তসলিম হাসানের পাঁচটি গজল
১
সখি তোমার মর্মজ্বালার কারণ হতে চাই
দুঃখে ধোয়া অশ্রুভেজা নয়ন হতে চাই।।
কাল বোশেখির মাতম তুলে তোমার হৃদয়ে
জোসনা দেখা চোখের তারার কিরণ হতে চাই।।
প্রেমের নদী অপার সিন্ধু ভাবটা আমার এই
মায়ানদী পারি দেবার ধরন হতে চাই।।
গল্পের মত যাচ্ছি বলে একদিন হব তোর
স্বপ্নে পাওয়া দুরারোগের দহন হতে চাই।।
তসলিম যদি হৃদয় থেকে ফসকে যেতে চাও
হৃদয় দিয়ে তোমার পায়ের বাঁধন হতে চাই।।
২
মেঘের সাথে ভেসে আসা এক বলাকা আমি
তৃষ্ণা বুকে পুষে রাখা এক বলাকা আমি।।
পাহাড় দেখ পাথর বেঁধেছে সারা বক্ষে
পাষাণ বুকে জল খোঁজা এক বলাকা আমি।।
অনাদিকাল মেঘের শাসন ছিল আকাশে
অদেখার জোছনা দেখা এক বলাকা আমি।।
একদিন তো ভেঙে পড়বেই তবু কেন যে
স্মৃতি মিনারে ঢেউ তোলা এক বলাকা আমি।।
বারবার যে চাইবো তোমাকে মানায় সে কি
হায়রে খোদা ডেকে ওঠা এক বলাকা আমি।।
একটি পাখি ডানা ঝাপটাতে পারে না বলে
তার হৃদয়ে উড়ে চলা এক বলাকা আমি।।
কঠিন এক সত্য তোমায় বলতে চাই
শব্দ শুনে পথ ধরা এক বলাকা আমি।।
রে তসলিম এই বরষাও ব্যর্থ হবে
প্রিয়র নামে কেঁদে মরা এক বলাকা আমি।।
৩
হৃদয় থেকে হৃদয়ে আজ দুঃখের কথা ওঠে
রক্তের মত আপন হলে মনের কথা ওঠে।।
হয়তো একটি ভোরের আশায় গোলাপ ফোটে ঠোঁটে
কথার কথা বলতে গিয়ে ভোরের কথা ওঠে।।
কোন আড়ালে সন্ধি করে বিরহী কোকিল ডাকো
বধির পাথর ভাঙতে কি আর সুখের কথা ওঠে।।
কার আসরে কে বিরহী বোঝাই বড় দায়
হৃদয় ব্যথার সাক্ষী বলে প্রেমের কথা ওঠে।।
চল তসলিম এক বিরহে আর কত কাল থাকি
ঘরের মানুষ টান হারালে পথের কথা ওঠে।।
৪
তোর বাহুতে মরতে আমি এমন কী করলাম
বুকের পাঁজর ভাঙতে আমি এমন কী করলাম।।
আমার শুধু বসে থাকা দু’চোখ মেলে রাখা
ব্যথায় জীবন ভরতে আমি এমন কী করলাম।।
জীবন হল তৃষ্ণা বুকে পরান ফেটে মরা
প্রিয়র নজর কাড়তে আমি এমন কী করলাম।।
মানুষ আমায় ফিরিয়ে দেয় হৃদয় চাওয়ার দোষে
এক বিরহে ঝরতে আমি এমন কী করলাম।।
ভেতরটাতে পুড়ছে কেউ বা বুঝি অন্তর্যামী
অবহেলায় পুড়তে আমি এমন কী করলাম।।
বিচ্ছেদী গান সখের পায়রা তসলিম বুকে পোষো
প্রেমানলে জ্বলতে আমি এমন কী করলাম।।
৫
আমি তো শুধু ধারণা করি তুমিই জানো তুমি কী
স্বপ্ন দিয়ে তোমায় ধরি তুমিই জানো তুমি কী।।
নিজের মাঝে বইছি নাকি তোমায় আমি কে জানে
যত্নে রাখা এই ফকিরি তুমিই জানো তুমি কী।।
ধরতে গেলে নদীর বাঁকে চাঁদ ওঠে না হাতেরে
সাধুর কথা বেজায় ভারি তুমিই জানো তুমি কী।।
দুখের দিনে রাত যে বড় দুখের সাথী সেতারা
হাহাকারের ঠোঁট বাঁশরী তুমিই জানো তুমি কী।।
প্রতি মনের খবর নেবে এমন পথে কে যাবে
আমি কেবল লগ্ন গড়ি তুমিই জানো তুমি কী।।
বাসর হল প্রেমের বীণা নিজে নিজেই বাজে না
আমি হলাম প্রেম ভিখারি তুমিই জানো তুমি কী।।
কী যে পেলাম নিজের মাঝে নিজের ঘরে ধরে না
কে তসলিম পারের তরী তুমিই জানো তুমি কী।।