গুচ্ছ কবিতা- আফিয়া খানম রোমা
মোড়কবন্দি উপহার
অচেনা পথ ধরে হেঁটে গেছো সেই কবে
ভোরের আলোয় নিশ্চিহ্ন শিশিরের মতো
জানান দেওনি, তোমার বর্তমান ঠিকানা
অভ্যস্ত পঞ্জিকায় লাল বৃত্তে ভরাট দিন
সজাগ করিয়ে দেয়, আজ তোমার জন্মদিন।
শহর তন্নতন্ন করে, যোগাড় করেছি শাপলা শালুক
তল্লাট হানা দিয়ে,এনেছি এক বয়াম জোনাকির দল
মুঠো মুঠো রোদ কিনেছি পাল্টে যাওয়া ঋতুর দামে
সুতোয় গেঁথেছি মুক্তোর তসবিহ তোমার ডাক নামে
ঠিকানার অভাবে, মোড়কবন্দি উপহার।
সে অসুখে-
দূর অজানাতে উড়াই চিঠি ভর্তি রঙিন বেলুন।
যতনে অযতন
ভোরের শিশিরে স্নান
আর নুয়ে পড়া বিকেলে
পা ডুবিয়ে বসা হয়নি, নরম ঘাসে।
যদি অকালে মরণ হয় ঐ শিশিরের!
অযথা ঘোরাঘুরি কিংবা কথার ফুলঝুরি
দিয়ে গাঁথিনি মালা, যদি সময় চলে যায়
সেই পরাভয়ে।
অথচ অবচেতন মস্তিষ্কে লালন করেছি,
কত বেহিসেবী জমিনের ফসল।
যার পেটপুরে রয়েছে, ঢের সময়।
বসলাম অংক কষতে পরীক্ষার কক্ষে
ভাবখানা এমন এবার ফার্স্ট ক্লাস পাবোই।
অতঃপর যা ঘটল!
এতো খসড়া করলাম যে, শেষমেশ
নিষ্পাপ অংকটার স্থান হলো না
সাদা কাগজে!
আশায় বারো মাস
ফাগুনের আগুনকে চাপা দিয়ে রেখেছি,
চৈত্রের খাঁ খাঁ রোদ্দুরেও
নিজেকে মানিয়ে নিয়েছি
নববর্ষের বৃষ্টিতে ভিজবো বলে।
বৃষ্টির বদলে কাল বৈশাখী ঝড়
কেড়ে নিল ছোট্ট কুঁড়ে ঘর।
বর্ষার আগেই পেলাম বৃষ্টির দর্শন
ভরার নদীর বেগবান ঢেউ
বিষিয়ে তুলল জীবন।
শরতের শিউলির দেখা মেলল না।
তাও আশায় ছিলাম-
নবান্নের উৎসবে মাতবো বলে।
হেমন্তের নেমন্তন্নের আগেই শয্যাশায়ী।
তারপরও আশাকে ছাড়ি নি
ভোরের শিশিরে পা ভেজাবো বলে
কিন্তু অকালে পঙ্গু হলাম…
ব্যথা
হরেক রকম ব্যথা বয়ে বেড়াচ্ছি রোজ
হন্যে হয়ে এক চিলতে সুখের করছি খোঁজ।
চশমার ফ্রেমে, কাঁধে ঝোলানো ব্যাগে
ফুটপাতে চায়ের কেটলি ক’রে হাঁটছে ব্যথা।
ট্রাফিক জ্যামে অক্সিজেনের বোতলসহ আটকে আছে,
পুলিশের হুইসেলে সব্জির ভ্যানে দৌড়াচ্ছে ব্যথা ।
ট্রেনের বগিতে বগিতে-
ইস্টিশনের মেঝেতে ঘুমানো ঐ পাগলিরটার পেটেও
নষ্ট পুরুষের খায়েস মেটানোর
ওহ! ভয়ানক ব্যথা ।
ঐ পাড়ার বস্তিতে কানায় কানায় ভর্তি ব্যথা
ছেলেটার ছেঁড়া শার্টে
ভদ্রলোকের দামি স্যুটের আড়ালেও।
বুকের বাম পাঁজরে
উহ! কী প্রচন্ড ব্যথা ।