কবিতা

বঙ্গ রাখাল- এর গুচ্ছ কবিতা

তোমার লোভ ও স্মৃতিচিহ্ন দিন দিন বেড়েই চলেছে…
মৃত্যুস্মৃতি বুকে গুজে হাঁটলে খোলা মাঠের দিকে-
আর বললে-লুন্ঠিত বিবেকের দাহ্যতা সহ্য করবে কী করে?
গাছের ডালে সঙ্গমরত যে চড়ুই-সেও তো জানে
তীব্রতার স্ফুলিঙ্গের মানে কিংবা বিষাক্ত ছোবল।
তুমি বলো আজ সব বিস্মৃতি-অতীত
পাখিজন্মের ইতিহাসের পাতায় পাতায় লেখা আছে—
হরিণেরও চোখে ছিল মায়া
বিক্ষিপ্ত বাড়িটির উঠান জুড়ে-পাতারা খেলে
গুহামানবের খেলা আর
রক্তিম আদিমতায় ভরে গেলে মন—
আমিও নীলছবিচ্ছলে কঙ্কাল হয়ে যাই-
নিরবতায় ভাসি-নম্রতায় খেলি কুসুম কুসুম খেলা
বিষের মত দিন দিন ঘুম কেড়ে নিয়েছে সকাল
প্রতিবেশীর মুখে জমে বিষাক্ত বিষণ্নতার হাওয়া
আর রূপালী পর্দার নারী কুয়াশাচ্ছন্ন ভোরে
ধুলোয় নিজের নম্রতাকে বিলিয়ে দেয় নিজের অজান্তে
তবুও ছায়ার সাথে খেলে রক্ত রক্ত খেলা…

হাসপাতালের জানালায় রেখে চোখ
আয়েসি এক ভঙ্গিমায়
চেয়ে আছো দূর হতে বহুদূর…
যেখানে দৃষ্টিসীমা থমকে দাঁড়ায়।
গায়ত্রী চক্রবর্তী
মেডিকেল কলেজের এজরা ওয়ার্ডে
তোমায় দেখতে এলো
ঠিক তখন
তুমি
গায়ত্রীর হাতে রেখে হাত
ঘুরে এলে পৃথিবীপাড়া…
ধানক্ষেত ছেঁড়ে, রেল-লাইন রেখে বায়
মেঘফুল কুঁড়াতে কুঁড়াতে
চলে গেলো কবিতা
নিজ আলোয়…জন্মভূমে
তুমি বিভ্রান্ত পথ চেয়ে
হাসপাতালের জানালায় রাখলে দৃষ্টি
আর বারংবার ডাকলে-ফিরে এসো চাকা
ফিরে এসো…

দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান হলে-
নিথর দেহ- মানুষ বড় হতে চায়;
শূন্যতাকে পাশ কাটিয়ে-মজে থাকে লালসায়।
মুখরিত সময় -বড্ড হতাশায় কাটে
আড়ালে-আবডালে -ফিসফিস হয়
মৃত্যু মিছিলে- চূড়ান্ত তালিকায় তুমি
সাজিয়ে নিও স্বপ্নীল ভবিষ্যৎ…
গুচ্ছগুচ্ছ স্বপ্ন বুকে -যারা দেখেছিল
আধমরা মানুষের স্বপ্নস্নাত দিন
কেটে গেছে-নিয়ন বাতির কথা ভেবে
কালো ফিতায় ভরে গেছে স্বদেশ
তুমি জানো বোধহয়—আজ শোকাগ্রস্ত
বিষণ্ন বাতাস -প্রজন্মের পাখি হয়ে
জন্ম দেবে টুকরো টুকরো খবর।
জলপাই সব শকুন দিয়েছে হানা
রাস্তায় তুমি কিংবা আমি-নামলে হারিয়ে যাব
কোন এক দ্বীপে-যা কখনো দেখিনি এই পোড়া চোখ…

