কবিতা

গুচ্ছ কবিতা।। হানিফ মোহাম্মদ


রাষ্ট্র ও প্রেমিকা

দেয়ালে চুমু খেতে গিয়ে
বারবার লক্ষ্য করেছি দেয়াল প্রত্যুত্তর জানে না।
শরীরে রসহীন সাহিত্য লিখতে লিখতে
তুমি ভুলে গেছো প্রেমের উপন্যাস
আমার রাষ্ট্র যেমন গণতন্ত্রের চর্চা ভুলে
ক্রমশ নাগরিক শূন্যতায় ভুগছে
তুমিও ভূলুণ্ঠিত আঁচল তুলতে তুলতে
দেখে নিচ্ছো প্রেমশূন্য বুকের ভিটা।
আজ রাষ্ট্র ও তুমি সমার্থক প্রায়
আন্তর্জাতিক আদালতে আমার প্রবেশাধিকার নেই বলে
উভয়েরই দখলদারিত্ব হারিয়ে
আমি আজ ছন্দহীন কবিতার লাইন।

বন্ধুর পথের নামতা

পাঠ করি অন্ধকারের নামতা
সবগুলি পৃষ্ঠা অধ্যয়ন শেষ হলে
ক্ষয়ে যাওয়া পাতাগুলি তুলে রাখি
সযতনে নিরাপদ সেলফে
অতঃপর রাত পোহাবার অলীক স্বপ্ন ফেলে রেখে
নাতিউজ্জ্বল তারার আলোয় নেমে যাই
পথহীন অনিশ্চিত পথে
ভুল হোক, তবু পায়ে পায়ে পথ জাগবে নিশ্চিত।
ঘরে বসে সদর-স্বপ্নে বিভোর হলে
স্বপ্নের ঘুণপোকা কেটে যাবে
সম্ভাবনার সুগঠিত সড়কের ভীত।
জাগতে হবে, জাগাতে হবে
ঘুমিয়ে থাকা আগামীর রোশনাই।
অশান্ত সাগরে যে হাল ধরে নির্ভীক হাতে
সুদক্ষ নাবিক বলে তারেইতো কোলে নেয়
সার্থবাজ ত্রস্ত জীবন।

পাঞ্চজন্য

লেজুড়বৃত্তি ছেড়ে উঠে দাঁড়া শালা
তোর ভাতঘুম চোখে
এখনো নেশা জেগে আছে।
এতোটা ভুল পথ পাড়ি দিয়ে
এখনো স্বপ্ন দেখিস সুশীতল জংশন!
এখনো ভাবিস বুঝি
বৈশ্যের হাত ধরে জেগে উঠবে কুলীন সকাল?
এখনো রাতের পিঠে সূর্য-স্বপন দেখে
মুড়ি দিস আলসে কাঁথার উম
এখনো চোরের হাতে শাপল দিয়ে
নির্বিকার পড়ে যাস নীতির পুঁথি?
শালা তোর প্রাণ যাবে একান্ত বেঘোরে
ধর্ষিতা তরুণীর মতো
নিষ্প্রাণ পড়ে রবে ভুতুড়ে প্রাসাদ।
জেগে উঠবার ক্ষণ গত হয়
চোখে এসে গুঁতো মারে পূত সূর্যোদয়
অকুতোভয় স্লোগানের ভেসে আসে স্বর।
জ্বর ছেড়ে উঠে আয়, নাঙা পায়
নেমে আয় যুদ্ধ-সভায়।
শালা তোর পায়ে পায়ে জেগে যাবে
আগামীর স্নিগ্ধ নিনাদ।
জবুথবু দেহ ছেড়ে, গেহ ছেড়ে
পারাবত উড়ে আয়
নড়ে যায় নড়বড়ে ভীত
শীৎকারে, চিৎকারে ভেঙে ফেল
যতোসব স্বৈরশহর।
প্রহরের ডাক ছেড়ে, হাত নেড়ে
জাগা তোর অধিকারমণ্ডিত ভোর।
নেশা ভেঙে দিশাময় বাজা তোর
পাঞ্চজন্য শাঁখ
একদিন নিশ্চিত ভেঙে যাবে গেড়ো লাগা
সময়ের বাঁক।

প্রিয় রেনু ০৭

অতৃপ্ত আত্মার কান্না শুনিও না
সজীব শব্দ-ফুলে বাগান সাজাও
নিভৃত নিরালায় চাষ হোক বিস্ফোরিত চুম্বনের।
হাতে গুনে গুনে সামান্য কটা দিন
বিশুদ্ধ হাসিতে ফুসফুস পূর্ণ করে
উচ্ছল সমুদ্রের মতো
পাড়ভাঙা ভালবাসার জোয়ার জাগাই।
এসো আরেকটু অন্তরঙ্গ হই।
একান্ত নিভৃতে কাঁচুলি-মুক্ত বুকের
উষ্ণতা বিনিময় করি
শরীরে শরীর ঘষে দূরীভূত করি
হৃদয়ের যাবতীয় ক্লেদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *