কবিতা

গুচ্ছ কবিতা তানিয়া হাসান


ঠান্ডা অভিনয়

বালিসের নিচে দেশলাই রেখে কাঠি খুঁজি ভাবিসাহেবার বারান্দায়,
গোসলঘরে গরম জল
ঠান্ডা ঠান্ডা অভিনয়!
প্রাতপ্রার্থনায় চন্দ্রমুখীর লাল শাল
চাইলে খুব বেশি পাপ হবে না—
তবু আপেল চাইতে পেয়ারার ডালে পা দুলিয়ে কাঠবিড়ালের নখ কাটি,
হুলো বিড়ালের সাথে বন্ধুত্বটা না জমার ব্যাথায়।
ডগিটা বলেছিলো সে মরিচের কাঙ্গাল
ডগি এখন ঝাল পছন্দ করে না
শিয়ালটা কিন্তু রাগ ভাঙ্গাতে অদক্ষ
তারপরও সব অভিমান চশমার ফ্রেমে,
আকাশকে এড়িয়ে একটু নীল দিয়েছিলো টুনটুনি
বাগান নিয়েছিলো নিজ পায়ের উপরেই দাঁড়িয়ে।
আতুরে শিশুর ঘুমের ঘোরে কান্নাহাসি
খেলার পবিত্র ঘ্রাণ
কাকের নাকে পৌঁছায় না
তবু ঘোর বাসা বাঁধে ঝাকড়া চুলে
সোয়েটার হীন মাঘের সকালে,
গেস্ট বার্ডের বাস সমুদ্রের ওপারে
সে কথা মোটেও ভুলে যাওয়া যাবে না…

অনিশ্চয়তায় আস্থা

কাঙ্ক্ষিত ঠিকানা হতে লাল খাম এসে
ভরে যাচ্ছে ডাক বাক্স
সাহস হয়নি একটি খামও খুলে দেখার
অভিমান, ভালোবাসা, আশায় বা ভয়ে নয়
ভৎসনার আশংকায়,
সকল আস্থা দখল করেছে অনিশ্চয়তায়!
অন্তগামী বৃষ্টির স্রোত বহে প্রতি লোহিত কনায়
মোনালিসার ঠোঁটে গচ্ছিত রেখে বাস্তবতা
জোসনায় পুড়ে দৃষ্টি হিম নেশায়
লাশের পাশে দাঁড়িয়েও হাসে,
ঘুম চেষ্টা রাতে
ধৈর্যও অধৈর্য্যের সীমা পেরোয়।
এখন প্রায়শই খুঁজি এক স্থির ঠিকানা
চাঁদের আভা সূর্যে ঝলকের অন্তরালে
ঘোষণা করি নিভৃত আত্মযুদ্ধ।
আবেগের দোহাই দিয়ে ভুলবসন্তকে আমন্ত্রণ জানানোর সাধ্য আমার নাই, ক্ষয়ে যাওয়া ঠোঁটে আবৃত্তি করি মাত্রাহীন কবিতা…

হারিয়ে খুঁজি

চৌকাঠের ভাঁজে ভাঁজে নাট্যমঞ্চ
কাজলের আড়ালে কত কাহিনী।
আটার খামিরে বেলুন ঘুরিয়ে ভূগোল দেখি
চাটনির ঘনত্বে দেখি প্রজ্ঞাতত্ত্ব
ঘুরেফিরেই আমাতে দেখি শূন্য পরমাণু;
আর কবি আমায় কবিতা লেখতে বলো!

কবিতার উনুনে স্বপ্ন পুড়িয়ে
আমি বৃত্তে স্নান করি
আর গর্তে গর্তে হোচট খেয়ে-
খেলা করি সুরঙ্গের গতরে।
নোনার স্রোতে কান্না ভাসিয়ে
নিলামে তুলি হাসি।

নতুন কবিতার রসদ যুগাই
ক্ষণে ক্ষণেই তোমার কলমে,
নিজেকে যেথায় হারিয়ে খুঁজি
বিশ্ব চিনিবো কেমনে!
কবি আমায় জোসনা দেখাতে চাও?
শ্রাবণের তাঁরাভরা আকাশ আমার
নৈতিকতার করিডোরে
অহংভাবপূর্ন অভিমান যেথায় নিত্য জ্বলে নিভে।

আড়ালের জগতে আমরা

আমাদের অদৃশ্য ভালোবাসা ঘর আছে
শিশিরের ছাওনিতে..
আছে চৌকাঠহীন দরজা
টেবিলের উপর বোবা রেডিও বাজে
টক মিষ্টি কথার রান্না হয়।
আত্মতুষ্টির ঢেকুর তুলে,
তবে আমরা প্রেমভোজী নই!
আমাদের বাগানে হাসির ফুল ফুটে
গাছ ভরা ডাসা ডাসা সুখ
মনপুকুরে কাম জলে পরিপূর্ণ
শুধু ছুয়ে দেওয়াই বারন।
আমরা থাকি আমাদের আড়ালে…
এটা তোমার আপত্তিটুকু ঠিক করে দাও

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *