মাহফুজ রিপন-এর কবিতা
ভার
রক্তদিয়ে পাণ্ডুলিপি লেখা মহড়া চলছে
অনুমতি ছাড়া বাইরে যাবেন না।
চারপাশে মিথ্যা ধূম্ররজাল
মানুষ পোড়ায় আজ মানুষের শরীর।
জেলগেটে মাথা ঠুঁকে সুরবালা
সুয়ামি তার জেলখানায়।
কেঁদে ওঠে সাধের শরীর
পার হয়ে যায় সাঁঝের বেলা
ঘন হয়ে আসে মহাকাল।
শোকের আয়ু ফুরায়!
প্রথম অংকের ঘন্টা বাজে।
বাঁচতে হবে তাই বাজনা বাজে
কর্পূরের মত উড়ে যায় সাধের যৌবন
কোন অনুভূতি ছাড়াই।
ক্লান্ত শরীর ঘুমায় বালিশের উপর-
বালিশের নিচে ঘুমায় এটিএম কার্ড
কিন্তু মিথ্যা বালিশের ভার পৃথিবী গ্রহণ করে না।
সীমানা পিলার
আর কত রক্ত চাই তোমার! কবি হুমায়ুন আজাদ থেকে অভিজিৎ সবাই কিন্তু বেঁচে- আছে। গতকাল একুশের বই মেলায় তাদের সাথে দেখা হয়েছে- জাগৃতি’র স্টলে। কবি দাঁড়িয়ে ছিলেন, রকিং চেয়ারে বসেছিল আমাদের হাসি খুশি দীপন। খুনি তোমাকে বলছি। কবিতার পঙক্তিতে পঙক্তিতে আজ নতুনের জোয়ার। ক্লান্ত তুমি! পলাশী থেকে ধানমন্ডি এতটা পথ হেঁটেছ, বৃথা তোমার হাত করেছো লাল। আমি জানি কারো আদর্শকে তুমি হত্যা করতে পারনি। তুমি ভুল করেছো, ভুল শিক্ষা নিয়েছো। কোটি প্রাণ আজ ছড়িয়ে গেছে শাহবাগের রাজপথে। বিচার, জবাব, প্রতিশোধের নেশায় তারা আজ ক্রদ্ধ। খুনি মহাসত্য সবার সামনে, জনকের করোটি ছিন্ন করার শক্তি তোমায় দিয়েছে উগ্র মৌলবাদ। ভোগ আর ক্ষমতার নেশা তোমায় ব্যবহার করছে। ক্রন্দন, ক্রন্দন করছে পৃথিবীর শান্তি প্রিয় মানুষ। পিতার বুক ভাঙা চিৎকারে ঘুমতে পারি না গত সাত জনম। শোকে বিহ্বল আদম, খুনিদের শুভ বুদ্ধির প্রত্যাশায়। শোন ভ্রাতা তোমাকে বলছি- খুলে দেখ সিদ্ধার্থের ত্রিপিটক, বাইবেল কিম্বা পবিত্র কোরআন। চলে যাও তূর পাহাড় হয়ে মহাস্থবির বনভান্তের কাছে। সবাই বলবে- বাঙলার সীমানা পিলার তুলছ তোমরা। আবার আসতে হবে ম্যাগনেট পিলারের কাছে। সে দিন আকাশটা ঝুলে পড়বে উদার জমিনে।
৭৯ গুলশান রোড
হলুদ সন্ধ্যা গড়িয়ে যায় ব্যস্ত ঢাকার রাজপথে
ভূমিপুত্রের গায়ে পড়েছে আজ মৃত্যুর রোশনাই
কফির চুমুকে চুমুকে মৃত্যু আসে; রাত বাড়ে-
জড়ো হয় মৃত্যু নেশা যেন রয়েলটাচ পিনিক।
বছর গড়িয়ে যায় ইমোরি বিদ্যাপিঠের
ক্যাম্পাসের নরম ঘাসে তিনটি ছায়া ঘোরে;
গভীর রাতে ছায়াকায় হয়ে ফিরে আসে
অবিন্তা তারিশি আর বীর বন্ধু ফারাজ!
ঝাঁ ঝাঁ রোদে ছায়া মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকে বিবেক।
উল্টো রথের টানে পা বাড়ায় স্বদেশের ইতিহাস
বীর বন্ধু ফারাজ কন্ঠছাড়ে জোরে-
’না যাব না; বন্ধুদের ছাড়া ঘরে ফিরে যাব না
ছেড়ে দাও বলছি মুক্তি দাও আমাদের’।
হলি অর্টিজানে গুলির শব্দ!
অন্ধকার নেমে আসে দেয়ালে দেয়ালে
শুরু হয় থ্রিলার আর কিলার ঝড়।
পোড়া কফির ঘ্রাণে উড়ে যায় তাজা প্রাণ
ফারাজ, অবিন্তা, তারিশিদের শরীর আর নড়ে না!
প্রতি বছর পহেলা জুলাই সারা ঢাকায় বৃষ্টি নামে
কিন্তু ৭৯ গুলশান রোড বৃষ্টির জলে ভেজে না।
শোকে বিহ্বল রাজপথ ভরে যায় গোলাপে গোলাপে
আর ভিজে যায় বন্ধুদের চোখের জলে।
চালাকের শিরোনাম
কোন্নিক হাতে কোথায় যাও রাজমিস্ত্রী
দু-নম্বর ইট দিয়ে গেঁথেছো জনতার রঙ্গশালা
ভারার নিচ থেকেই দেখা গেছে তোমার অহম
ত্রিনাথের উঠোনে এখন পা পড়ছে না !
কী দরকার ছিল দেয়াল তোলার
বৃথা মানুষকে করেছো আড়াল
এখন শরতের উদোম বাতাস থেমে গেছে
অন্ধ সারিন্দা বাদকের মত সুরই এ পথের সম্বল।
চোখ থাকতে অন্ধ হলে মিস্ত্রী-
চোখ যেন মার্বেল পাথর,
গজদন্ত তোমার আর এ কে সিরামিক।
শত শত কন্ট্রাক্টে গড়ে চলেছো ইমারত
পাঁচটায়- একটা, ছয়টায়- একটা,
সাতটায়- একটা; জপ করছো সিমেন্টের নামতা,
অপেক্ষায় থাক বেরিয়ে আসবে- কালো বিড়াল।
অহংকারে ঠাঁসা অট্টহাসির ঠিকাদার-
তোমার শরীর অপেক্ষা বড় মাটির সেই বুজ
অথবা নাভি সমান লহদ!
কি দিয়ে গড়বে শুনি; সেখানে যে শুধুই মাটি-
রড-সিমেন্ট কিম্বা মার্বেল পাথরের কোনো অ্যালোট নেই।