জোবায়ের মিলন এর কবিতা
নীল
শরতের নীলের চেয়ে অধিক নীল
আমাদের জীবনে লেপ্টে আছে
আমরা তা কিছুতেই পেরিয়ে যেতে পারছি না. . .
ঋতুর নীল দীর্ঘস্থায়ী নয়
হেমন্তে তার ক্ষয় বা লোপ দেখা যায়।
আমাদের নীল ক্ষীণ হয় না, ঝরে না
মিশেই আছে অদ্ভুতভাবে,
আমরা শাদায় ভাসতে চাই, থাকতে চাই
শাদা’ই কাম্য।
এই শরতে আমরা একদিন
সমুদ্রে যেতে চাই
সমুদ্র কি আমাদের জন্য উন্মুক্ত হবে
সমুদ্র কি তার জলে দুধ-শাদা রঙ ধারণ করতে পারবে?
আমরা একদিন ঝর্ণা দেখতে যেতে চাই
ঝর্ণা কি আমাদের নীল রঙ ধুয়ে
একটি আকাশগন্ধা দিন দিতে পারবে উপহার?
অধিক নীল থেকে বের হতে চাই
আমরা চাই আমাদের শার্টের বোতাম নীল হোক
শাড়ির আঁচল নীল হোক
পাঞ্জাবী নীল হোক কিন্তু হৃৎপিন্ডে
না থাকুক কোন নীলের আবির ।
পচা মগজ
বাজারে এখন এক প্রকার মগজ বিক্রি হচ্ছে
কম দামে, সস্তায়।
আগে গরুর মগজ বিক্রি হতো
বিক্রি হতো খাশীর মগজ,
মহিষ ও ভেড়ার মগজও বিক্রি হতো যথাক্রম মিশিয়ে।
শৈশবে দেখেছি, সামুদ্রিক মাছের মগজ বিক্রি হতো,
মানুষের মগজের উপমা শুনেছি
বাজারে এখন গরুর, মহিষের, খাশীর মগজের সারিতে
মানুষের মগজ বিক্রি হচ্ছে!
মানুষের মগজ বিক্রি হচ্ছে-
পচা, ঢলঢলা।
নীল রঙের বেলুন ও মাংসের গন্ধ
মানুষের ভিড়ে হাঁটতে হাঁটতে
দিক হারিয়ে, হারিয়ে গেছি বনের ভেতর।
নীল রঙের বেলুনে আকাশ ছাওয়া
মানুষের মুখ বেয়ে মানুষের মাংসের গন্ধ!
চৌচির হয়ে ভেঙ্গে পড়ে থাকা কাঁচের মতন
টুকরো হয়ে পড়ে আছে উজ্জ্বল নক্ষত্র,
দিগন্ত অলিন্দ্যে অসংখ্য খোঁড়ল,
খোঁড়লে গোঁখরা সাপ
ভোর ও সন্ধ্যার ওলান চুষে
রাশি রাশি ছাড়পোকা অহমি পাখি।
বাজারে, হাটে, দোকানে মুঠো মুঠো ভাগা- মাংসের;
সারি সারি লাইন
লোকে-লোকে লোকারণ্য
মাংসের চাহিদা বেশ! নীল বেলুন- দাম্ভিক ফানুস।
কোনো পথ নেই, পথের নেই ঘর-বাড়ি
উপুড় হয়ে আছে সৌখিন মাদল-
প্রবাহিত বাতাসে মাংসের গন্ধ,
মানুষের
মাংসের গন্ধ।
পূর্ণাঙ্গ
কখনোই ভাবিনা, হোঁচট খেলে কেউ টেনে তুলবে
এও ভাবিনা, রোগে-শোকে শান্তনা দেবে কেউ।
পড়তে পড়তে উঠতে শিখেছি
শিখতে শিখতে এতো দূর এসেছি।
পথ কি শেষ হলো? মোটেও না
এখনো মেঘ থেকে শিখি, রোদ থেকে শিখি
সন্ধ্যা থেকে শিখি, রাত থেকে শিখি;
এখনো কাউকে ভালোলাগলে তার থেকে শিখি
মন্দ লাগলে সেও শিখি-শিখতে হয়;
এই শেখাটাই উঠতে বসতে কাজে লাগে,
আর সব উবে যায়, উড়ে যায়।
অন্য হাতের ভরসা করে পঙ্গু-বিকলাঙ্গ যারা।
পূর্ণাঙ্গ তো তারা, যারা নিজেকেই নিজে
টেনে তুলতে পারে খাদ কিংবা
গিরিখাদ থেকে।