কবিতা।। ফারুক আফিনদী।। কাব্যশীলন কবিতা উৎসব সংখ্যা
খুলি
অবশেষে
অবসর এলো।
অবশেষে হলো সময়- খবর এলো, অবসরের আগে, অথবা পরে-
অসুখের বাসা বুনেছে
চেয়ে চেয়ে থেকে।
অবশেষে…
বিল ধরে ছুটছে সে।
কে!
এমন বিভ্রমের বুকে
পড়লো নেমে
মাঠ জুড়ে
জোছনা খেলছে
হলুদ- রুপালি-
বিভ্রম খেলে
সোনা ঝরা বিল
কখনো খাড়ি, আবার বিস্তীর্ণ জল
পায়ে পায়ে ঘোরায়
আবার সোনালি জোছনা, নাকি রুপালি!
কয়েকটা গাছের নিচে, পুকুরের পাড়ে, মজাপুকুর-
কয়েকটা গাছ দাড়িয়ে
বাঁশির সুর
ভেসে আসে
মানুষের খুলি
হুহু করে ঢুকছে বাতাস
হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে দিলো সে
থেমে গেলো
আবার বাতাসের ঠোঁটে চেপে ধরলো
হু হু
হু…
করুণ বিলাপ, বিভ্রম এবার-
এই বিরান বিলের ডাক
বিলয় ও বাতাসের
ফসফরাসের মতো হাড়ে
নীল নীল আগুন, নীল ক্ষয়, হে বিলয়
বিলয়।
আবার বিল ধরে ছুটছে
আবার জলে
রাত ভোর হয়
একটা মরা মানুষের খুলি পড়ে আছে
আর কয়েকটা গাছের পাতা।
ধোপানী আসে, বৃষ্টির পরে
বৃষ্টির পরে
ধোপাখানায় ধোয়া বেডশিটের মতো
ঝুলে আছে
হলদে রোদ
খোয়া কয়লার ধারে হলুদ গাদার পাতাগুলো
চিকচিক করে মেলছে
কিছুক্ষণ শুয়ে থাকবো!
শুয়ে থাকবো!
পূর্বাভাস বলছে- ফের মেঘ করবে
বড়বাড়ির উঠানে
বৃষ্টিযাপনে যাবে ধোপানী।
২
ধোপানীর ধূসর ধুতি শাড়ি
উঠানে এক কোণে পাতা ছাপিয়ে উঁকি দিয়ে আছে বেদেনা
ভাপে বাষ্পে ভিজে বুক। ডগায় বসানো এক কালো… রক্তিম, রক্তিম
ফোটা- বেদেনায়, বেদেনায়-
বৃষ্টি, ঠাণ্ডা- ভিজে ভিজে
স্ফিত খুব খুব, আরো টান টান, আরো স্পষ্ট আরো লাল
ফেটে যাবে, ফেটে যাবে-।
যাবে-!
এই পাখি- ডগায় ঝুলে থাকা এক ফোটা আকাশের জল- উদাস, একান্ত
কবে যে একদিন মনে হয়েছিল তারে
পানি ঝরে- একা ধোপার ঘরে-
একবার সে কাঁদে। একবার মরে- বাঁচে-, আবার মরে মরে পড়ে থাকে
একবার চিৎকার করে- ছিঁড়ে যাবে, ছিঁড়ে যাবে ফিনকি দিয়ে বেরোবে লউ, ধোপানি ধোপানি!
ধোপানী! আয়, আয়- নিরালায়-
পয়সা দেবো, কাড়ি কাড়ি।
ধোপানী আসে, বৃষ্টির পরে
রোদ ওঠে
হলুদ গাদার পাতাগুলো মেলে না। আর মেলে না
ধূসর সাদা শাড়ি পড়ে থাকে- খোয়া কয়লার ওপর- বিছিয়ে রয়েছে মেঘ-
মেঘে, মেঘে।
চ্যাটিং
শুরু:
উঠোনে জোছনা আছে? অভিসারে যাব।
না।
বৃষ্টি? আমরা ভিজতে যাব।
না।
অন্ধকার রোদ, ইস্পাত আকাশের তলে? তুমি-আমি কোথায় তাহলে!
নেই।
না, ধলপ্রহরের মৌন আলোয় বিঁধে থাকবে আমাদের প্রেম।
অব্যাহত:
উঠানে কি জোছনা আছে?
না।
বৃষ্টি?
না।
মুখোমুখি দুটা বল্লম-অন্ধকার ও রোদ, দুটো ভাই- নরম নয় তারা! মাংসল নয়?