কবিতা

শিহাব শাহরিয়ার- এর কবিতা

সূত্রসুতা

আমাদের ঘুমগুলো নির্ঘুম হলে
প্রাতঃভ্রমণ থেকে আমরা চোখ ফিরাই

নদীর পিঠে জন্মদাগ দেখা দিলে
স্বাভাবিক সূত্রের সুতো ক্রমশ বদলাই

মাঠভরা চোখগুলো চুম্বকের চোখ করি
নদীতীরে গাবগাছ হয়ে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়াই

প্রৌঢ়সুতা

নিদ্রার ভিতর পড়ে থাক
কয়েকটি প্রৌঢ়রাত
স্টেশনের পিছনে পড়ে থাকে
কয়েকটি দুঃখরাত

আমি মেঘের মন্দিরে ঢুকে যাই
তোমার সৌন্দর্য নিয়ে
আমি একাই গদ্যের ঘ্রাণ খুঁজি
তোমার সিন্ধু গিয়ে

আমি তোমার অনুভবের পাথরে
ছনের গুচ্ছগ্রাম বানাবো
আমি একটি প্রবেশ পথের জন্য
বুকের পাঁজর ভাঙবো

কফিভরা মগগুলো বারান্দায় বিতর্কে লিপ্ত থাকে থাকুক
তবুও তুমি বুকের দুপুরে বাড়িয়ে দিও ব্যাথার দুপুর পাকুক

সময়সুতো

কেউ যদি নাড়িয়ে দেয় মিঠে রোদ
আমি রাঙিয়ে দিবো তোমার দুপুর

কেউ যদি তুলসি পাতায় হাত রাখে
আমি বানানো কৃষ্ণচূড়া রঙের নুপুর

কেউ যদি ঢেলেও দেয় সমগ্র সময়
আমি অশ্বারোহী হয়ে ঘুরবো ভূ-ময় ।

স্বপ্নতত্ত্ব

একদিন পাখিদের গায়ে ছিল বসন্তের হাওয়া
একদিন পাখিরা ভেসে ভেসে গিয়েছিল হাওরের জলে

একদিন আমরা শামুকের মতো বুঝেছিলাম ডাঙার মর্ম
একদিন আমরা বেছে নিয়েছিলাম রোদের কিশোরী শরীর

একদিন তারা খুঁজে পেয়েছিল ভূগোল ও মানচিত্রের পার্থক্য
একদিন তারা সীমান্তের কাছে জল ফেলেছিল ঝুলন্ত ফেলানির চোখে

একদিন রমণীরা ঘুমগুলো গচ্ছিত রেখেছিল ধানের ডুলিতে
একদিন রমণীরা হাঁসের মতো জলকেলিতে মেতেছিল পুকুরের স্বপ্নজলে ।

বালকতত্ত্ব

উঠোনের ওম নিয়েছিল পিসিমার সাদা শাড়ি
আমাদের বালকঘরে হেঁটেছিল কিশোরী ঘুঙুর
মাটির মেঝেতে উড়েছিল মর্মবেদনার ভস্মছাই

চুলা জ্বালাবার কৌশল শেখার দিন শেষ হয়ে গেলে
আমরা আবার নতুন করে জাংলার পাশে রোদ পোহাই
তাকায় নদীর তলায়- দেখি বালিগুলো কীভাবে ধাক্কা খায়,

আমাদের মাথার কাছেও পড়েছিল বটের বয়েসি পাতা
আমাদের চোখের কোণেও লেগেছিল সরিষার হলুদ রং

কিন্তু আজ শব্দ-দূষণ নিয়ে বেদনার্ত মনে ফিরে যাই, যাচ্ছি
আমাদের পথে পড়েছে পাহাড়ের ছায়া- তবুও হাঁটি সেদিকেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *