ফিরোজ আহ্সান এর কবিতা
একটা সেকেলে চিঠি
কতদিন ভেবেছি অচেনা রেললাইনে গা এলিয়ে দিয়ে শীতের মিঠে রোদে একটা কবিতা লিখব।
কবিতায় মিহি কুয়াশা আর সর্ষে ফুলের গন্ধ থাকবে।
কবিতায় দলছুট এক পরিযায়ী পাখির গল্প থাকবে।
কতদিন ভেবেছি
আরো কতকিছু; বলবো না।
তুমি জানো না, এই এতো এতো সুখ আর নিরেট আনন্দের দিনেও
আজকাল সবকিছু কেমন যেন সাদাকালো লাগে
বড্ড বেশি হতাশ লাগে।
তুমি জানো না, শেষ কবে কোথায় এক গ্লাস খেজুরের ঠাণ্ডা রস খেয়েছিলাম ভুলে গেছি।
তুমি সত্যিই কিচ্ছু জানো না।
তুমি দেখো-
এবার সত্যি সত্যি হেমন্তের শেষ দিনে
একটা রেল গাড়িতে চড়ে
আমি তোমাদের গ্রামে আসব। তারপর মন ভরে
টিনের চালে শিশিরের টুপটাপ শব্দ শুনবো।
নকশী কাঁথা গায়ে রেখেই তোমার দিকে হাত বাড়াবো
তোমার দেয়া শীতলমায়া রসের গ্লাসে মুখ নোয়াব।
একা নই
এই শহরে আমার কিছুই নেই।
চাকরী নেই, একটা ব্যবসাও নেই।
তারপরও এখানেই পড়ে আছি।
কেনো?
আসলে আমার চলে যাওয়ার দ্বিতীয়
কোন জায়গা নেই।
মাঝেমাঝে হেঁটে হেঁটে এসে
এইখানে বসি;
এই পার্কে, এই নাগলিঙ্গম বৃক্ষের ছায়ায়,
এই বেঞ্চে।
মাঝেমাঝে সারাদিন
পাখি দেখি, ফুল দেখি,
বাতাসে পড়ে থাকা খসখসে পাতাদের সরে যাওয়া দেখি।
সব কিছুই ভালো লাগে।
ভালো লাগে এলোমেলো ভাবতে,
ভালো লাগে আলসে রোদে
চকচকে ঘাস ফড়িং এর পাখায়
অপলক তাকাতে।
এই মাঠের ঘাসে মাদকতাময় সুবাস আছে।
তবে সবচেয়ে ভালো লাগে
যদি দেখি আলগোছে কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছেন;
আমার চলে যাওয়ার অপেক্ষায়।
এইসব দিনরাত্রি
তবু আমি ভেবেছিলাম বন্ধুর বন্ধুর বাবা পর্যন্তই থেমে যাবে এই মৃত্যু মিছিল।
কিন্তু কই? ধীরে ধীরে দূরের আত্নীয় স্বজন,
পাড়া প্রতিবেশী, মোড়ের দোকানদার এবং শেষমেশ তিনতলার ভাড়াটে!
ঠিক যেন ঘাড়ের উপর মৃত্যুর গরম ছেঁকা।
ছোটবেলায় এক শয়তান বন্ধু ম্যাগনিফাইং গ্লাস
ধরেছিলো ঘাড়ের উপর।
বলেছিলাম, তুই মরিস না কেন? তুই মর!
একেবারে মন থেকে বলেছিলাম।
মৃত্যুকে কি বলা যায় অমন করে?
মাথাটা এলোমেলো লাগে আজকাল।
দিন যায় দিন আসে। শুক্রবার,
প্রতিদিন আসে।
ভেবেছিলাম কয়েকটা দিন অথবা মাস কেটে গেলেই সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে;
ঘাপটি মেরে পড়ে থাকবো কিছু দিন।
কিন্তু কই? কিছুই তো হলো না।
ভ্যাকসিন ট্যাকসিন কিচ্ছু এলো না।
মাঝখান থেকে আমার মাথাটাই বিগড়ে গেলো।
ভাড়াটিয়া মরে গেলে- চোখ থেকে ঘুম চলে গেলো।
বাড়ি ভাড়া দিয়ে খাই; ভাড়াটিয়া মরে গেলে কেমনে হবে?
ফেইসবুক, ইউটিউবে একা একা ঘুম খুঁজি,
কতকিছু দেখি- যদু মধু কদু।
কিন্তু কই?
সেখানেও মৃত্যু আর মৃত্যু।
পুলিশ যাকে খুশি ফায়ার করে শুধু শুধু।
ভালো লাগে না।
ঘুম আরো দূরে চলে যায়।
তাই আজকাল অপু ভাইয়ের টিকটক দেখি।
একটু ঘুম হয়।
মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে- টেন মিনিট
ইংরেজি শিখি, বাথরুমে যাই।
একটু ঘুম হয়।
চুপচাপ ঘুমিয়ে পড়ি।