গুচ্ছ কবিতা নুসরাত রীপা
বিরহবেলা
কার্তিক পেরিয়ে গেলে
নেমে আসে শীতের বিকেল
বিষন্ন সোনালী রোদ নুয়ে পড়ে নারকেল বিথীর পাশে
সাদা উঠোন জুড়ে শুকোতে দেয়া শষ্য দানায়
কাপড় শুকানো তারে দোল খায় খয়েরী কবুতর
চড়ুই এর খুঁনসুটি ভেসে আসে বাঁশবন থেকে
শীত বাতাসের সাথে
দু’চারটে সজনে পাতা ঝরে যায় দীর্ঘশ্বাস হয়ে
শূণ্যতা ছড়িয়ে যায় কিশোরীর বিরহী আঁচলে
মোবাইলে চ্যাট বক্স বার বার চেক করে মেয়ে
চোখ ভরে জল আসে
ব্লক সেই আইডিটা- একদিন” ভালোবাসি” বলেছিলো যে!!
ভালো থেকো
বললেই কি ভালো থাকা যায়?
তুমি রোজ বলো-ভালো থেকো
অথচ কী করে ভালো থাকি বলোতো?
রক্ত পিপাসু হয়েনারা চারিদিকে
ঘন কুঁয়াশার পর্দার অপর পাশে সতত
মৃত্যু অপেক্ষমান
পার্থিব স্বার্থে পিতামাতার হৃদয় হতে জান্নাত
চলে গেছে শব্দের ওপারে
স্নেহ আজ টুপটুপ করে ঝরে ধারালো ছুরি,চাপাতি, দড়ি আর বিষের পেয়ালায়—
কী করে ভালো থাকি যখন এসিড পোড়ায় গোলাপ?
অসহায় অচল পিতা মাতা সন্তানের মঙ্গল কামনায় প্রার্থনা করে ফুটপাতে, ভিক্ষার থালা হাতে অথবা বৃদ্ধাশ্রমের দরজায় ফেলে রাখে ধূসর আকাঙ্ক্ষা-
রেস্তোরাঁর সুবাসিত হাওয়া দূষিত ধূলোর রাজপথে ছুটোছুটি করে আর ফুটপাতে অভূক্ত কিশোরীর নাকে এসে খিলখিল হাসে?
ময়লার স্তুপের পাশে আধখাওয়া চকোলেট পেয়ে
বিশ্বযুদ্ধের মহড়ায় নামে উদোম শিশুরা —
আমি তো এরই মাঝে ডুবে ডুবে ঝলসাই রাত্রে ও দিনে বিন্দু বিন্দু করে অসহায়ত্বের অনলে
আরো নৃশংস কিছু শোনার জন্য ভয়ার্ত অপেক্ষায় থাকি।
আমি কী করে ভালো থাকি?
কড়চা
অবসর কোথায় আর?
সকাল সন্ধ্যা অফিস
ঘর সামলানো,বাজার হাট
উৎসব-পার্বণ-সামাজিকতা
সপ্তাহের সাতটা দিন টানা ব্যস্ততা
একটু যে নিবিড় মনে সাঁতরাবো
ভাবনার জলে
অবসর মেলেই না মোটে–
রাত্তিরে ঘুমোবার জন্য বালিশে মাথা রেখে
একটু যে বলবো-আহ শান্তি!
তারও উপায় নেই—
সকালের নাস্তা,লাঞ্চ-পোষাকের রং,
নেলপলিশ,রিসলেট আর ঠোঁট রাঙানি
একে একে জড়ো হতে থাকে
মাথার ভেতর—
চোখের পাঁপড়ি গাঢ় ঘুমে ঢলে পড়বার আগে
খুব সুক্ষ্ম একটু অবসর বুঝি নেমে আসে
অন্ধকারের আঁচলে
আর তখন ইতিহাসের পাতা উড়তে থাকে
গহীন জগত জুড়ে
মনে পড়ে
কতোকাল শুনিনি তোমার মদির কন্ঠ—