সাতটি কবিতা চপল মাহমুদ
বার্তাবাহক
আমি
কবি নই
বার্তাবাহক
করি তথ্য প্রচার
এখানে ওখানে
প্রকৃতির কিছু
বিষয় বিষয়ক
আমি চাই না
খ্যাতি সম্মাননা
চাই না হতে নন্দিত
তবে ফিরে চাই
মৃত নদীর নাব্যতা
প্রাণবৈচিত্রের অরণ্য
আমি চাই
পরিচ্ছন্ন নগরী
যানজট শব্দদূষণের
গ্রাস থেকে স্বস্তি
চাই
শিশুর খেলার মাঠ
প্রভাবমুক্ত সংস্কৃতি
আমি
ফিরে পেতে চাই
শস্যশ্যামল গ্রামবাংলা
মাছে ভরা দহবিল
পাখির কলরব
কৃষকের হাসি
বাউলের সুর
আমি
অবশ্যই চাই
কার্বনমুক্ত বাতাস
দূষণমুক্ত পরিবেশ
ভেজালবিহীন খাদ্য
ফর্মালিনের নীলবিষ
থেকে মুক্তি
আমি
শুনতে পাই
প্রকৃতির চারধারের
ক্রন্দন
সংকট সংকট
মহাসংকট ধ্বনি
খুঁজি তাই মুক্তিরপথ
যে পথ অবরুদ্ধ
যুদ্ধ যুদ্ধ
মহাযুদ্ধ
প্রকৃতি বনাম মানবে
দখল নিধন দূষণের
মহাতাণ্ডব
অপ্রতিরোধ্য
জেনে রেখো
এ যুদ্ধে
মানবের পরাজয়
ভয়ানক..
আমি
কবি নই
বার্তাবাহক…
বৈতরণী
পৃথিবী এক
অজানা নির্দয় ভূমি
পথ তার পরিচয় বর্ণনাকারী
প্রকৃতি এর অঙ্গের
বসন স্বরূপ
জ্ঞান পৃথিবীর রহস্যের চাবি
জন্ম একটা আকস্মিক ধারা
বন্ধন এক যাচিত বৈতরণী
চলা তার
রক্তের প্রবাহ ধারায়
প্রকৃতি
মহাপরিক্রমায়
মহাচৈতন্যে
মহাজাগতিক মহাবিশ্ব
মহাবিস্ফোরণ থেকে বিস্ফোরণে
সৃষ্ট
মধ্যাকর্ষণে
জলসুমদ্র পৃথিবী।
প্রাণের স্পন্দন মেখে
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে
জেগে উঠা স্থলভূমি
মহাপ্রলয়
বিবর্তন থেকে বিবর্তনে
সৃজনশীল
প্রকৃতির উত্থান
প্রাণবৈচিত্রের সম্ভার সাজিয়ে।
বৈচিত্র্যের
মহাকর্মযজ্ঞ প্রাণিকূলে
শ্রেষ্ঠত্ব খেতাবে
মানুষের উত্থান
ভাবকর্মে
প্রকৃতির মাঝে
মানুষও প্রকৃতি
প্রকৃতির
সাবালক সন্তান
মানুষ প্রকৃতি খায়
প্রকৃতি পড়ে
প্রকৃতি দেখে
চলে প্রকৃতির প্রাণে
প্রকৃতি অবুঝ
নির্দয় দরদি
জন্মমৃত্যু মেখে
এক জগৎ-জননী
রন্ধ্রে রন্ধ্রে যার
ভোগে ত্যাগে বিনিময়
বেঁচে থাকার যুদ্ধে
অভিন্ন প্রকৃতি
বহুরূপী পরিবেশ
গোত্রে গোত্রে বাস
ভিন্ন ভিন্ন
সমাজ সংস্কৃতি.
স্রষ্টার কৃপায়
আলো-আঁধার পৃথিবীর
সবটাই প্রকৃতি
বয়ে চলা তার
বর্তমান বর্তমান বর্তমান…।
বাংলার বিল
ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
পুঁটিমাছে পড়ে শাড়ি
শিং মাগুর সব ডাঙ্গায় চলে
সাথে থাকে কৈ টাকি
বিলের জলে ঢেউয়ে দোলে
পানকৌড়ি
এক পায়ে দাঁড়িয়ে বগা
কী জানি কী ভাবে
এলোমেলো ছোটাছুটি
মাছরাঙা আর ফিঙে শালিক
ঝুপেঝাড়ে চুপিসারে
ডাহুক কালেম
জলের ওপর ঢেউ এঁকে যায়
পাতিহাঁসের দল
উপর থেকে গাঙচিলেদের
নজরদারি
বোয়াল চিতল রুই কাতলা
শোল-গজার, কারফু-ফলি আইড়
বড় মাছের দলে
মলাডেলা, চিংড়ি-চেলা
পাবদা-টেংরা, বাতাসি বাসপাতারি
দলবেঁধে চলে
চান্দা-চাঁটা, খলসে-বেলে
অল্পপানি খোঁজে
বাইন-ভেদা খোঁজে কাঁদা
সঙ্গে কাঁকড়া শামুকঝিনুক
কীটপতঙ্গ শ্যাওলা বনে
বিলে দখলদারি
বিলের জলে ব্যস্ত জেলে
মাছ শিকারে
জাল-জালি, বড়শি-টেটা
পলো-চাঁই, দোয়াড়ির কৌশলে
বছরে এক-দুবার
দলবেঁধে মাছ শিকার
বিলে ভাসে নৌকা ভেলা
শাপলাশালুক কচুরিপানা
কিশোর কিশোরী করে গোসল
সঙ্গে কৃষাণ-কৃষাণী
আমি চপল গাঁয়ের ছেলে
বিলের পাড়ে আমার বাড়ি।
ব্যাঙ ডাকে ঘ্যাঙর ঘ্যাঙ
পুঁটিমাছে পড়ে শাড়ি…।
নীরব আগ্রাসন
সবুজ বনে জাল বুনেছে
ধূসর সবুজ
প্রকৃতির চারপাশে
প্রাণহীন শূন্যতা
ফুলফল পাখি সব উধাও
নেই মায়ামাখা ছায়া
চলছে
নীরব আগ্রাসন।
জমে উঠেছে
বিপন্নতার মহোৎসব
শিকড় গেড়ে দাঁড়িয়ে
ইউক্যালিপটাস বন।
প্রকৃতির প্রাণে বিষ
ঢুকছে মানব হাতে
বাঁচার জন্য মরণফাঁদে
দিচ্ছে পা একসাথে।
অল্প জমি অধিক ফসল
কম সময়ে বেশি ফলন
বাড়ছে আকার কমছে আবাদ
প্রকৃতির চারধারে
জমে উঠছে
শুধুই বিষাদ
থেকে থেকে তাই
বিরূপ আচরণ
চলছে নিরব আগ্রাসন।
নীরব দর্শক
আমি এক নীরব দর্শক
বুঝেও বুঝি না
বুঝতেও চাই না
আমি
চোখ থাকতে দেখি না
কান থাকতে শুনি না
মুখ থাকতেও বলি না কিছু।
বিবেক আমায় করে না দংশন
পরাধীনতার পালঙ্কে
ঘুমিয়ে আছে বোধ
আমি
বাক্সে বন্দি চাকর
বাক্সে খুঁজি দুনিয়া
প্রতিদিন বদলাই রুচিবোধ
আমি
রক্তে মাংসে রোবট জাত
ভালোলাগে কেমিক্যাল
খুঁজি না প্রকৃতির স্বাদ
আমি
ডাঙায় আর নামি না
উচ্চে করি বসবাস
আমার ঘুম ভাঙে না
পাখির ডাকে
দেখা হয় না ভোর
প্রকৃতি
সে তো এখন
অনেক দূর
আমি
আর এখন চাষা নই
খাই পিৎজা বার্গার
কোল্ডড্রিংকস
খুঁজি না মিষ্টি দই
আমি নিশ্চিন্তে
সন্তানের হাতে
তুলে দিতে পারি
ফরমালিনের বিষ
নির্বিঘ্নে
গ্রাস করতে পারি
প্রজন্মের অধিকার
উপহার দিতে পারি
প্রাণহীন ধূসর আগামী
আমি
সচেতনভাবে
অজ্ঞানতার মোড়কে
বিপন্নতার আর্তচিৎকার
সইতে পারি নীরবে
আমি
প্রকৃতির বৈরিতায়
হই না প্রভাবিত
সচেতনতার গায়ে
দোষ চাপিয়ে
সারি দায়িত্ব
আমি
ভুলে গেছি
জননী জন্মভূমি দেশপ্রেম
আমি
খুঁজি না ভালোবাসা
বুঝি না আবেগ
ও সব তো এখন
শুধুই সাবেক !
