কবিতানির্বাচিত

ফখরুল হাসান এর কবিতা

লাশ বলে না

প্রতিদিন তিনবেলা ভাতের দামে বিক্রি করি জীবন।
মৃত্যু আর আমি পরস্পরকে চিনি, জানি।
ফলে আমার ঘরে ফিরতে কোনাে সমস্য
হয়নি একবারও।
আমরা একসাথে থাকি;
প্রতিদিন হাত ধরাধরি করে বাঁচতে বাঁচতে মরি।
মরে মরে বেঁচে যাই বারবার। ফলে মৃত্যু- মন্দ্যে
আমাকে কেউ আর লাশ বলে না।

কার্তিকের মরা চাঁদ

অধঃপতনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে প্রশ্ন আসে মনে
কবে কিভাবে নৈতিক অবক্ষয়ের সূচনা হয়েছিল
কেন গন্তব্য ধীরে ধীরে বালুঝড় কুয়াশায় ঢেকে যাচ্ছে?
তাই কি ভবিষ্যৎ কার্তিকের মরা পূর্নিমার মতো
অস্পষ্ট দেখায়?
তবে কি আশা বাঁকের শেষে নদীর মতো শেষ হয়ে গেল!
স্বভাব-মানচিত্রে স্তরে স্তরে মুক্তস্বভাবী মানুষ
এখন পাখির মতো উড়ে উড়ে খুঁজে ফিরে অস্তিত্ব।

শহরগ্রন্থ

সংস্কৃতির শহরে বেদনার তুলি হাতে চিত্রকরগণ। আহাজারি করে!
যখন, শহর গ্রন্থের লেখক; খুনিদের মুখােশের নির্মাতা।
একদিন শহর গ্রন্থের প্রতিটি পৃষ্ঠাজুড়ে অলংকরণ হবে
রক্ত আর লাশের।
স্বরবৃত্তের নিয়ম মেনেই খুন হবে স্বাভাবিক …
রক্ত পিপাসুদের কাছে খুন মানেই মাত্রাবৃত্তের উপমা – চিত্রকল্প।
অক্ষরবৃত্ত নিয়ে খেলতে খেলতে সবুজ ভূখ হবে,
অন্ধদের আতুরনিবাস।
খুনকে তখন বিবেচনা করা হবে সর্বজনীন মুক্ত গদ্য!
সেদিন মৃত্যুর শহরে রক্ত দেখে কেউ হতাশ হবে না।

লজ্জা

এ শহর তার নয়; কাণ্ডজ্ঞানহীন মাতালের আশ্রম
অথচ আমরাই কমিরের হাঁ-মুখ
সমাধির চিত্রকল্প গড়ে তুলি আঙুল টিপে !
চারদিকে আর্তচিৎকার— নব নব বাঘের গর্জনে
গুমোট আকারে ঢেকে যাচ্ছে নাগরিক মন
ভুলের প্রায়শ্চিতে বিনম্র লজ্জা আজ।

আমরা অপেক্ষায়

শোষিত মানুষের চোখে ক্রোধের আগুন
প্রলোভনের কুয়াশা জলে নিবে সাময়িক
রূপকথার কল্পক গল্পে আর কতদিন?
ঘুম পাড়িয়ে রাখবে? যেদিন ঘুম ভাঙবে
অধিকার বুঝে নিতে ঘুম ভাঙা মানুষের দল
পথে – প্রান্তরে, মাঠে – ঘাটে জড়াে হবে।
শপথ প্রাপ্ত হয়ে। আগুনঝরা ক্ষোভেসেদিন
চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যাবে তােমাদের মসনদ।
আমরা অপেক্ষায় …
জীবনের সবখানে জীয়নকাঠির ছোঁয়া লাগবেই।

দণ্ড প্রাপ্ত সময়

গুচ্ছগ্রামের ছন ঘরের মতো
হারিয়ে যাচ্ছে সময়
রাজশহরের ম্যানহোলে।
পরিবর্তনের সেই খেলায়
সবাই পাকাপোক্ত অভিনেতা।
বেঁচে থাকার প্রত্যাশায়!
পোড়খাওয়া জীবনকে
কাটাছেড়া করে সময়!
জীবন যেন চামড়া কাটার ছুরি,
রক্তাক্ত করে অভাবের করালগ্রাস।
ঝাপসা চোখে প্রতিনিয়ত দেখি
তাই, ছাইরঙের সন্ধ্যা।

নকল নক্ষত্রের দল

হাতের কব্জা মুষ্টিবদ্ধ হতে বাধ্য করাে না।
আঁধারে লুকিয়ে থাকা নকল নক্ষত্রের দল।
চেয়ে দেখাে চারপাশে জনযুদ্ধের মহাসংগীত বাজে
মনে রেখাে শক্তির কপাটের আড়ালে প্রতাপশালী।
পূর্বপুরুষেরা ইস্পাতের মতাে মনােবল নিয়ে
অন্ধকার অভিযানে লক্ষ্যভেদ ভুলেনি!
প্রয়ােজনে পুনর্বার আষাঢ়ের জল হয়ে
পূর্বপুরুষের মাটি থেকে সরিয়ে দেব জঞ্জাল।
পাহাড় ডিঙিয়েও হতে পারে রক্তপাতহীন যুদ্ধ
মুষ্টিবদ্ধ হাতগুলাে এক হলে ধেয়ে আসবে তুমুল তুফান।
ঝড়ের পরে মাটির বুকে দূর্বাঘাসের মতাে গজিয়ে ওঠবে।
শুদ্ধতম কিছু নিরাপদ ভালােবাসার চাষি।

৪ thoughts on “ফখরুল হাসান এর কবিতা

  • নূরুদ্দিনজাহাঙ্গীর

    কবিতাগুলো ভালো লেগেছে।

    Reply
    • ফখরুল হাসান

      অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে প্রিয় মানুষ শ্রদ্ধেয় কথাসাহিত্যিক।

      Reply
  • নাহিদ মিশুক

    অসাধারণ লেগেছে।

    Reply
  • Sheikh Firoz

    ভালো লাগলো।

    Reply

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *