শেখর দেব-এর কবিতা
শূন্য সাধন
স্থির ও নিমগ্ন প্রাণ অবশেষে দিশা খোঁজে জগতের
জীবিকার পিছু ছুটে জীবন কতোটা বুঝে নিজ সীমা
অসীম সীমানা জানা নেই, বসে থাকি শূন্যতার কোলে
পূর্ণতার মোহ নিয়ে অন্ধকার আর আলোর ভেতর
সূর্যের নীলাভ রঙে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে বুঝতে চেয়েছি
পৃথিবীর মায়িক স্রোতের টানে কোথায় জীবন স্থির।
গতিই নিয়তি ভেবে চারপাশ করে রাখি অগোছালো
বিক্ষিপ্ত ভ্রমণ করে জেগে আছি শুধু বিষয়ে-আশয়ে
সারাদিনমান প্রাণ বায়ু টেনে গেছি নিশ্বাসে প্রশ্বাসে
অবাধ সাজানো ক্ষেত্র পড়ে আছে অনাবাদী শস্যহীন
রামপ্রসাদ জেনেছে শুধু কৃষি কাজ শেখেনি অধম!
নিজেকে খনন করে পেয়েছি অনন্ত শোভা অমলিন
শূন্যেরে দেখবো বলে সারাদিন আকাশে পেতেছি চোখ
সমুখে রয়েছো তুমি মাঝে তার শূন্যতা অপার তাই
শূন্য সেধে যাই পূর্ণতার কাছাকাছি তোমাকেই চাই।
চেয়েছি আগুনেরে কাছে
চেয়েছি আগুনেরে কাছে
প্রাণের মুখোমুখি পাশে
চেয়েছি হৃদয়েতে, যেভাবে পুড়ে যায় সুখ
মোহন পুতুলের নতুন নর্তকী নাচে
নিয়ত কুহুরব করেছে হায় হায় শুধু
জানিনি ফাঁকি দিতে, রয়েছি আঁখি বুজে
নাতিদূর রমণে গভীর প্রেম নদী জাগে
মৃতপ্রায় মায়ায় উঠেছে হাহাকার বুকে
চোখে মুখে অবেলা ব্যথার ছাপ রেখে যায়।
ঘুমন্ত সুন্দর
ডান হাতে শুয়ে আছে অরূপ পৃথিবী আর ঘুমন্ত সুন্দর
পড়ন্ত বেলার আলো সোনালি আভায় স্থির হয়ে থাকে
ধরো, পুরনো এ ঘুম অজুত বছর জুড়ে মেলে আছে
মায়ার আদিম ডানা, গুটিশুটি মেরে থাকে মিঠা রোদ
ব্যালকনি বাগানের কচিপাতা দোল খায় অবিরাম
ফুলগুলো ফাগুনের কথা বলে চুপিচুপি অভিসারে
অদূরে জড়ানো মেঘ উড়ে যায় ভূগোলের গোলে
নড়াচড়া করে ঘুমন্ত সুন্দর, দুলে উঠে পৃথিবী-পালঙ্ক
ডানারা আদিম ছিল পাড়িয়ে দিয়েছি ঘুম সারাবেলা
এখনো গভীর ঘুম জাগরণে চুষে নেয় ডানার আরাম।
পুরনো এ ঘুম মেলে আছে তার মায়ার আদিম ডানা
ডানারা আদিম ছিল পাড়িয়ে রেখেছে ঘুম পুরনো ভীষণ
কন্ট্রাডিক্ট করে যায় ঘুমগুলো, ভাষাহীন আশা নিয়ে বাঁচা
কাঁচাপাকা কিছু নেশা জমে যায় অনাগত রোদের মায়ায়
গোধূলি মদির ক্ষণ কথা বলে শব্দোত্তর কম্পা নিয়ে
রোদ শুধু উঁকি মারে আড়ালে আড়ালে অদূরে অদিকে
দুজনে গভীরে আছি ঘুমের অতল ডুবি আর ভাসি
ভেসে ভেসে ভালোবাসি খুনসুটি করে যাই সারাদিনমান।
নীরবতা নিয়ে খেলা
মেঘকালো চুলে হাত রেখে দেখি- উড়ে যাচ্ছে লজ্জার পাখিরা। সমূহ বৃষ্টির আশঙ্কায় খানিক সরে আসি দূরে। ভাসমান শোলার এলেবেলে চলন দেখে- ভয় হলো ভেসে যাই যদি। চাতকের তৃষ্ণা নিয়ে তবুও মেঘদেবীর কাছে এসেছি। চুলগুলো খুলে দিলেই যেন বৃষ্টি হবে, ভেসে যাবো জলের তাড়নায়। তাড়নার প্ররোচনা হতে চলে যেতে চেয়েছি পাহাড়ে। পাহাড়ে নাকি খেলা করা যায় নীরবতা নিয়ে। নীরবতা নিয়ে খেলতে চেয়েছি বলে বালিশে বৃষ্টি নেমেছিল। চোখ বন্ধ করে থাকি বালিশ বুকে নিয়ে। শ্বাস-প্রশ্বাসের সরব চলন ক্রমাগত নিয়ে যাচ্ছে নিজের ভেতর। যেখানে নিয়ত খেলেছি নীরবতা নিয়ে, চক্রভেদের দারুণ ইশারায়।
দেবপুত্র প্রতিটি কবিতাই তো বাজিমাৎ