জুননু রাইনের দশটি এয়া
আমারে নেবে তুমি মাটি?
জুননু রাইন
এয়া – ক
এই মাঠে যায়গা নেই
তবু প্রতিটি ডাকে
আকাশের বুক ছুঁয়ে
আমার পাখি ওড়ে
বর্ষণভরা শুকনো গাছের পাতা
তোমার নাম ধরে রাখে
দেখে, দেখায়…
পৃথিবীতে কে কখন
তাকিয়েছিল মানুষের দিকে।
এয়া – খ
তোমরা কোথায় কোথায় দেখা কর, আমি জানি না
রেললাইনের একা হাঁটা অবাঞ্ছিত গাছের সবুজ
তোমাদের গল্প রাখে?
পায়ে হাঁটা শ্রমিকের ঘামে ভেজা জোসনার পথে
তোমাদের কোন কথা কি লেগে আছে?
তোমাদের কোনো দেখা কখনও কি মাটিতে পড়ে?
অভিমানে, পেকে, ঝড়ে?
বৈশাখেরা বয়সে ভীষণ হলুদ হলে?
তোমরা কোথায় কোথায় দেখা কর, আমি তো জানি।
এয়া – গ
দিগন্তে, তোমার শূন্যে আঁকা করোটি
নিলো না আমাকে-
আমারে নেবে তুমি মাটি?
চোখে পাথরঝরা ভাঙা ভাঙা দিন
এখানে এসে ফোটে না কারও অশ্রু
প্রজাপতির ডানায় দূর-চেরা নীল।
এয়া – ঘ
তুমি জান না ইছামতি
যখন মানুষের পৃথিবীতে
এক হাঁটু সন্ধ্যা নামে
যখন সমুদ্র খালি পায়ে
হেঁটে হেঁটে বুকে আসে
বাসা বাঁধে- চোখে, দৃষ্টিতে
তখন, আমরা এক হয়ে
আমাদের অন্ধকারে-
আমাদের বারবার হারাই।
আমরা যে পাহাড়ের ফুল ফোটাতাম
যে পাখির গলায় গান তুলতাম
তারা এখনও ভোলেনি
ভোলেনি জীবনের গন্ধ।
ঢেউ তো অনেক এসেছে-
মানুষের বাঁধ ভেঙে গেছে
জোয়ারে ভেসে গেছে সেইসব কথা।
এয়া – ঙ
কাছের মানুষ দূর দিয়ে হেঁটে গেলে, কেমন লাগে-
আমি জানি, আমি জানি চোখ, আমি জানি মন
একবার তাকে দেখি আকাশে, আকাশ ফিরিয়ে দেয় না
একবার দেখি ফসলে, ফসলের মাঠ আমাকে চিনেনা
আমার মেঘে জঙ ধরেছে; তার এক ফোটাটিও নেই
আমার সাগর নদী খাল-বিল ছেয়ে আছে মরুভুমি
জানি দাবানল-
কাছের মানুষ দূর দিয়ে হেঁটে গেলে কেমন লাগে।
এয়া – চ
একটা বিকেল দাঁড়িয়ে আছে-
এককাপ চা, ভাঙা দোকান
শীতের ছাওনী, শিশিরের দড়জা
হিজল গাছের নীরবতা
ছোট নদীর মৃদু গল্পের ঢেউ
জোছনার মৃত কথা
ছড়িয় ছিটিয়ে আছে- চোখ
হাজার চোখের চাহনী
কোটি কোটি বছরের গন্ধ।
একটা বিকেল তোমার জন্য
দাঁড়িয়ে আছে-
এক কাপ চা হাতে।
এয়া – ছ
তোমার পাশে শুয়ে থাকব, মৃত্যুর পাশে শুয়ে থাকা লাশ
আমাকে তুমি খুঁজবে, আমি খুঁজব; আমরা সবাই খুঁজব
সেইসব সন্ধানে চোখ মেলে হারিয়ে থাকব।
এয়া – জ
ওজন বাড়ছে রাত্রিটার, এবং পিচ্ছিল স্যাঁতস্যাঁতে- কালোয় ধরা যাচ্ছে না, ছোঁয়াও যাচ্ছে না। এখন সে আমার জানালা, টেবিলে বসে থাকা, কোনো কথা না বলা এবং মৃদু পায়ে হাঁটা হয়ে আছে। চোখের দমগুলো কুড়োচ্ছে, বারান্দায় তার ঘনঘটা, একা পারছি না সরাতে- ছেঁড়া-পচা গন্ধমাখা রাত্রিটিকে।
ওজনটা বেড়েই চলেছে, পৃথিবীর। সমুদ্রের ঢেউয়ে তুমি এসে আমার চোখে পড়ছ। আমি কিছুই দেখছি না, চারদিকে মরা ফুল …।
এয়া – ঝ
মৃত ঘর মৃত বাড়ি- আমি আর তাকে দেখি না
ভূমিকম্প উড়ছে, উড়ছে ঝড়, উড়ছে জলোচ্ছ্বাস
সে কবর খুঁড়ে খুঁড়ে বেড়ে ওঠে- সবুজে ফসলে ফলে
ভালোবাসায় লাল জিপার এঁটে- হেঁটে যায় পাহাড়
গতসমুদ্রে হেঁটে যায়, হেঁটে যায়- জলের ফিকে পানি
পৃথিবীর নাকে মুখে চোখে- ক্লান্তি রেখে যায়, হেঁটে যায়
লতাগুল্ম- মানুষ বেয়ে বেয়ে ওঠে জীবনে, ফোটে, ফুল
মৃত ঘর মৃত বাড়ি- আমি আর তারে দেখি না…
এয়া – ঞ
তারপর, হাসতে হাসতে আলো এসে তোমার চোখে বিঁধল
তুমি কিছুই বলবে না, সে আলো, তোমার চোখ পৃথিবী দেখতে চায়।
ধর, তার কাছে হাসি- সৃষ্টি আর ধ্বংসের খুচরো সঞ্চয়
তোমার কাছে তার প্রতিটি শব্দ জন্মের ইতিহাস, জীবনের ঢেউ।
তারপর, হাসতে হাসতে তার পোষা রাত্রিটি এসে তোমাকে ধুয়ে দেয়
তুমি উঠে দাঁড়াও, হাঁটতে হাঁটতে তোমার হাঁটাগুলো
তার কাছে জমা রেখে দাও।
তারপর, হাসতে হাসতে তুমি আবার আলোর দিকে যাও
তখন আলো নিজেকে ফেরায়
আলো চোখ বন্ধ করে
আলো ঘুমায়
তারপর হাসতে হাসতে হাসি তোমাকে ফেলে রেখে
হাসতে হাসতে সময়ের হাত ধরে হারিয়ে যায়।
অসাধারণ দশটি কবিতা।