয়েছে শুনছি মায়ের ডাকে।
খোকনই তো জেগে ওঠে লক্ষ খোকন নিয়ে
বর্গী তাড়ায় যুদ্ধ করে বুকের সাহস দিয়ে।
খোকনরা তো দিনে দিনে অনেক বড় হয়
এই খোকনই রাজপুত্তুর বিশ্ব করে জয়।
ছড়ায় চেনা এই খোকনই শ্বশুরবাড়ি যায়
হুলো বেড়াল কোমর বেঁধে সঙ্গে যেতে চায়!
খোকার বোন খুকু আছে তাকেও চেন নাকি?
কদমবনে ফুল ফুটে তাই ঘুম দিয়েছে ফাঁকি।
খুকুর চোখে ঘুম জড়াতে ডাকছে খুকুর মা-য়
সোনার পিঁড়ি পেতে দেবো খুকুর কাছে আয়।
ভোর হলে দোর খুললো যখন খুকুমণি ওঠে
জুইশাঁখে ফুল দেখতে খুকু রোজ সকালে ছোটে।
এই খুকুটাই বড় হয়ে টায়রা মাথায় দিয়ে
বউ সেজে যায় শ্বশুরবাড়ি পালকি সাথে নিয়ে।
খুকু খুকু অনেক খুকু ছড়ায় যাদের চিনি
ভীরু তারা নয়কো মোটে অনেক সাহসিনী!
একাত্তরের কথাই যদি ধরো,
কী সাহসে লড়াই করে দিনটা মনে করো।
খোকা আছে খুকু আছে বিজয় হাসি আছে
খোকা আছে খুকু আছে ফুলের রাশি আছে।
কীসের এত ভয়?
খোকা খুকুর সাহস দিয়ে দেশ করেছি জয়!
আমরা সবাই খুশি
যদি এই পৃথিবী সাগর হতো
সাগর হতো কালি
বাতাস ছাড়া গাছের ডালে
ফুটত ডিমের হালি।
আকাশ হতো ফুলের বাগান
চাঁদটা হতো রুটি
সূর্য পাহাড় থাকত না আর
থাকত মেঘের ছুটি!
তখন পানি কোথায় পেতাম বল
পান করতাম কী?
তারচে’ভালো এতেই খুশি
যা যা পেয়েছি।
এক বিকেলের ছবি
রামপুরাতে বিকেল মানে
আটকে পড়া গাড়ি
মতিঝিলের বিকেল মানে
অফিস শেষে বাড়ি।
হাতিরঝিলের বিকেল মানে
সুখের ঘোরাঘুরি
পুরান ঢাকার বিকেল মানে
তেহারি-ডালপুরি।
বেইলি রোডের বিকেল মানে
বিফ-বার্গার-কোক
রমনা পার্কের বিকেল মানে
হাঁটতে থাকা লোক।
পান্থপথের বিকেল মানে
শপিং মলে ভিড়
গুলশানেতে বিকেল মানে
যানজটে অস্থির।
শাহবাগের বিকেল মানে
শিশুপার্কে ট্রেন
এয়ারপোর্টের বিকেল মানে
উড়ে যাওয়া প্লেন।
শহর বুকে বিকেল মানে
ব্যস্ত দোকানপাট
শিশুর কাছে বিকেল মানেই
একটা খেলার মাঠ।
কম্পু ছড়া
কম্পিউটার বাটন টিপে
ফুটতো যদি ধান
বন্যা শোকে কাতর আমার
কৃষক পেত প্রাণ।
বাটন টিপে ডিলিট যদি
করা যেত দুখ
সুখের আলোয় হাসতো দেশের
অভাবী ঐ মুখ।
বিপন্ন ঐ গ্রামের চেনা
সরল শিশুর হাসি
কম্পু যদি রাখতো ধরে
পুরো বারোমাসই।
আমার পাখি
রং পেন্সিল সাদা কাগজ
থাক না ওসব থাক না
মাউস দিয়ে আঁকছি পাখি
মেলছে দেখ পাখনা
ইনটারনেট পথ বেয়ে সে
যাক না উড়ে যাক না।
খুব ভাল লাগলো ৷