গুচ্ছ কবিতা নূপুর পান্ডে
প্রতিচ্ছবি
বর্ষ কয়েক পর তোমার প্রতিচ্ছবি,
জলছবি হয়ে ভাসে মনের মনিকোটায়!
নক্ষত্রের মত
জ্বলজ্বল করে তোমার ছায়া
বিবর্ন আলো হয়ে আমাকে তাড়া করে বেড়ায়।
দিনের আলো রাতের আধার সব একাকার করে কেবলই পিছুটান,
কেবলই খুঁজে ফেরার আকুতি!
রংহীন ধূসরতায় এক বিষন্ন প্রহর উদ্বেলিত করে হৃদয়ের চারপাশ!
একি মৃত্যহীন কায়া, না কি মনের অব্যক্ত বাসনার রিক্ত প্রতিফলন,
যা নিস্তেজ করে দেয় সমস্ত শরীর, সমস্ত মন।
যেন নীরবতার অনন্ত পারাবারে নিমজ্জিত
আস্তরন।
আঁতকে উঠি, হৃদয় পারাবারে উল্লাসিত হিল্লোল তোলপাড় করে
বেদনার আবরন কে।
হৃদয় কোণে জমে থাকা অভিমান অনুরাগ সিক্ত হয়ে ব্যর্থতায়। বিলুপ্ত হয় ভালবাসার গোপন অনুভূতি!
একি হৃদয়ের আর্তনাদ…নাকি ভালোবাসার তটে আঁকা জীবন জলসার শেষ প্রতিলিপি।
দুর্ভেদ্য
দুর্ভেদ্য অন্ধকারের বুকে মানুষ আজ একা…
একাকী খুঁজে নিচ্ছে তার চলার গতি,
দুঃসহ মলিন্য ঘিরে ধরেছে চারিপাশ,
বিমূঢ়ের মত পদপৃষ্ট সভ্যতার সাম্রাজ্য।
পৃথিবীর রং আজ ধূসর, রক্ত স্রোতে ধাবমান মানুষ নির্জীব হয়ে আছে অসহায়ত্বের চরম কষাঘাতে…
নিদারুন যন্ত্রণায় অঙ্কুরিত বীজ পঁচে গলে বিষাক্ত মৃত্যু উপতক্যায় পর্যবেশিত হচ্ছে অবহেলার কিশলয়ে।
জীর্ণতার স্তুপে নিমগ্ন নিষ্প্রাণ দেহ গুলো অসহ্য যন্ত্রণায় খর্ব করছে মুক্তির বার্তা।
হতভম্ব এ উত্তরণের সোনালী অধ্যায় অচিরেই পরিনত হচ্ছে ধ্বংস স্তুুপে।
কবে মিলবে পৃথিবীর মুক্তি…
রূঢ়, রুক্ষ, নিষ্প্রাণ পৃথিবীর বুকে কবে জ্বলবে পরিত্রাণের উদ্দীপ্ত বীজ।
যে মৃত্তিকার বুকে খুঁজে পেত সম্ভাবনার নব দিগন্ত…সে মৃত্তিকা আজ
প্রতীক্ষার দাবানলে পুড়িয়ে ফেলছে আগামীর পথচলা।
প্রসস্থির প্রতীক্ষা কে পিছনে ফেলে
বিষাক্ত রক্ত ক্ষয়ের উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে চলছে সম্ভাবনার নতুন দিগন্ত।
বীভৎস এ অন্ধ পারাবারে কবে দেখা দেবে দীর্ঘশ্বাসের পরিত্রাণ।
কষাঘাত
তোমাদের পৃথিবীর জঞ্জাল, খেটে খাওয়া অজপাড়া গায়ের চাষা ভুষা!
গায়ে বিশ্রী গন্ধ, উস্কো খুস্কো চুল, শৈল্পিক ভাষায় বলতে জানে না।
স্বঘোষিত ভদ্রলোকদের সাথে তুই তুকারি করে কথা বলে, নেই ভালো ভাষাজ্ঞান, অশালিন আচরন! ছি ছি ছি
লজ্জায় মুখ লুকোয় শহরের ইংরেজী স্কুলে পড়া ছেলে- মেয়েরা।
গেঁয়োদের আচরণে তাদের মাথা নিচু হয় ভদ্রপল্লিতে।
কিন্তু শহরের ভদ্রলোক -“তুমি যাকে ছোট বলে ঘৃনা কর,
যার স্পর্শ তোমার শরীরকে কলুসিত করে; সেই অশিক্ষিত ছোট লোকটাই
সকাল বেলা তোমার বাড়ির ময়লা ফেলে দেয়।
সে এলে সেই নিচু ছোট লোকটাকে বলে- “ভালো করে পরিস্কার করবি, একটু পরে এখনে বসেই আমি চা খাবো আর খরবের কাগজ পড়ব।
ছি ছি ছি!
