আরিফুর রহমান-এর কবিতা
চেনা গন্তব্যের পথিক পরান
[রয় অঞ্জন দা’কে]
সেই ধ্রুবতারাটি আজও খুঁজি,
নিশ্চুপ নির্ঘুম রাতের সঙ্গী ছিল আমার।
সেই ধ্রুবতারাটি আজও খুঁজি,
পথ বন্ধ ছিল দুজনেরই, জীবন রেখে পালাবার!
তবু কীভাবে যেন টুপ করে একদিন
তারাটি নিভে গেল
জীবনটা রেখে গেল জানালায় ঝুলিয়ে
যার মুখজুড়ে শোধ না করে যাওয়া সহস্র কথাঋণ!
প্রতিবেশী জানালা থেকে পাওয়া
সেই ঋণের ভার
এখন একান্ত আমার।
তাই তো বকছি ভীষণ, নিজের ও তার!
শুনছ প্রলাপ? শোনো,
আমাদের চুপকথাদের ডানা মেলা শেষে
এমনই কোনো শীতের বেজন্মা হিম হওয়ায়
তার কাছে হেঁটে চলে যাব একদিন
বাকি সব রেখে যাব পুঁজিপতিদের খপ্পরে
কেবল নিয়ে যাব সাড়ে তিন হাত জমিন।
ভান
বাজতে বাজতে জমে গেছে
উত্তুরে ওশের বাঁশি, আর
রোদ নামছে হাওয়ার ডানায় চেপে—
পথ-প্রান্তর ছুঁয়ে ছুঁয়ে কুড়াতে শিশির স্নেহ।
উঠোনজুড়ে সোনালি ধানের দিন
হাসছে ভীষণ, কৃষাণীর নথ নেড়ে নেড়ে;
তার-ই পাশে, ক্ষেতে নামবে বলে
তৈরি হচ্ছে বীজতলার জমাটি সবুজ।
বিজন মাঠে রাতভর জেগে ছিল রাইসরষের মুখ
ভোরের কিশোরী হাসছে তাকে দেখে;
আর হাওয়ায় হাওয়ায় পালাচ্ছে বেহায়া হিম
এমনই, ভান করে মুখ ঘুরিয়ে নিল
বিগত রাত্রির ওম হাহাকার!
যেমন আমরা নিই সেই শীতার্ত মানুষগুলো থেকে!
কবি ও কবিতা
কে জানে সময় কতটা কচি ঝরাপাতা?
কে দেখে পাতায় অবাঞ্ছিত কত দাগ?
কে রাখে তার খবর?
কে জিগায় তারে, তোর গায়ে কি জ্বর?
পথ চলতেই পথিক বড়ো খুশি
পথের প্রান্তে তার অপেক্ষায় উল্লাস!
কে শোনে হাওয়ায় কাদের আহাজারি?
কে বোঝে কেন আকাশটা হচ্ছে ভারী?
এই শীতেও আকাশে জমছে কত পাপ?
মেঘের মুলুকে নামছে কতটা কালো?
কে আর গুনছে বলো লাশ?
কে মাপে বাতাসে জমে থাকা দীর্ঘশ্বাস?
সবার কেবল এড়িয়ে এগোনোর তাড়া!
সবার কেবল মুখ বুঁজে চলা স্বভাব!
কবিতা সেই কৌশল শেখেনি
কবি জানে, সমাজে বোধের বড্ড অভাব
তাই ধাক্কা দেয় জেগে থাকা ঘুমটা ভাঙাতে।