গোলাম কিবরিয়া পিনু’র এক গুচ্ছ কবিতা
গল্পের ভেতর লুকানো গল্প
এখন কারো কারো মুখে
বাগানবাড়ির গল্প বেশ শুনতে হচ্ছে!
এত বাগানবাড়ি!
আগে বাড়ির সাথে বাগান থাকতো।
এখন শুধুই বাগানবাড়ি!
নতুন ফ্লাটের টাইলস লাগানোর গল্প
ঝাড়বাতির গল্প!
শোনায় সে, আসল গল্প বলে না-
গল্পের ভেতর লুকানো গল্পটাও বলে না!
বাগানবাড়িতে মাসে ক’বার যায়
কিংবা বছরে? সে কথাও বলে।
তার নতুন কেনা গাড়িতে
ঢাকা থেকে বাগানবাড়িতে যেতে কতক্ষণ লাগে
সে কথাটি বললেও-
সে বলে না- গাড়ির গতির চেয়ে দ্রুত
তার এতকিছু হলো কীভাবে?
না, সে কথাটা সে তুলতে চায় না
বলতে চায় না একদম!
বাগানবাড়িতে গিয়ে ফুলের ঘ্রাণ কীভাবে নেয়
পুকুর জলে দু’একটি মাছের লাফালাফি কীভাবে দেখে
-সেসব কথা বলতে সে স্বস্তি পায়;
শুধুই গল্পের ভেতর লুকানো গল্পটা সে বলে না!
যাদুকর হয়ে যাদুবাস্তবতার গল্পের বর্ণনা করতেও-
সে ইতস্তত করে-ভয়ে কাঁপে!
বেঁচে থাকা
জীবনকে পরিচর্যা করতে হয়, না হলে শ্যাওলা
জমে- তা পরিষ্কার করতে হয়, মরিচা পড়ে- তা
মুছতে হয়, জং ধরে- তাতে রঙ লাগাতে হয়,
আগাছায় ভরে যায়- তাতে নিড়ানি দিতে হয়।
বড় বন্যা এসে কখনো কখনো ধ্বসে ফেলতে
পারে- সেজন্য বাঁধও দিতে হয়। নিজের জীবনের
জন্য ভালোবাসা যত্ন করে বীজের মতন বপন
করে উদ্ভিদ ও ফসলে রূপান্তরিত করে- তীব্র
বরফের মধ্যে কষ্টের মধ্যে হাঁটতে হয়, আসে
সূর্যালোক-রৌদ্রালোক; অতঃপর যে তৃপ্তি
পাওয়া যায়- তা হাওয়ায় ময়ূয়ের নাচন তোলে,
সেই আনন্দটুকু নিয়ে বাঁচা, বেঁচে থাকা!
ক্ষমা
কিছুটা ক্ষমাশীল হও, খানিক অপমান সহ্য
করো, তোমার সম্মানের দিকে কিছু লোক
আঙুল তুলবেই, তোমার চলাপথে ধুলো
উড়াবেই- তাই বলে মদমত্ত হয়ে, জ্ঞানশূন্য
হয়ে গোঁয়ার-গোবিন্দ হয়ে উঠবে? নমনীয়
হও- গুরুত্ব না দিয়ে ধাপ থেকে ধাপে পা
রাখো মই ও সিঁড়ি কেঁপে উঠবে, তাতেই
হিংসুটে ও পরশ্রীকাতর লোকেরা আতর
মাখতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠবে!
বিশ্বাস
আমি তো প্রবল বিশ্বাসী হয়ে উঠেছিলাম তোমাতে
নদীর উদার প্রবহমানতা ছিল নিজের ভেতর
কী উদ্দীপনায় উদ্দীপ্ত হয়েছিলাম-
আত্মীয়-পরিজন ছেড়ে
উদীচীর দিকে যেতে যেতে
গিয়েছিলাম দূরবর্তী বনে-
বৃষ্টির ভেতর
অগ্নিপাতের ভেতর।
চোখ খোলার পরই দেখি
তোমার হাতেই ছুরি!
তুমি কি শিকার করবে? কোনো পশু?
তা পুড়িয়ে আমাকে উপহার দিবে?
ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত মুখে তুলে দিবে তা?
না, ভুল ভাঙল-
ব্যাগ থেকে ছুরি বের করেছো
আমাকেই হত্যা করবার জন্য-
আমি প্রতিরোধ করে বেঁচে গেলাম সেমুহূর্তে
একটা আঙুল কাটা গেল
শরীরও ক্ষত-বিক্ষত হলো
আমাকে উদ্ধার করলো শেষমেশ
বনের আদিম বাসিন্দা ক’জন!
আমি বেঁচে আছি- সেই দুঃস্বপ্ন নিয়ে
আগে বুঝিনি বিশ্বাসী কেউ হতে পারে হন্তারক
অভিরুচিতে অভিসন্ধি বোঝা যায় না-
তবু তো মানুষই- এক অপরের সাহায্য নিয়ে
একা বা একসাথে পর্বতের চূড়োয় উঠে!
তার সাথে কি আরও দৃশ্যকাব্য রচিত হবে?
অধরা
সবকিছু দেখা যায় না, আমার সবকিছু দেখতে
পাবে না! যেমন মহাবিশ্বের মাত্র চার শতাংশ গড়ে
উঠেছে দৃশ্যমান বস্তু দিয়ে, বাকী ছিয়ানব্বই
শতাংশ গঠিত অদৃশ্য-অধরা- রহস্যময় ডার্ক
ম্যাটার ও ডার্ক এনার্জি দিয়ে। তোমারও
সবকিছু দেখা যায় না, গোপন-অদৃশ্য-
অকথিত অনুক্ত- অউন্মোচিত ও অধরা থেকে
যায়! প্রেমিক জানে প্রেমিকাকে কতটুকু কিংবা
প্রেমিকা প্রেমিককে, অফিসের সহকর্মী যে
তোমাকে সমীহ করে বলে মনে হয়- সেও
ছোবল ও দংশন করার জন্য ভেতরে ভেতরে
তৈরি হয়ে আছে! বসন্তকালে ফোটা গোলাপি
ফুলও- মাদকে রূপান্তরিত হতে পারে।