বাইরে বেরিয়েছিস কি শ্রী নিয়ে! যাক গে ভালো করে পরিস্কার করিস।”
এই তো সমাজের নিচু তলার লোকদের প্রাপ্য সম্মান ! উঁচু তলার লোকদের দয়ার দানে পাওয়া তাদের উদর পূর্তি আর সারা দিন কাজ শেষে রাতের শান্তির ঘুম।
হে উঁচু তলার মানুৃষ কখনো কি চিন্তা কর -“তোমাদের এ আরাম আয়েশের খোরাক কে যোগায়?
তুমি যে দু’মুঠো অন্ন গ্রহণ কর তার উৎপাদন কে করে দেয়?
কে তোমার বাড়ির ময়লা পরিস্কার করে?
কে তোমার পায়ের জুতোর নোংরা পরিস্কার করে?
ভেবে দেখেছ কি একবার?
তাদেরই ঘামের বিন্দু বিন্দু ফোটায় তৈরী তোমার ইট পাথরের গড়া ইমারত; যাতে তুমি আরাম আয়েশ কর, ভোগ বিলাসে মত্ত হও !
যাদের গায়ের রক্তের বিনিময়ে তুমি পেয়েছ সৌখিন আবাস,
তাকেই তুমি দূরে ঠেলো, নোংরা বলে গালি দাও,
হায় রে সভ্যতা,
হায়রে মানবিকতার ফালতু লোক দেখানো মমতা,
এই তো জীবন,
এই তো নির্মমতার কষাঘাত,
নিয়তির দুর্বার নিয়ম!
যার পিঠে চেপে তুমি ওঠো উপরে তাকেই কর কষাঘাত!
তাদেরও সম্মান কর; যাদের রক্তের ঘামে ফলানো ফসল খেয়ে তুমিও বেঁচে আছো !
একবিংশের বিষাদ
আমি একুশ শতকে জন্মেছি,
একুশের চেতনা আমার বুকে!
দৃঢ় কঠিন সংকল্প আমি আমার হৃদয়ে জাগাই বারেবার,
আমি রুদ্ধ নই, আমি উন্মুক্ত!
আমি বন্ধী জীবনের বিপক্ষে চেতনা ধারন করি!
আমি বিদ্রোহ আমি, আমি ধ্বংস ডাকি–অবক্ষয়ের, আমি নব আশায় বুক বাঁধি, আমি প্রতীক্ষা করি নির্মল আগামীর।
কিন্তু একুশ শতকের এ দীপ্ত উল্লাসের বুকে এ কোন বিষাদ ছায়া,
এ কোন দুর্বার পরাশক্তি!
বিস্ময়ে হতভম্ভ আমার দু’চোখ, রুদ্ধ আমার বাকশক্তি!
আমি নীরবে অবলোকন করি সেই নির্মমতা!
এক দুর্বোধ্য অমানিশা আমার সম্মুখে,
নিবারনের পথ রুদ্ধ,
আমি অস্ত্রহীন, সঙ্গীহীন, নিথর!
পরিত্রাণের সেই দুর্বার পথে একাকী নিরাশার চাদরে আবদ্ধ!
আমি মুক্তির প্রতীক্ষায়!
অবকাশ নেই পরিবর্তনের,আছে শুধু ঘোর এক অন্ধকার,নিশ্চুপ প্রকৃতির নিষ্ঠুরতা!
একবিংশ শতাব্দীর এ শকতে ও আমি নিরুত্তর,আশা নেই,বিমূঢ়ের মত নিথর্ব হয়ে পড়ে আছি !
কবে দেখা দেবে সেই প্রত্যাশিত আলো, নির্মল সকাল, হতাশা বিহীন সোনালী স্বপ্ন।
সভ্যতার দিকে চেয়ে আছি…সুন্দর আগামীর পরিকল্পে, নির্জিবতার পরিত্রাণের সংকল্পে।
অসাধারণ❤️❤️❤️