লুফাইয়্যা শাম্মীর গুচ্ছ কবিতা
এক
কোনো ইচ্ছা নয়, আক্ষেপ নয়, অনুযোগ নয়, অপেক্ষা তো নয়ই- যা ঘটবার তা তুমুল ঝড়ে ঘটতে থাকুক। যা হবার তা তুমুল আঘাতে হতে থাকুক।
এই মাংস অবধারিত অক্সিজেনহীন। সাদা রক্তের দেহ। এ দেহের আর কি আসে যায়! দেহ চলে যাক শরমে-নরমে-আড়ালে-আবডালে।
কারা আছে কারা নেই, এসব আর ভাবনায় নেই। শৃঙ্গার বিদ্যুৎ বাজপাখির কৌশল রপ্ত করে উড়ে যাবে। তাকে আটকানোর কেউ নেই, কেউ থাকবেও না।
যে আসবে স্পর্শ নিতে, বাধাহীন স্পর্শের পরও তার আঙুল বেঁকে যাবে স্রোতের গর্তের দিকে। উহু আহা ধ্বনিতে শোরগোল বেঁধে যাবে খরামাঠে। কেউ হাই তুলে কাঁদবে, কেউ কীর্তিনাশার সভা করবে। আর কেউ কেউ সুযোগমতো দৌড়ে পালিয়ে বেড়াবে।
দুই
সে আমায় দিয়েছে আশ্চর্য লেলিহান আগুন। আমি জ্বলে যাচ্ছি শত কোটি বছর ধরে। অন্তর থেকে খসে গেছে প্রিয়া আমার। আগুন নিয়ে খেলতে খেলতে জ্বালিয়ে দেই পরাবাস্তব ফুলের বন।
সে আমায় দিয়েছে কঠিন শিলা। আঘাত সইতে সইতে আমিও দেখতে অনেকটা শিলারূপের মতন। দাঁড় টেনে আহাম্মকের মতো দাঁড়িয়ে থাকি- পশ্চাত দিকে।
সে আমায় দিয়েছে খুন হবার রন্ধন প্রণালি। জিব, শিশ্ন, ত্বকসহ যাবতীয় নেশা নিয়ে রন্ধন প্রক্রিয়া চালাতে থাকি। তার চোখ দুটো উজ্জ্বল। চোখের আগুনে পুড়ে যায় আমার সব রেসিপি।
সে আমায় দিয়েছে ব্যর্থ হবার মন্ত্রণা। আমি ব্যর্থ হতে হতে রক্তমিশ্রিত নগর ভেঙে দেই। নগরের কোনাকানছায় খুঁজতে থাকি- তাকেই।
আমি তার আশ্চর্য পোষা প্রাণী। কুকুর বিড়াল পাখির চেয়েও বেশি প্রভুভক্ত। সে আমায় যা কিছু দেয়, তার সবই সমাদরে গ্রহণ করি। সে খুশিতে মুচকি হাসি হাসে।
তিন
তোমার ক্যাবল হাসি, উদয় অস্ত হাসি
পরম্পরা হাসি
এ হাসিতে খুন হয় হলদে টিয়া
কিংবা চৈতন্য সাধুর প্রাণ
মানুষ কখনও নিজের হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না
মানুষ ক্যাবল অন্যের হাসিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়
মানুষ জানে না মানুষের ভেতরে সব মানুষ না
মানুষের ভেতর কিছু প্রেমিকাও থাকে
তুমি সেসব প্রেমিকার আত্মীয় স্বজন
তাই তো দিব্যি হাসতে থাকো
আর খুন করে নাও জড়-জীবের সকল প্রাণ
হাসতে হাসতে
তাদের প্রাণকেও ঝুলিয়ে রাখো হাসির কাষ্ঠে।
চার
এখন
হাত বাড়িয়ে যতটুকু নিশ্বাস পাওয়া যায় ততটুকু অশ্রু গলিয়ে ধীরপায়ে অবদমিত হও। তোমার আড়শ ঘাটে অসংখ্য দুহিতা আছে, তাদের বলে দিও, ‘এ নমস্য পৃথিবীতে ক্যাবল তুমিই সত্য।’ বলে দিও, তোমার আত্মাই পরমাত্মা, তুমিই ইরা পিঙ্গলা সুষমা।
তারপর
যতটুকু সম্ভব স্নান সেরে হিজল তলায় যেও। হিজলের ফুল কানে তুলে একটু অট্টহাসি দিও। ফলত ওখানে বর্ষা নামবে, হাসির ঝঙ্কারে।
এরপর
বৃষ্টিতে ভিজে খুলে দিও শরীর। ধপাস ধপাস আঘাত করিও আরেকটা শরীরে। বৃষ্টিকে মিনতি করিও না।
অতঃপর
তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে রাঙতা লেপে দিও মাতাল প্রেমিকার ঠোঁটে। আরও একটু চালের খুদ খুঁজে পেলে তলপেটে ঘষে দিও। কিংবা যদি কোনো জঙ্গলী বাঘ পাও, লেলিয়ে দিও দিঘল চুলে।
অবশেষে
ক্লান্ত শ্রান্ত পরিশ্রান্ত হয়ে ফিরে যেও জন্মভিটায়।