গুচ্ছ কবিতা শাহমুব জুয়েল
কবিতার রিমান্ড
কী সব কবিতা? মেদ ভূড়িতে স্তুপী কবিতা
পাঠক পেটুক বলছে দায়হীন কবিও
ছবি ছবি ছবি বলে আর্তনাদ করছে।
পঙ্গু ইতিহাস, ঐতিহ্য হলো রসদহীন
সময়ক্ষীণ, পরিচয় পরিবেশভেদে
এক একটা শব্দের পাহাড় গড়ে উঠছে
সিঁড়িভাঙ্গা পথে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটছে
যে ক’জন কাব্যপ্রেমিক আছে ।
কালো এবং শাদাপালকহীন মাঠে
কবিদের হাট বসেছে পদক পাদুকের যোগান চলছে
সিন্ডিকেট সভায় সারি সারি হেলানো চাদরে দামী দামী মুখ
পোষা পালকেরাও কবি
ঘাটে ঘাটে পালিশ ভাই মালিশ
যতিহীন ভাঁদরামো চলছে।
রবীন্দ্র নজরুল জীবনানন্দ, নির্মলেন্দু গুণ আর
নবাব থেকে জনকের মুখ কবিতা ছিলো
হেঁটে হেঁটে দেখবে সহজ সরল অপরাধহীন পথ
কয়েদখানা থেকে বেরিয়ে আসছে কবিতার শ্রমিক
পাঠকের সামনে পরিচ্ছন্ন মাঠে
মুক্ত কবিতার রিমান্ড চলছে।
বিজয়, জমানো বিশ্বাস
রোপিত বৃক্ষের তলে ভরসা রেখেই হাঁটি আমি
মাটি দ্যাখি, অক্ষত চেতনা কয় স্বপ্নের কাহন
শিকড় ও পাতার করতালে ভাঙ্গে ঝোঁপের কিনার
সঙ্গত কারনেই জন্মগত টান আমার, তাই নামি
কলম ও কাগজের ভাঁজে ভাঁজে কবিতা দাঁড়ায়
সিঁথানে কাঁচা কাঁচা শরীর দু’রঙ্গা পতাকা উড়ায়।
রক্ত ও ঘামে ভেজা ঘাসে জমে চলছে দূরপথ
নদী ও সমুদ্রে বহে আদায়ের পরচা; স্বাদে পরান
গানে ও গণে শেখ মুজিব জয় বাংলা শিরোনাম
শস্য ও শিল্পের কাঁথায় মুড়ানো – মন যেন
নির্ভয় আকাশ; কার্ণিশে গড়ে উঠছে মিহি রথ।
চা কাপের ঠুনকো ঝড়ে, অলিতে গলিতে, পাড়া
মহল্লায়- দীর্ঘ আড্ডায় পাল্টেছে দু:খের জলজ
মুক্ত দৌঁড়ে যুক্ত কাঁধে ভাব অবিরাম আমারই দ্যাশ
এই যে ভাস্বরিত অক্ষরচিহৃ দেখছেন শশব্যস্ত টেবিল
লালটিপ পরে সবুজের ভেতর দিয়ে যাচ্ছে কিশোরী
বোগলে চেপে বই শরসে মাঠ ফেরিয়ে চলছে কিশোর
এই যে হাঁটছেন, কথা কইছেন রাজনীতি করছেন
প্রণতি জানিয়ে লিখছো নিজের কথা ও জীবনের ঘ্রাণ
ভেবে দ্যাখো ধীরচিত্তে, এ তো –
নয়ে’র গহীন থেকে বেরিয়ে আসা রক্ত ও সবুজ জমিন।
শতসহস্র সময় বিনিয়ে প্রবাহিত পথে জ্বলে বিজয় রঙ্গ
স্রোতের চক্রে সাঁতার দিয়ে ক্রমাগত যৈবনিক সঙ্গ
শিরায় দীপ্ত ধ্বনিময় জোয়ান তুমি ক্যামনে দূরে রও
