কবিতা

মাসুদ পথিকের পাঁচটি কবিতা

গরিব কৃষকের বিল্ডিং নাই, ধনির আছে।
কৃষকের আছে নিশ্চিত মাটির বসতি।

কৃষক রোয়া বুনতে বুনতে জেনে গেছে
কোথায় আছে তিলা ডুফির দেশ

ধনী কখনো মৃত্যু ছাড়া জানতেই পারে না
শান্ত ঘুঘুর দেশে কার প্রতীক্ষায় নির্জন কবর,
নিরিবিলি অনন্ত ঘুমের রাত্রি

সে শহুরে কোলাহলের ভেতরও একা,
একাই, শূন্যতায় করে ভোগবাদী যাপন

তুমিও-কী ভাবো হে প্রেমিক
এবং বিরহের মতো ভালোবাসো, নিঃসঙ্গতাকে?

গরিব কৃষক যেমন ভালোবাসে আমন ধান ক্ষেত,
ক্ষুধার্ত বাবুইয়ের কলতান!

ধনী গরিব বিভেদহীন মুহূর্তে
কেউ কি শুনতে পাওনা মৃত সন্তানের গান?

০১

মাটির বুকে পলির আদর__আমার বুকে আতর
ঘ্রাণ ছড়িয়ে যতোই বাঁচি ভেতরে কেবল পাথর!

০২

তোকে আজ ‘ধান ধান’ লাগছে,আর
আমিও এখন শীতে পোড়া,’ছারখার’!

০৩

পৃথিবীর আশ্চর্য সুন্দর ফলের নাম বেদনা
নদী__পতিত ফলের পাশে বসে কেঁদো না!

০৪

শীতে ঢেকে আছে হৃদয়, ভাবো আবরণটাই দামি
বিশ্বাস করো হিম, একটুও ভালো নেই আমি

০৫

চারদিকে চকচকে অন্ধকার, কোথায় নিজের ছায়া?
কোথাও কোনো বন্ধব নেই__সব মিথ্যা ও আবছায়া

০৩

কসাইয়ের খোঁয়াড় থেকে পালিয়ে আসা গরু পথ ভুলে গেছে; কোথায় যাবে সে?
শহরের রাস্তা ও কানাগলিতে বিভ্রম; সড়কে মুরলী ধানের রোয়া বোনে গেলো কারা?

তবে কী ধান রূপান্তরিত হতে হতে শিখে গেছে কংক্রিটে জন্ম নেয়া?
ধুলো শুঁকে শুঁকে এগিয়ে যায় গরু, পেরিয়ে যায় কাগজের ব্রিজ,

কতিপয় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল তাকিয়ে দেখে তার ট্রাগল, ভাবে গরুর পাগলামি!
মুখস্থ করছে শিশুরা গরু রচনা, হাম্বা, মাংস এবং দুধের প্রণালি
ছুটছে, পিছু নিয়েছে কসাই, খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত কালোবাজারি…

পলাতক গরুটি শাহবাগ পেরোতে গিয়ে মুরলীধানের
ক্ষেত ভেবে মুখ লুকায় বাংলা কবিতায়!

০৪

অব্যক্ত কারণে কারো বউ পালিয়ে যায় যদি,
যদি লোকেরা তার পুরুষত্ব নিয়ে প্রশ্ন তোলে

বাথরুমে তোমার একমাত্র সন্তানের লাশ পড়ে থাকতে দেখো যদি
মধ্যরাতে, যদি শোবার ঘরে ঢুকে পড়ে চোর, নিয়ে যায় ঘুমের পিল
আর চোরের পিছু ছুটে বেড়ায় সব মধ্যবিত্ত গরু, মেট্রোপলিটন মন

কিংবা ধরো তুমি সপরিবারে কাটো যাপনের ঘাস
ঘাসের ঝুরি থেকে লাফিয়ে জাগে অনাটনের সাপ
গরুগুলো হাম্বা হাম্বা করে জাগিয়ে দেয় পাড়া,

এই কোলাহল ভেঙে ভেঙে সন্তানের লাশ কাঁধে ছুটে যাচ্ছে হাসপাতাল
বাকস্বাধীনতার অধিকারে পথেপথে করছে মিছিল বেগানা কুকুর

অসুখের শয্যা ছেড়ে যায় পুরুত্বহীন বর ও পিতা, বিষন্ন ফল
হাসপাতালের বাইরের সি়ঁড়িতে প্রিয় আপেল
আপেলের মতো গাড়িয়ে পড়ছে রাত, সড়কে ঘুরছে
শুশ্রুষার মাতাল সবুজ ফল বিক্রেতা

০৫

বাসমতি ধান তুমি, বাজারের নিরিখে বিজ্ঞাপিত,
খোসা ছাড়িয়ে ছাড়িয়ে পাচ্ছি তোমার দেহ, মসৃণ চাল!

রান্নার পর, ঘরের চারধারে জড়িয়ে আসে তোমার আত্মার সুঘ্রাণ, ভাত
পড়শি যুবক পায় টের, ছুটে আসেন পুষি বেড়াল।

আলোকোজ্জ্বল, বাজারের ভেতর সে সপিংমল, ‘স্বপ্ন’ তাড়িত।
তাতে লেগে গেছে ভীড়, ক্রেতার। তো, এমন ভীড় ঠেলে না-ঠেলে;
পুনরায়, পৌঁছাতে পারছি না তোমার কাছে, এমন ফ্রি মার্কেটের কালে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *