সৈয়দ নূরুল আলম- এর কবিতা
ঘরে ঘরে বোশেখ
ঘরে ঘরে বোশেখ, বোশেখে ভিন্নতার ছোঁয়া
দিনটি আনন্দ উচ্ছ্বাসে কাটাতে ব্যস্ত নারী-পুরুষ
শিশু-কিশোর, কাগজ কুড়ানী, সব বয়সী মানুষ ৷
সকালে পান্তা খাওয়ার রেয়াজ সে বহুদিনের
কড় কড়ে ইলিশ ভাজা, শুকনা মরিচ পোড়া, শুঁটকি ভর্তা, চাক চাক পেয়াজ কাটা,
বেগুন ভর্তা, জিহ্বা লাল করা মরিচ পোড়া ভর্তা
নানা পদের ব্যন্জনার যোগ খাবারের পাতে ৷
হঠাৎ বৈশাখী ভাতায় সচল হয় স্থবির অর্থনীতি
একদিনের জন্য হলেও ভুলে যায় সবাই
তথ্য-উপাত্তে কতো গড়মিল দেশে-সংসারে।
৩২ নম্বর বাড়ি অথবা ধানমন্ডি লেক
আগন্তুক খোঁজে ৩২ নম্বর বাড়ি
অথবা ধানমন্ডি লেক
কিন্তু কোথায় ৩২ নম্বর বাড়ি
বা ধানমন্ডি লেক
একটিও খুজে পায় না
গোপালগঞ্জ-কাশিয়ানি-চাপ্তা নিবাসী
বৃদ্ধ জহুর আলি।
চাপ্তা বাজারে মতির চায়ের দোকানে
চা খেতে খেতে জহুর আলি জেনেছিলেন
ধানমন্ডি লেকেরপশ্চিম পাড়ে
৩২ নম্বর বাড়িতে শেখের বেটা থাকে
লেক আর বাড়ি,একটা পেলে
আরেকটা পেতে কষ্ট হবে না।
তাই শেখের বেটাকে এক নজর দেখতে
জহুর আলি অরফে সানা মীর
চাপ্তা থেকে ছুটে এসেছে এই ঢাকা শহরে।
যদিও জহুর আলির একটা চোখ গেছে অনেক আগে
আরেকটা যাই যাই করছে।
একানব্বই বছর সাত মাস বয়সী
জহুর আলি অরফে সানা মীর
ঘোনাপাড়া থেকে মধুমতি পরিবহনে
গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে এসে নামে
গন্তব্য ৩২ নম্বর বাড়ি অথবা ধানমন্ডি লেক।
রাসেল স্কয়ারে এসে
জহুর আলি অরফে সানা মীর
ঠায় দাড়িয়ে থাকে, লেকে পানি কোথায়?
শুধু রক্ত আর রক্ত।
৩২ নম্বর বাড়ি থেকে আসা
এ রক্তে সর পড়ে আছে
যেমন জহুর আলির কালো গাইয়ের
সদ্য জ্বালানো দুধে
মোটা সর পড়ে থাকে।
বঙ্গবন্ধু ও একটি বটগাছ
বেঁচে থাকলে আজ তোমার বয়স হতো ৯৯ বছর
আমাদের গ্রামে কবু বাজারের বট গাছটার বয়সও ৯৯ বছর
দাদা মরহুম সৈয়দ ফাজেল আলী এ গাছটা রোপন করেছিলেন
১৯২০ সালে ১৭ মার্চ। গাছটা আছে আর তুমি না থেকেও আছো
কবু বাজারের ৯৯টি দোকান, বাঁশের বেড়া, ছোনের ছাওয়া চাল
ঢেকে রেখেছে বটগাছের ৯৯ টি শাখা-প্রশাখা। আর তুমি
ছায়া দিয়ে রেখেছো ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের ১৮ কোটি
মানুষের মাথা। তুমিই তাবত মানুষের ভরসার জায়গা।
সময় দীর্ঘ হচ্ছে, ক্রমান্বয়ে তুমি ছাড়িয়ে যাচ্ছো বটগাছ
কবু বাজার, দেশ, আন্তর্জাতিক পরিমন্ডলের সীমানা।
তার জন্য তোমাকে পাড়ি দিতে হয়েছে দীর্ঘ পথ
যে পথের বেশির ভাগই ছিল বন্ধুর। রক্তক্ষরণে ভরপুর।
তবু তুমি থামোনি। কারণ তুমি থামতে শেখোনি।
আগস্ট এলেই বুক কাঁপে
কবি পরিচিতি পড়তে যেয়ে, কিছুতেই মনে থাকে না কবি জন্ম -মৃত্যু
এক কবির মধ্যে ঢুকে যায় আরেক কবি।
হঠাৎ সাত ও ঊনত্রিশ আগষ্ট
রবীন্দ্র-নজরুলের মৃত্যু মাসের মিল খুঁজে পেয়ে , আগষ্ট মনে গেঁথে যায় ।
এর পর পনের আগষ্ট ঊনশ’ পচাত্তর,
একুশে আগস্ট দু’হাজার চার
সতের আগস্ট দু’হাজার পাঁচ-রক্ত ছোটে,পাখি উড়ে, সবুজ ফালি হয় নৃশংসতায় ।
এ-ভাবে রচিত হয় বাংলার দিনপঞ্জিতে আগস্টের করুন ইতিহাস।
তাই আগস্ট এলে বুক কাঁপে, হৃদস্পন্দন বাড়ে, আগামীতে কখন কী হয় ।