কবিতা// জাহিদ নয়ন
অলৌকিক জেব্রা ক্রসিং
যে যার মতো চলে যাচ্ছে গন্তব্যে
উদ্ভ্রান্ত এক বেপরোয়া হাইওয়ে-জীবন;
ছকে বাঁধা পথ- অভ্যস্ত দিনলিপির ইশারায়
অবারিত নদীময় শহুরে সড়কের বিন্যস্ত ঠিকানায়!
উড়ে গেছে অন্তহীন সুখের বিলাসী ফানুস
রোদ মাখা সকাল – আজন্ম প্রেম সুখ!
ফুরিয়েছে মোহময় শীত- বিকেলের চা
অভিলাষী স্বপ্নের বিকিকিনির মেলায়!
ফিরে গেছে ক্লান্ত পাখির বহর
অস্তগামী সূর্যের বিলাপ ধ্বনির ক্ষণে।
খোলস-বৃত্তের পথ চক্রাকারে পেরিয়েছি বহুকাল;
ছায়ার পেছনে ফিরে তাকানোর ভঙ্গিতে
ক্লান্ত একদিন চেয়ে দেখি-
জীবন থমকে গেছে নিয়তির অনিবার্য সিগন্যালে,
নিভৃতে চলে গেছে প্রিয় কিছু মুখ
অলৌকিক জেব্রা ক্রসিং পেরিয়ে…
পুঁতিগন্ধ
রক্তাক্ত নক্ষত্রের ছাইয়ে বিধ্বস্ত মন্দিরের স্তম্ভ
অপরাধী চাঁদের নিচে খুন হওয়া শপথের অস্থি।
পোকাধরা গ্রন্থে উড়ছে অনার্যের কালো পাখা,
নির্বাক প্রার্থনার ভেতর বেজে ওঠে মৃত বাঁশি!
অদৃশ্য কীটেরা শুষে নেয় সময়ের সুধা
উল্কাপিণ্ডের শরীরে খোদিত ইতিহাসের হাহাকার।
উদ্যান জুড়ে ঝরা পাতার কোরাস—
আত্মা ও মৃতদেহের ভেদরেখা ধ্বংসস্তূপে একাকার!
কোথাও এক লৌহদেবতা অট্টহাস্যে গুনে চলে পতনের সংখ্যা,
ক্ষুধার্ত কুকুরেরা ছিঁড়ে খায় সভ্যতার লাশ!
ঠায় দাঁড়িয়ে থাকি ছাইভরা আকাশের নীচে—
নিথর শূন্য হাত, অন্ধকারে পুড়ে যায় চোখ
ভেতরে কাঁদে এক অজানা যুগের জন্মবেদনা!
নৈঃশব্দ্যের পদাবলী
আজ এসেছি, কিন্তু অনুপস্থিত থাকার আবরণে —
তোমার ঘড়ির কাঁটা আমার হাতে আটকে আছে
জলের নিচে নিশ্বাস রেখেছি
যেন মাছ ভুলে যায় আমি মানুষ!
দরজার ওপারে দাঁড়িয়ে আছি—
চাবি পকেটে, তালা মনোবিদ্যায়।
মুখ খুললেই উচ্চারণ নয়
ধূপের ধোঁয়া উঠে আসে—
ঘ্রাণে আমি পূর্বপুরুষ চিনে নিই
তাদের প্রেতছায়া লেগে থাকে উচ্চারণে।
ছায়া ছেড়ে পালিয়েছি রোদ্দুরের কাছে
পিছনে পড়ে রইলো এক অর্ধেক মুখ;
আয়নার সম্মুখে ঘাতকের ইতিহাস!
আজ সন্ধ্যা সাজেনি, আমি বলে এসেছি—
কাল আর সূর্য তুলবো না, ঘুমিয়ে থাক!
তুমি তখন বিছানার চোখে তাকিয়ে দেখো—
সেখানেই জ্বরের প্রতিচ্ছবি!
আমি জানি, শরীর একদিন শহর হয়ে যাবে—
আর আমার হেঁটে যাওয়া হবে
দুঃখের ট্রাফিক সিগন্যাল মেনে!