কংক্রিটের সভ্যতা
আমি
কংক্রিটের সভ্যতা বলছি
বুঝলে না ?
ইট পাথরের নগরী !
কৃত্রিম ঐশ্বর্য সাজিয়ে আমি
পরিবর্তনে অঙ্গীকারবদ্ধ।
আমি
সদা আগ্রাসন বিশ্বাসী
গ্রাস করব প্রকৃতির সব
প্রাচীর স্থাপত্যে ঢেকে দিব
পৃথিবীর সবটুকু মাটি।
আমি
কেড়ে নিব প্রকৃতির প্রাণ
চারদিকে সাজাব কৃত্রিম
যন্ত্রের যন্ত্রণাই বানাব বান্ধব
মানবকে করব যান্ত্রিক।
আমি
কেড়ে নেব মানবের আমিত্ব
বুনে দেব হতাশার বীজ
কিনে নিব সবটুকু সুখ
জাগিয়ে দিয়ে চাহিদাবোধ।
আমি
তারুণ্যে ছড়াব আসক্তি
কেড়ে নেব সম্মান লাজ
উন্মাধনায় মাতিয়ে দিয়ে
করে দেব কর্মভীরু।
আমি
ভুলিয়ে স্বদেশ সংস্কৃতি
মাতাব ভিনদেশী কালচারে
পরিবর্তনের স্লোগান নিয়ে
গুলিয়ে দেব দেশপ্রেম
দেশমাতৃকার।
আমি
দাবানলে পোড়াব মানবতা
কেড়ে নেব মানবের হুঁশ
ঢেকে দেব প্রেম
সন্দেহের জালে
বিশ্বাসকে করব খুন।
আমি
দূষণে করব ধূসর
কেড়ে নিয়ে প্রাণময় সবুজ
সবপ্রাণে ছড়াব বিপন্নতা
শুনব না কোনোই ক্রন্দন।
আমি
চুষে নেব বাতাসের অক্সিজেন
কার্বনে ভরাব ফুসফুস
পাকস্থলীর সবটাই কেমিক্যাল
তৈরি করব রোগ শোক অসুখ
আমি
গণিতের গ্যাঁড়াকলে
সংখ্যায় মাতাব সভ্যতা
যোগ বিয়োগের পরিক্রমায়
বিশালকে বানাব ক্ষুদ্র।
আমি
নীরব ঘাতক শব্দদূষণে
মস্তিষ্কে ছড়াব উগ্রতা
দানবীয় ভাবনা জাগিয়ে
সমূলে করব বিনাশ।
আমি
কোষ থেকে ডিএনএ
নিউরন থেকে নিউরনে
ছড়িয়ে দেব নীতিবাচকতা
রুধির করব নীলে নীল।
আমি
বাণিজ্যের বেড়াজালে
সভ্যতায় সাজা