গৌরী প্রভা দাশ-এর কবিতা
পিতা
পিতাকে দেখিনি হয়েছি মুগ্ধ
সে অগ্নিঝরা বচনে,
ঘুমঘোরে রোজ এঁকে যাই তার
দিব্য মুখটি স্বপনে।
ভাগ্যবান সে যে বেড়ে উঠেছে
পিতার শাসন আদরে,
ঝড় ঝঞ্ঝায় বুক পেতে পিতা
আগলে রাখতো যতনে।
পিতাকে জানেনা যে জন সে জন
বড় হতভাগা জীবনে,
কিভাবে জেগেছে ভীরু বাংগালি
তাঁর তর্জনি হেলনে!
পিতাকে জানতে পাবে ছয়দফা,
স্বাধিকার আন্দোলনে;
পিতাকে খুঁজলে সেভাবে পাবেই
সাত মার্চের ভাষণে।
পিতাকে জানবে যেদিন সেদিন
জানতে পারবে নিজকে,
জানবে তখন পঁচিশে মার্চকে
ডিসেম্বরের ষোলকে।
বড় দুর্ভাগা আমরা বুঝিনি
পিতার মর্ম তখনো,
নিজ হাতে খুঁড়ে চলেছি কবর
আঁধার হাতড়ে এখনো।
রক্তরাঙা তুলি
পাকিরা যখন শিখতে বললো পাকিস্তানি বুলি
রক্ত দিয়ে সাজলো তখন বর্ণমালার তুলি।
একুশ এলো পলাশ শিমুল বনে লাগলো আগুন
কোকিল পাখির গানে গানে উঠলো জেগে ফাগুন।
ফাগুনেরই আট তারিখে অরুণ রাঙা ভোরে
ভাই যে আমার গাইল গান কণ্ঠ ছেড়ে জোড়ে।
আসি বলে সেই যে গেল না ফেরারই দেশে
পারুল জবা সজনে গাঁদা খুঁজছে মেঘে ভেসে।
খোকার আশায় পথ চেয়ে মা পাগলিনী বেশে
হাত বাড়িয়ে আজো আছে মেঠেল পথের পাশে।
একুশ হলো একাত্তরের ঘুমন্ত বীজতলা
মায়ের ভাষায় মনের কথা উজাড় করে বলা।
একুশ মানে মাথা উঁচু অকুতোভয় দুর্বার
অন্তরে তাই খোদাই করা সালাম রফিক জব্বার।
ধূসর ছাই
বুকের কোণে বুনো পাখিটা
চুপটি করে নিয়েছে ঠাঁই,
কী উড়ুউড়ু মনটি তার!
বেঁধে রাখার সাধ্যি নাই।
সে যে ভালোয় বাস করালো
ভালোবাসায় হার মানালো,
মন খারাপে জোনাক হলো
নিঝুম রাতে বীণ বাজালো।
কথার পিঠে কথা গাঁথলো
কথামালার হার পরালো,
চোখে প্রথম চোখ রাখলো
ভুল সঠিক পথ চেনালো।
হঠাৎ করে কী জানি হলো!
চেনা পথটি অচিন হলো
পথের বাঁকে আড়াল নিয়ে
বিষাদমাখা দুঃখ হলো।
এখন আমি কাকে বোঝাই
পাখিটা ছাড়া আমি যে হায়!
মধ্যরাতে অগ্নিস্তুপে
নিঃস্ব কিছু ধূসর ছাই।
নক্ষত্রের রাতে
বেঁধেছো দু’হাতে যাকে মায়ার বাঁধনে
ভুলেও কখনো সে কি ভুলে যেতে পারে!
একি মোহ! নাকি প্রেম অবোধ অন্তরে
যেভাবেই ভাবো ; আছো ভেতর বাহিরে।
কতদিন পর কাছে পেলাম তোমায়
ধীর পায়ে এসেছিলে নক্ষত্রের রাতে,
বহুক্ষণ পাশাপাশি হেঁটেছি দু’জন
শুনেছি তন্ময় হয়ে পাখির কূজন।
তুমি কোন স্বপ্ন নও, নওতো কল্পনা
বারবার ছুঁয়ে ছুঁয়ে বিভোর থেকেছি।
এসেছিলে তুমি এক তারা ভরা রাতে
আমাকে রাঙিয়ে দিতে রাগে অনুরাগে
যেটুকু পেলাম তারে নিশীথ প্রহরে
তবুও অদৃশ্য হলে প্রভাতের আগে।