গুচ্ছ কবিতা নওশাদ জামিল
নীল শাড়ি
যেখান থেকে যাত্রা শুরু করি
আবার আমি সেখানে আসি ফিরে
অনেক পথ পেরিয়ে এসে দেখি
ফেরার পথে কুহক আছে ঘিরে।
পাহাড় নদী পেরিয়ে মেঠোপথ
এসেছি ফিরে হৃদয় আহ্লাদে
অন্ধ ফুলে পরাগ ঢেলে দিয়ে
আবেগ ছাড়া কে আর পড়ে ফাঁদে?
পথের বাঁকে বাতাস ছেঁড়া মেঘ
উড়ল বুঝি আগুন হাতছানি
ধোঁয়ার রেখা মাড়িয়ে বহুদূর
পেলাম দেখা পরম ঝলকানি।
হৃদয় টানে আবার আসি ফিরে
ফেরার পথে কুহক ছড়াছড়ি
কুয়াশাজাল ছিন্ন করে দেখি
পথের বাঁকে উড়ছে নীল শাড়ি।
বাহুডোর
আড়াল থেকে অন্তরাল হয়ে
কাটছে দিন, নিঠুর ভালোবাসা
ধরতে যদি না পারো মনপাখি
উড়াল দেবে রইবে শুধু বাসা!
প্রান্ত ছেড়ে গহীনে উড়ে উড়ে
ভেসেছে ভেলা অচিন পরবাসে
ভাবনা নেই, কী এক বেদনায়
ছুটেছি আমি দূরের ভিনদেশে।
আগল খুলে উড়িয়ে দিয়ে মন
চলেছি আমি পাখনা মেলে দূরে
পারো তো ধরো আমাকে, ধরো দেখি
প্রগাঢ় টানে তোমার বাহুডোরে।
উড়াল থেকে আড়াল হয়ে যায়
পাল্টে যায় জীবন একদিন
ধরতে যদি না পারো মনপাখি
থাকবে না তো কষ্ট আর ঋণ।
মায়াজাল
রাত্রি হলে দীর্ঘ কেশপাশ
হঠাৎ জেগে দেখায় শুধু ছল
অন্ধকারে গন্ধ মেখে মেখে
উঠল জেগে সুপ্ত কোলাহল।
রক্ত নাচে, করোটি বলে শোন্
চুল তো নয় ক্ষণিক মায়াজাল
ঘোরের টানে ক্ষিপ্ত হয়ে বলি
আমার শুধু তৃষ্ণা চিরকাল!
রাতবিরাতে মাটির দানা ছুঁয়ে
গন্ধ খুঁজি, কেন্দ্র খুঁজি মূলে
উৎস থেকে গুঁড়িয়ে গেছে শিরা
খোঁপার ফুলে বাঁধন গেল খুলে!
উড়িয়ে চুল ছুটল কালো মেঘ
রেলিং খুলে তাকিয়ে থাকি দূরে
গন্ধ এসে আছড়ে পড়ে নাকে
খোঁপার ফুল তোমাকে মনে পড়ে!
মিহিব্যথা
আঁধার রাতে ঝিলিক দেখে ভাবি
আলোর রেখা ঝলসে উঠে পথে
আমাকে আজ প্রগাঢ় ভালোবেসে
মুগ্ধ হয়ে যাবে কি তুমি সাথে?
বৃষ্টি যদি সরিয়ে দেয় আজ
দেহের ধুলো, মন কি হবে সাদা?
বিষম স্রোতে ভাসছি ক্ষণে ক্ষণে
লাগছে কাদা, লাগছে চোখে ধাঁধা।
সন্ধ্যা ভালো, রাত্রি হলে জাগে
কুহক ঘেরা বিশাল লোকালয়
একলা আমি নেই তো পিছুটান
ছেড়েছি ঘর, ছেড়েছি সব ভয়।
আগুন নদী পেরিয়ে আমি দেখি
পেলাম কিছু নিগূঢ় হাসিকথা
আঁধার রাতে চোখের ঠারে ঠারে
উঠল জেগে বুকের মিহিব্যথা!