মোহাম্মদ রফিক- এর কবিতা
একটি অনুনয়
এই যে চলবে গালিব, কোনো আফশোস
কি রয়ে গেল
না, তব, আতরে ও কাফনে এই যে টানাটানি
এর কোনো সুরাহা হল না,
সম্পর্ক হল না শেয়ালে বা মৃত মানুষে
কোনো আহার কখনোই যথেষ্ট নয়
ক্ষুধার্তের জন্যে।
পারাবার
শব্দবর্ণ গায়ে-গায়ে যদি মৃত্যুগন্ধ লেগে থাকে,
যেন কোন পাষাণপুরীর হিমপাথর পাথার খসে নামছে ঢেউ,
কাগজি-লেবুর গন্ধে-ঘ্রাণে হাওয়া চনমন বেশরম পাতা
শিরশির আকাশ উলটে খোসা ছাড়ছে পদ্মনালি সাপ;
এইবার চিতা-চন্দনের সামগান গেয়ে ওঠে মাটির মাজার!
যেন যেখান থেকে গল্পের ইতি
যেন জেগে উঠেছে একটি কবর
তার ওপর দিয়ে বয়ে চলেছে কীর্তিনাশার ঢেউ
যেন সবুজ ঘোড়ার পাথার জুড়ে খুটে খায় গুষ্ঠিসুদ্ধ কাক
এখনই পাখা মেলবে গোটা একটা জনপদ
যেন রুপোর খাটে সোনার পিদিম আাকাশ থেকে মাটি
নটেশাকের জিয়লপাতার কাফনমোড়া এক সহস্র শব
যেন হাসি ভাঙছে শ্বেতপাথরের মহল ছুঁয়ে অমাবস্যার চাঁদ
ডাইনি বুড়ির পাহাড় ধসে ডুবে মরল সাত সাগরের জল
যেন সব পরানকথা শ্মশান-শুনশান গজিয়ে উঠেছে
ঘাস
স্বপ্ন দেখে এক মোহনায় খাবি খাচ্ছে বলেশ্বর আর মধুমতির চর!
ধাঁধা
জল বলে : মাটি, তোকে খাব!
রোদ বলে : জল দাঁড়া, তোকে দেখাচ্ছি মজা!
মাঝখানে অষ্টমবর্ষীয়া বালিকার শব কলাপাতা মোড়া,
ভাবে, এ-যে দেখছি এক মস্ত বড় ধাঁধা!
আষাঢ়স্য প্রথম দিবসে
ফের উড়ে এসে দুদুটো বাকবকুম পায়রা
তোমার লেপামোছা উঠোন জুড়ে শুরু করল রঙঢঙ বিশ্রম্ভালাপ
যেন আঁচল সরিয়ে খোলা-বুকে আসমানি খেলায় মেতেছে
দুই খণ্ড ভিনদেশি জলভারানত মেঘ,
এমনই দেমাক, তাই হাত বাড়ালাম ছুঁয়ে দেখব বলে,
কে ভেবেছিল, দুই-দুটো সূর্য উঠে বসবে হাতের তালুতে!
চোখ
একটি ঢেউ ভাঙছে দুপাশে চোখ
দুটি চোখ বেরিয়ে আসছে একটি ঢেউ
নৌকোর গলুইয়ে লেগে চোখ
দাঁড়ের আগায় বিঁধে চোখ
আছড়ায় সহস্র চোখ একটি মাত্র ঢেউ
স্রোতের ভিতর দিয়ে আলোরশ্মি এই চোখ
নির-নিরান্তর কাঁপছে বরগুনা থেকে শ্রীপুর
বানভাসি আদিগন্ত ভোর!