গুচ্ছ কবিতা চন্দনকৃষ্ণ পাল
তোমার দিনরাত্রি আমার ভাবনায়
না, আজকাল ওসব ভাবি না আর…।
অস্থির সূর্যাস্তের লাল আলো অন্ধকারে পর্যবসিত হবে
নবীণেরা ভাবে না তো- ভাবে না।
পূর্ণিমার পরই অমাবস্যা তার অন্ধকার জিভ নিয়ে আসে
চেটে নেয় সব আলো, সব-
শকুন শিশুর কান্না তখন বেড়েই চলে
আর ভয়াল ছবির ধারা চিত্র ক্রমশ নিস্ব করে তারার আলোকে।
না, আজকাল ও সব ভাবি না আর,
তুমি তো দুগ্ধফেননিভ শয্যায় শুয়েই আছো,
তোমার দিন-রাত্রি আজ আর আমিময় নয়!
অতএব….।
অচিন বনরূপা
শুয়ে থাকা রাস্তায় জল জমা নেই
নেই নাগরিক কোলাহল আজ এখানে ওখানে
পাতার শব্দও যেন কানে আসে সকাল সন্ধ্যায়
বিকেলও তার মতো শিশুতোষ খেলায় মাতে একা
নিরুদ্বিগ্ন সারাদিন কি কঠিন রোদ মেঘ
ছায়া নিয়ে আসে আর যায়
শুধু আমি নেই তার ছায়াতে এই দীর্ঘ সময়…
তাই তো চমকে উঠি এই বিকেলে
মায়াবী আলোয় গাঢ় সবুজ কাশবনে
দেখি বাতাসের তুমুল হুটোপুটি
বলে সময় নেই প্রিয়বর
ঐ দেখো শুভ্রতার জমানো সময়
ক্রমশ খুলছে পাখা নিজের মতোই
তাহলে নির্বাসন খুব দূূরে নেই!
সময়ের কাজটুকু করে যাই এসো…
এরপর আমরা শুধুই পথিক, দূরের টুকবো শাদা মেঘ…
শরণার্থী শিবির থেকে ফিরে
পোড়া মাটিতে দুফোটা জল মিশে যেতেই
এক লহমায় ব্রহ্মনাদে কেঁপে উঠলো পৃথিবী,
সাথে আমার পৃথিবীটাও।
তার পুরনো শরীরে তোমাদের পাপের ছাই স্থির হয়ে আছে
দগদগে ঘা হয়ে রেপ্টে আছে সেঁচে ফেলা পুকুর,
কান্ড থেকে কেটে নেয়া গাছ ও বাঁশঝাড়!
ছোট কামিনীর ঝোঁপটা ভয়ে শিরদাঁড়া বের করে তাকিয়ে আছে
শূন্য পুকুরটার পানে
ওরও ভয় কখন রান্নার চুলোয় তার শরীরটাও…।
তোদের পশু বলে গাল দিলে
পশুদের অপমান করা হয় বলেই আমি নিশ্চুপ থাকি
আমার ঘেন্না রাখার জায়গা নেই বলেই
উদয়াস্ত জ্বলে পুড়ে খাক হতে হতে
আজ উদভ্রান্ত আমার অবয়ব-
নিজেকেও নিজে চিনতে পারি না আর…
ঘোর লাগা চোখে বাংকার দেখি,ভাঙা রেলব্রীজ
আর বোমায় ধ্বংস হয়ে যাওয়া কালীবাড়ি দেখি-
আমার বাংলাদেশ শুধূ কাঁদে, সাথে আমার মা…।