সৃজিয়ান হও, চপ চপে মাঠের ভেতরে শস্য করো চাষ
দায় বিজয়ের জাগাও জাগাও আরও জমানো বিশ্বাস।
হলদে-হেমন্তদিনে
শশীর পূর্বে উঠে ডাহুক – শালিকের উদাসী রাগ দৌড়ে যায়, মাঠ মাটির শিয়রে
সোনালী হলদে পালক নড়ে ওঠে
শিশিরের মাখনে নুয়ে পড়ে শীষনথ
ঘোমটে বধুর নথ গায়ের গন্ধ গামছার সুতোয়
এঁটে যায় হৃদয়মাঠ থেকে হলদেমাঠের ওধারে।
ক্ষণে যদি শাশুড়ী -ননদ ক্ষেপে গেছে ঝাটায়
সে নেই বোল দেবে, আল ধরেছে,হলদে শীষ পাড়ায়। গাল পড়েছে, গাল পড়েছে
আবেগী বিছানায়-
কাঁচুমাচু চেহারায়-
থমথম
উড়ছে শীতল হাওয়ায়।কেউ নেই হলদের অধরায়, ঐদিকে খিঁচে
আলকাঁচির নিমেষে ধূ ধূ মাঠ ঝুঁকে যায়
–হলদে আঁচল ধূসর হয়ে ওঠে,হলদে মাঠের মাড়ায়।।
পুরোনোদের হই-হুল্লোড়, পাকামো বুলি আমরাও ছিলাম হলদে নারীর মতো।
বধু নয় কৃষাণী গো কৃষাণী,ধরো হাতমুঠো ধানআঁটি,চাঙ তোলো মাড়াইয়ের ওধারে
থপাস থপাস পা নড়ুক নড়ুক তার বুকে
হুর হুর করে ছড়াক হলদে রঙের খাড়ি।
খড়কুটো আর হলদে স্ত‚পে লেগে থাকা কৃষিশ্রমে
সঞ্চিত হোক শুন্য পারা চুলোঘর এবং গোলাঘর
সুখনিহিত পরাণ ভরে তাড়াক আধানি বছর-
হলদে বদন ঘামুক -ঘামুক -ঘামুক হলদে মাঠের শীষে দানায়।
এই শুনো…
কতদিন তোমার নিরবতার অভাবে জেগে আছি
তুমি ফিরবে তো?
শরৎ জোৎস্নায় দুরবনে কাঁশফুলের আদুরে ডাক; অতিথির মত, যদি ফিরো
ঠোঁট বকের মত লাফিয়ে লাফিয়ে চঞ্চুদিয়ে শিকার করিও আহ্লাদী মন।
জমাজলে জোড়হাঁসের চিউর দেখে দেখে
গুচিয়ে নিও সাদাপথের কিনার।
অনুভবের দ্বার খুলে দেবো হৃদচন্দন
হেমন্তের আলে নুয়েপড়া শীষরেনু মেখে
জুড়ে দেবো হলদে শাড়ি, কৃষকের মত সাজাবো ঘর
ধীরে ধীরে হৃদে জমে যাবে বিন্দু বিন্দু জল
থরথরে রাতের কাছায় মুড়ে দেবো কাঁথা আর বালিশ
বসন্ত হাওয়ায় দোল খেয়ে খেয়ে পরাগরেনুতে ভরে দেবো উদোম রাতের মাঠ।
রোদ্দুর দুপুরের মত যখন খাঁ খাঁ করবে তৃষিত মন
ঘাম ঝরে ক্লান্তস্বরে ডাকবে বৈকালীন হাওয়ায়
মেঘ প্রকৃতি ভারি হবে, নুয়ে যাবে প্রাণ
রিমঝিম বৃষ্টিজলে অবসন্ন গুচিয়ে ভেজা শরীরে লেপটে
ভালোবাসতে বাসতে-
একদিন; আগে পরে নয়
যুগ্নমনের দাঁড় টেনে টেনে পাল উড়াবো পাড়ি দেবো অচিনদেশে…