কবিতা- অচিন্ত্য চয়ন
রোজ ঘুম খাই
রোজ ঘুম খাই—অজানা থেকে যায় জেগে থাকার কারন।
রাতের বারান্দায় জমা হয় নিরীহ সময়,
রাত যদি তোমার বুকের ছায়া হয় তবেই নেমে আসে ভোরের দুঃখ,
দুঃখ জমা রাখার আড়ৎ আমার চোখ;
দূরের রাতগুলো চোখেই পড়ে না—
রাত অভিমানে তোমার স্লোগানে শরীক হয় মিছিলে,
আজকাল মিছিলেও তোমার নাম শুনি না,
নামহীন দিনগুলো কেটে যাচ্ছে রাতের অপেক্ষায়
আর রাত কেটে যাচ্ছে ঘুমের অপেক্ষায়—
জীবন অপেক্ষার পাহাড়, যে পাহাড়ে তুমি নেই,
আছে তোমার কালো ওড়নার ঢেউ—নাক পাহারায় চুলের ঘ্রাণ।
নেশা হয়ে যায় ঘুমের, তবু চোখে ঘুম নেই,
জমা রাখা সব ঘুম তোমার ঠোঁটের ভাঁজে লুকিয়ে থাকে,
বেশ গোছালো পরিকল্পনায় আমার বন্ধুও আমার দায়িত্ব নিয়ে
বেশ তদবির করে, নিজের নেশায়—শয়তানের বিশুদ্ধ মুখোশ দেখিয়ে!
দুনিয়ায় বিশ্বাস নেই,
চুরির খাতায় নতুন সব চোরা মালের তালিকা হচ্ছে।
পৃথিবীতে বন্ধু বলে কিছু নেই—রাত গভীর হলে এসব বোঝায়।
অবাক দুঃখসমগ্রে বন্ধুর নাম লিখতে হয়।
কতিপয় বন্ধুরা বুক পেতে দেয়, যখন সময় তার বিপক্ষে,
সহজ নামতা হয়ে যায় জটি— জটিলতর মুখ।
সময় আলোকিত হয়, আলোর মিছিলে চোখ রেখেই
নেমে যায় বন্ধুর বিপক্ষে, এরা বন্ধু নয়, শয়তান প্রকল্পের ঠিকাদার!
তোমরা ঠিকাদারী করো, আমি অফিস থেকে বাসায় ফিরি,
আবার আসার জন্যই ফেরার তাড়া, ফিরতে হয় নিজের কাছে,
নিজের আয়নায়—স্বচ্ছ দুপুরের মত।
ফিরতে হয়—দূরের সব বিসর্জনের প্রহরি হয়ে—দুঃখ হয়,
ঘুম খেয়েও রাত পার করতে হয় জিরো পাউয়ারের বাল্বের শরীরে তাকিয়ে।
দুঃখ হয় তবে দুঃখ করি না, আমলে না নিয়ে বুকের ভাঙা হাড় যত্নে রাখি।
ঘুমের প্রযত্নে চিঠি পাঠিয়ে তোমার কণ্ঠে গান শুনি—ঘুম খেয়ে হত্যা করি রাত।
আমার ঘুম না হলেও, মানুষের মৃত্যু হয় প্রতিদিন,
ক্রমেই নিতে যেতে থাকে আলোর যৌবন; তুমিহীন
রাত বিরামচিহ্নহীন দুঃখ, তুমি দুঃখ নিও না- ঘুমের
জন্য আমাকে নিও— কতকাল আমার ভাতঘুম হয় না,
তোমার বুক ঘুমের ঠিকানা, এ বুকেই আমার ঘুমসমগ্র।
আমার ঘুম না হলেও, মানুষের মৃত্যু হয় প্রতিদিন,
ক্রমেই নিতে যেতে থাকে আলোর যৌবন; তুমিহীন
রাত বিরামচিহ্নহীন দুঃখ—আলিঙ্গনে রাত কাটে।
যে দৃশ্য বুকের পাঁজরে এঁকে দেয় ঘৃণার ছবি