খুব অভিমান নিয়ে চলে গেলে অরণ্যের দিকে…দুচোখে অন্ধকার; কাজল লেফটে গেছে— জল গড়িয়ে পড়ছে, তুমিও তাকিয়ে
থাকো বোবা বৃক্ষের পানে… এ সময় কারো কারো ঘরে থাকে না— ভাত। তবে জোনাকি হয়ে তাড়িয়ে ফেরো আমার শহর। যেখানে
অরণ্য বলতে মিনিয়েচার। আমি দুরন্ত বালক— বটবৃক্ষের বনে— চাঁদের সাথে— বোবা মেয়ে মেঘের গর্জনের মতো গর্জে
ওঠে— বস্ত্রহরণ করে—দ্রৌপদীর, যত সব জানোয়ার। তুমি বট-পাঁকুড়েরর রংচটা জামা পড়ে আছো—অরণ্যে রক্তের ছোপ,
পড়ে আছে শুকনো পাতায়— শরীর ছিন্নভিন্ন আর পড়ে চলেছো সংস্কারে বই…
তোমার একান্ত নিরবতায়—শাল বৃক্ষের বনে; উড়ন্ত প্রজাপতির কাছে— মাজারের দুয়ারে লেগে আছে বিশ্বাসের ছাপ।
মুখোমুখি হতে পারি না— অরণ্যের গভীরতায়…মেরে ফেলছো; ধর্ষণ করে ফেলে দিলে শরীর—শরীরের নেই তো কোন দাম। শাড়ি
লুকাতে লুকাতে দুঃখ হয়ে যায়—গাছ। আমরা এগোচ্ছি শহরের দিকে— মানুষ বলছি— আয়তনে উড়ে যায় পাখি— পাতার মেয়ে,
নির্বীকারে অচেনা পথে উড়ে যায়— অন্ধ রাতে।

কামারশালার নিভন্ত যৌবনে যে কবি বুনে যায় মুক্তিযুদ্ধের গান তার কবিতা খাতায় জমা হয় বিসর্জনের চরিত্র। কখনো
পাড়ার বউরা মাথার ঘোমটা তুলে যশোদার ছেলের হাতের কাছে রেখে যায় লোবানের ঘ্রাণ। সম্রাট ঘুমায়- আমলকী বাগান
নিমজ্জিত হয়। একদা মাঠের সোনালী আঁশ বুকে রেখে বুক সাধুহাটির মানুষদের হয়ে বিনিদ্রায় কাটায় রাত। রাত নিজের
মানচিত্রকে চিনিয়ে দেয়। গায়েনের মুখে বিমর্ষস্বদেশ। পাণ্ডুল হয়ে আছে মাটির উত্তপ্ত পৃথিবীবায়ু।
ভেতরে ভেতরে গহীন হাহাকার। ক্ষয়ে যায় জুতার তালু। নতমুখে যে কবি নাগরিক আলোয় েেখ নেই- সন্ন্যাসীমুখ। বলের
হাওয়ায়- কখনো কখনো বদলে দেয় প্রিয় বধূর উন্নাসী চোখ। গতরাতেও জেগে জেগে গল্পের প্লট সাজিয়ে ধানচারারা আগাম
বার্তা পাঠায় মরালের কাছে- কী করে আয়নায় দেখা যাবে মুখ? মরালের জ্বর। কফিনে মোড়া গল্প আড্ডায়, শোনা যায় ডাক-
হোসেন, হোসেন, হোসেন।

তুমি চলন্ত রেলের কামরায়— থায় দাঁড়িয়ে কচ্ছো রাজ্যের কতকথা
সেই কবেকার হবে— অতীতস্মৃতি; হাতড়ে জীবনের গান
ভোরবেলা একটি কাক, উড়ে বসে ঘরের হাতনেতে
দেখতে দেখতে পাড়ার ছাওয়াল-পাল ছুটে চলে রেলের দিকে—
মা তখনও হারিকেন আর কুপি জ্বালায়ে রাখে ঝড় হবে ভেবে
আমিও মৃত মানুষের পাশে রেখে আসি কত চাল আর ধূপকাঠি

দিনোমানে গাছের কাছে মিনতি সবার— মরণ এক প্রতারণার নাম
বিবর্ণ গতর নিয়ে কেন মানুষ ঘুমায়—এই প্রশ্ন সবার।
পাড়ার মদ্দরা দল বেঁধে চলে—এক ছটকা পিরিতের মেয়েকে
দেখবে বলে—ফুটন্ত গুলাপ
ভাঁজ করে রেখে ঠোঁট— ছিটাতে থাকে মায়া
কনে যাবি— যাচ্ছি বলে সেই অতীত ব্যাধি
বিষমেখে হাতির পায়ে পড়েছে লুটিয়ে—মানুষের যত লোভ
হলে প্রকাশ—নিশ্চুপে ঘনীভূত হয় নীরবতা।
কতা কচ্ছি— কবো কয়েও হচ্ছে না কওয়া
আন্ধারে হারিয়ে গেছে মা’র হাতের বালা
বৃষ্টির ঝাপটায় তোমার ঠোঁট শুকোয়ে গেছে; তবুও
বিনিময়ে পেলাম নিঃশব্দের বাস্তুহারা—
ছ্যামড়িদের বুকখোলা ন্যাতানোস্তন…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *