জোবায়ের মিলনের গুচ্ছ কবিতা
অপেক্ষায় নির্মম আগামী
অভিজাত এলাকা ছেড়ে আমরা
অচিরেই কেউ কেউ নেমে যাব শহর ঢালে
চলার মতো বাড়ি খুঁজব মাথা ঢাকতে
উপশহর ছেড়ে কেউ কেউ ঠাঁই নেব আরেকটু দূরে
কেউ কেউ আবার ফিরে যাব গ্রামে-
ফেলে আসা ঘরটা ঝাড়ফুঁক দিয়ে
সাজাব সংসার;
নতুন, ভিন্ন এক পৃথিবী আমাদের অপেক্ষায়;
নিদারুণকাল পর ভয়নক সত্য সেখানে
হবে নির্মম পরিহাস।
নামি স্কুল ছুটি দেবে না, বকেয়া বিল শোধে
রাঙাবে চোখ
কেউ কেউ পালাবে ভয়ে, ঋণে জর্জরিত হাত গুটিয়ে কেউ কেউ সন্তান-সম্মুখ থেকে
ছেটে নেব একটি, দুটি বছর
আরেক বিদ্যাপিঠে পাঠাব বই-খাতা
রোজের গোয়ালাকে বলে দেব, আর না।
বাজার সূচিতে উঠবে একটানা মশুরের ডাল;
অখাদ্য , রঙমরা ঘাসও
সব্জির বাজার নেবে দখলে
জলাজঙ্গলের সাঁতার জানা পোকারা
গরম তেলে হবে ভাজা
কেউ কেউ তিন থেকে দুই বেলা খেয়ে-দেয়ে
কৃত্রিম হাসি দিয়ে বানাবে জীবন রুটি
নতুন, ভিন্ন এক পৃথিবী আমাদের অপেক্ষায়;
নিদারুণকাল পর ভয়ানত সত্য সেখানে
হবে নির্মম পরিহাস ।
নাস্তার টেবিল, রক্তের ঝোল
ভালোবাসা ডিগবাজি খায়
ইদানিং,
পল্টি মারে দানে দানে তিন দান
চৈলাক্ত বাঁশ বেয়ে সেই পাটিগণিত!
ভালোবাসা ফুরিয়ে যায়
রুটি আর মদ পেলে।
চশমার ফাঁক গলে সালোয়ার-কামিজ
উঁচু দালান
মোটরসাইেল
বেচা-বিক্রি হয় দরকষাকষিতে,
ফুল আর ভ্রমর এ দু’ই চতুর-চালাক
কানামাছি ভোঁ ভোঁ, যারে পাবি তারে ছোঁ…
উঠান অঙ্গনে চলছে সঙ।
ভালোবাসা- নাস্তার টেবিল, রক্তের ঝোল;
ঘৃণা করি আজ একে সবচেয়ে বেশি।
বৃহদাংশই থেকে যায় দূরে
না জানলাম জীবনের ডান
না জানলাম বাঁম,
জীবনের সরবরে কত যে মাছ
না জানলাম তাহাদের নাম!
হোক ছোট, হোক বড়
অরণ্যে কত গাছ, কত লতা, কত গুল্ম
সামান্যই জানতে জানতে বেলা এলো ঢালে;
দিনের পান্ডুলিলি
আরও যদি হতো একটু দীর্ঘ
লম্বা যদি হতো সময় প্রতীক
হয়ত জানা যেত আরও একটু-
তবুও থেকে যেত বাকি;
বাকির জন্য আক্ষেপ
আহা! জীবনের বৃহদাংশই থেকে যায় দূরে
অচিন, অজানা অংশে।
শব্দ
তোমার
পায়ের নূপুর
ঘন্টাধ্বনি হয়ে ফেরে
সাড়ে পাঁচফিট দেহাভ্যন্তরে,
ঝাঁকিয়ে বয়ে যায়
সুরেলা স্বর;
ঘোরগ্রস্থ মেঘ
দৌড়য়
আকাশ সীমার তীরে
না ঝড়, না বৃষ্টি;
থমথমে হাওয়ার লিরিক
তুমি নেই
নূপুর বাজে
জলসা ঘর
কেউ নেই, নেই
কফিন কাফন
কটন, নোবান
কর্পুর-গন্ধ ভরপুর ওড়ে!
সাড়ে পাঁচফিট দেহ
টুকরো কয়লা
তোমার পায়ের
নূপুর শব্দে।