দৃশ্যে অন্ধকার নেমে আসে আলোর মিছিলে—
তুমি আলোর বিকেলে ছায়া দিয়েছো চেতনার ভ্রুণে।
অথচ কিছু দৃশ্য দেখলে ভেঙে যায় হৃদয়—
কান্নার সুর বেজে ওঠে কবিতার শরীরে।
তোমার জন্য কান্না করে কিছুই হবে না।
ক্ষমা করো, সময় এখন আলোর বুকে—
তীর ছোঁড়ার।
তোমাকে ভালোবেসে আজ কোন মিছিল হবে না।
মেঘহীন আকাশের গর্ভ থেকে ঝরবে ঘৃণার বৃষ্টি;
আবারও একদিন আলো হয়ে ফিরে এসো
চেতনার ভ্রুণ হাতে, বুকে হিমালয় নিয়ে।
রাত ভোর হবে, থেকে যাবে দৃশ্যে মোড়ানো—
ঘৃণার সমুদ্র।
শপথ
এ শহরের গল্পের কিছু অংশ চায়ের টেবিলে জমা রাখা ভালো।
ঘুমের প্রস্তুতি নিচ্ছি, অথবা জেগে থাকার।
রাতের কথা মনে নেই, দিনকে সকালের মত মনে হয়।
একদিন সব গল্প ভোরের বৃক্ষ হবে, সবুজ হবে মাঠ।
অন্ধকারের মিছিলে স্নিগ্ধ আলোর মায়ায় আসবে ভোর,
সকাল হবে নতুন সূর্যের চাহনী ভেঙে দেবে তোমার অবিশ্বাস।
কিছু বিশ্বাস জমা রাখা ভালো হৃদয়ের গভীরে,
আমার চেতনা নিজস্ব বাতিঘর,
তোমার চেতনা নিজের করেই রাখো।
দূরে রাখো, যুদ্ধ করো কিন্তু হত্যা করো না।
একটি সকাল হত্যায় জন্ম হয় অগণিত ভোরের,
নির্মান হয় আলোর মিছিল, মশালের মৃত্যু নেই।
আঙুলনামা
তোমার অভিযোগ বুকের বারান্দায় ঝুলে রেখেই হাঁটছি,
হাঁটছি দূরের আকাশে মেঘের নামে-
বিকেলের নামতার ক্লাস শেষে তুমি এ নগরে আসো নীরবে,
সময় কেটে যায় আঁধারে।
দূরের জানালায় দুঃখ উঁকি দিয়ে রোদের হিসাব বুঝিয়ে নেয়;
দুজনের আর কোন পার্বণে দেখা হবে না,
তবে দুঃখযাপনে উৎসব হবে,
এসব উৎসব গুলিবিদ্ধ করে বুকের পাঁজর।
উত্তর থেকে দক্ষিণে যাও তবু দেখা হয় না।
রিকশা ভ্রমণে ডানপাশে আর বসা হবে না,
দুঃখগুলো জমা রেখেই বেদনার লক্ষে হাঁটছি।
নগর থেকে গ্রামে কত কিছু
বাতাস হবে কিন্তু নীরব বালিকার সঙ্গে দেখা হবে না।
অথচ কথা ছিলো এসব প্রহর গণনা করব কুঁড়ি আঙুলে।
চমৎকার লিখেছেন
অসাধারণ কবিতা। আমি প্রথম প্রথম তার কবিতারই ভক্ত ছিলাম, পরিচয় ছিলনা তবুও, ক্যাপটেন করার সময় রবিন ভাইয়ের কাছ থেকে চয়ন ভাই ঈশান সামী, লতিফ জোয়ার্দার আহমেদ ফিরোজ এর কবিতা চেয়ে নিতাম, চয়ন ভাই দুর্দান্ত লিখেন, শুভকামনা চয়ন ভাই 🍂 লাভিউ কাব্যশালিন💚
সবগুলো কবিতা চমৎকার হয়েছে।