দেবী আচার্য্যের- কবিতা
হে ঈশ্বর
আমি আকাশ হতে চাই
মেঘ হয়ে
পৃথিবীর কোণায় কোণায়
ভেসে বেড়াতে চাই;
পাহাড় তৃণমূলের
অতিথি হতে চাই।
হে ঈশ্বর
যদি আমাকে আকাশ করতে না পার,
তবে ঝর্না করে দাও
নদী সমুদ্রে মিলিত হয়ে
আজীবন সুখের তৃষ্ণা
মেটাতে চাই।
হে ঈশ্বর
যদি আমাকে ঝর্ণা করতে না পার,
হৃদের কিনারের
পাথর করে দাও
স্বচ্ছ জলের আবছা স্রোতে
সিক্ত হতে চাই।
হে ঈশ্বর
যদি আমাকে পাথর করতে না পার,
পাখি করে দাও।
খোলা আকাশে বৃক্ষের ডালে
ডানা মেলে উড়ব
উড়তে উড়তে
জীবন ভ্রমণ সফল করতে চাই।
হে ঈশ্বর
যদি আমাকে পাখি করতে না পার,
মরুভূমি করে দাও
সূর্যের তাপে পুড়তে পুড়তে
দুঃখের লাভাস্রোত
সংবরণ করতে চাই।
ফিরে দেখা স্মৃতি
আমার প্রথম প্রতিজ্ঞা ছিলে তুমি,
আমার দ্বিতীয় প্রাপ্তি ছিলে তুমি;
কিন্তু প্রতিজ্ঞা আর প্রাপ্তিকে
বিয়োগ করে
আমার হৃদয়ের তৃতীয় শূন্যতার
সৃষ্টি করেছো তুমি।
তোমার চেতনাকে
ধারণ করতে করতে
আমার প্রতিচ্ছবির কথা
আমি ভুলে যাই,
পাহাড়ের বুক চিরে
ঝর্নার ধারা বয়
আমার দু’চোখ ভরে বয় অশ্রু
তুমি নেই বলে
আমার প্রত্যেক প্রহর
দুঃখের আবরনে হয় শুষ্ক,
সমস্ত ভাবনা হয়ে যায় উষ্কো খুষ্কো;
তোমার অবর্তমানে
তোমাতে মগ্ন হয়ে
আজও মোহনার স্রোতে
স্বপ্ন ভাসায় আমি।
আমার স্বপ্নের আরম্ভ ও সমাপ্তি
শুধুই তুমি।
অদৃশ্য শরৎ
কোন এক প্রভাতে
শিশির ভেজা ঘাসে
আমি শিউলি হয়ে ঝরেছিলাম।
আজ ঘাসের বুকে
শিশির অদৃশ্য
সূর্যের তাপে শুকিয়ে গেছে
প্রভাত বেলায় শিউলি ফুল;
ছিল কার ভূল?
ঘাস, ফুল নাকি সূর্যের?
হাজার প্রশ্নের মেলা বসে
আমার হৃদয়ের বেদনার হাঁটে
অজানা সব উত্তর।
তুমি কি আজও
শরৎ এর অপেক্ষা কর!
আমি ঝরা শিউলি হব
তুমি শিশিরে ভেজা ঘাস হবে
ভোরের আলোয়
আমাদের নিষ্পাপ প্রেম
আলিঙ্গনে পূর্ণতা পাবে।
শরৎ এর আগমনে
তোমার হৃদয় কি
আমার হৃদয়ের মতো
আজও আলোড়িত হয়?
কত পাখি গায়,
কত ফুল ফোটে
শুধু শিশির ভেজা ঘাসের বুকে
আজ আর শিউলি ঝরে না।
সব ঋতু আসে
তবু কাঙ্খিত সেই
শরৎ আসে না।।
ধোঁয়াশা
আজ বিষ্ময় সূচক চিহ্ন
হৃদয়ের দোরগোড়ায়
কমা সেমিকোলন
নিশ্চিন্ন প্রায়,
বিষ্ময় সূচক চিহ্নে
হতাশার অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয়ে
কোমল হৃদয় ছায়।
নির্ঘুম রাতে চোখের জলে
ঝাপসা দেখায়
চাঁদের পাহাড়
নীল বেদনার কথা মালা সব
ভেসে যায় মেঘের ভেলায়।
সেদিনও পূর্বাভাসে বলা হয়েছে
হৃদয়ের যৌক্তিকতা।
তবুও কেন এই বিষন্নতা!
হৃদয়ের ব্যাকারন
শুধুই যেন ধোঁয়াশা।
পৃথিবীর উক্তি
আমার বুকের মধ্যে
অহর্নিশি তৃষ্ণার আকাঙ্ক্ষা
মনেহয় যেন
আমার জীবন্ত দেহটাকে
কারা যেন লাশকাটা ঘরে
কেটে রেখেছে
ক্ষত বিক্ষত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ।
আমি পৃথিবী
বেদনার অগ্নিশিখায়
বহুবার পুড়েছি
পুড়তে পুড়তে
আমার বিষাদ হৃদয়ের
এক খন্ড থেকে
আগুনের উল্কা
পুড়িয়ে দিয়েছে
আমাজন বন।
আমি পৃথিবী
আজ চিতকার করে বলতে চাই
দুঃখের চিতার দহনে
পুড়ে হবনা ছাই।
হিমালয়ের শিতলতায়
আপনার হৃদয়ের ছিন্নমূলে
পুনরায়
আশার সঞ্চার ঘটাতে চাই।