বিশেষ সংখ্যাকবিতা

কবিতা।। আহমেদ শিপলু ।। ফেব্রুয়ারী কবিতা উৎসব সংখ্যা

দুইশো ছয় মাইনাস ত্বক ও মজ্জা

দুইশো ছয় মাইনাস ত্বক=মানুষ
অথবা
হাড় এবং মজ্জা এবং ত্বক= অনুভূতি
সুতরাং ‌‌- হাড় মাইনাস মজ্জা এবং ত্বক= মানুষ
এবং সুতরাং
একদিন আমিও মানুষ হবো!
আমি আমরা তোমরা এবং তাঁরা
সকলে মিলে মানুষ হয়ে উঠবো নিশ্চয়
মানুষ হলে ত্বক থাকতে নেই
ওটা খুব অনুভূতিপ্রবণ
খুলি থাকবে তবে মগজ থাকবে না
মগজে সহজেই বাসা বাঁধে ঘুণপোকা
আমাদের কোটর থাকলেও মনি না থাকাই শ্রেয়
দেখার নিষেধাজ্ঞা থেকে বেঁচে যাবো ঠিক
পুরুষ হলে অণ্ডকোষ থাকবে না
পুরুষাঙ্গও নয়
তবেই লুপ্ত হবে ধর্ষণ
নারী হলে থাকবে না উরু স্তন ও নিতম্ব
যোনি না থাকায় বেঁচে যাবে সম্ভ্রম হারানোর ভয়!
আমাদের তোমাদের এবং তাঁদের জন্য
রেখে গেলাম এইসব অনুভূতিহীন সম্ভাবনা।

পায়েদের আড্ডায়

ফিরতি প্রহর
অচঞ্চল পায়েরা কথা বলে
পরস্পর ধুলো ঝেড়ে ধুলো মেখে দ্যাখে মানুষের মুখ, মানুষির মুখ
ক্লান্ত

অবসন্ন
ঘামের গন্ধ ভুলে পায়েরা তাদের ঈশ্বরের কথা ভাবতে চেয়েছিলো কিনা
সে জিজ্ঞাসা হারিয়ে যায় বাসের হাতল, কন্ডাকটরের হাঁক-ডাকে
‘কেউ তো আছেই’ মাথার ওপর ইশারা করে শান্ত হতে বলাই যায়
মানুষের ভীড় ঠেলে এগিয়ে যাওয়া যায় সহজেই
লাউ কুমড়োর ডালপালা থেকে সুতোর মতো সতেজ লতায় জড়ানো যায়
কোনো তিলবতীকে
পারি না
অতোটা নিশ্চিত নই কোনো কালেই
মাথার ওপরে আঙুল তুললে আর ভেঙে দেয়া যায় না অন্ধের হাট
মাটির দিকে চোখ রেখে যা বলি
তাকেও সকলে মানলো না বলে জীবনকে ভেবে নিই বৃথা ভ্রমণ
পায়েরা কথা বলে
ধুলোবালি ঝেড়ে
ধুলোবালি মেখে
পায়েরা কথা বলে
তাদের আলাপ প্রায়শই জমে ওঠে ঈশ্বর সম্বন্ধীয় ধাঁধায়।

ডানা অথবা পালকের কান্না

১.

কাগজ অথবা সাদা মাঠ
কার্তিকের মতো বিষণ্ণ
নিব ভেঙে ফেলার আগে হৈচৈ হবে খুব
অক্ষরগুলো ফেরত হবে না আর
দণ্ডিত নয় কাঁদছিলো বিচারক

২.

ভাঙা জানালায় লটকে গেছে আকাশ
ভাঙা বাসনার তীরে বৈঠার ছলাৎ রেখে যাবো দূর নিমন্ত্রণে
যেখানে রেখে আসি রোজ
হরিণের বাজির মতো দৌড়
প্রশ্বাসের তাড়া
দীর্ঘ পায়ে লাফ দিয়ে পেরোনো
মাত করা পৃথিবী।


জাবরক্লান্তিচয়

মলাটে ধরেছে ঘুণ
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায় ঘুমোতে গেছে অক্ষরদিন
উঠনে উড়ছে ভাঙা মেঘ
একটা ভয়ানক বাঁক
ডানায় ক্লান্তি
ওড়ার জন্য যারা ডানা বেঁধেছিলো পিঠে
তারা গেছে ঘাসকাটুরের দলে।
ঘাস। কাটছে খুব! খাচ্ছে খুব!

এরকম নীল নীল ওড়াউড়ি পকেটে
পুরে রংচায়ে লেবু কচলাই।
ঠোঁটগুলো পোড়া।
চুমু খাওয়ার জঘন্নতায় ঠোঁটেরা ভুলেছে সব।
দূরের বিন্দুজুড়ে চোখের বিষণ্ণতা
ব্যালকনি থেকে নেমে গেছে বেড়ালের কোমল পদচিহ্ন
সুরের সুতো ছুতে চায় বৈষ্ণব রাখাল
মুণ্ডুহীন মহোৎসব
লাল লাল সেইসব স্লোগান
পৃষ্ঠায় পৃষ্ঠায়
ক্ষেতের আল ধরে হেঁটে গেলে
লাঙল
মজুরি
শ্রমিক
ভাগ
বন্টন
দীর্ঘ দীর্ঘ রাত আর দীর্ঘশ্বাস আর দীর্ঘ দীর্ঘ মিছিল…
‘মেহনতী মানুষের জয় হোক’ দূরের চাদরে মোড়ানো
ক্লান্ত মোহ। মহান মার্কসিস্ট সন্ধ্যা।
এখন
ঘুণে খাওয়া চেয়ারের পায়া ধরে আছে সমগ্র জীবনানন্দ।
রবীন্দ্র রচনাবলীর ঘাড়ে চেপে ভাঙা টেবিল।
চকচকে তরবারি
শান দেয় সিঁধেলচোর
উঠোনের মজমা গেছে ভেঙে
নাটাই নাটাই খেলা
সুতো ছাড়ার দিন ফুরালে
ঘনানো বেলা শেষ হয়
কাটাঘুড়ির আড্ডায় জাবরকাটে আততায়ী অন্ধকার

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *