ফারুক মাহমুদ এর কবিতা
দূরত্ব
পাথরে পাথর ঘষে আগুনের শুভ-সূত্রপাত
পাতার পোশাক ছেড়ে, অন্ধকার গুহাগৃহ ছেড়ে
মানুষের চলাচল চলে গেল বন থেকে বনে
মরুভূমি, শৈলচূড়া, হিমবাহ, দাবানল, খরা
নতুন চিন্তার মতো অনিঃশেষ জলের প্রপাত
অতল সমুদ্র চষে মানুষের কর্মকৃতিধারা
একদিন পৌঁছে গেল মুগ্ধকর চাদে
গোলার্ধের শেষ দূরে হোক
সময়ের মাপজোখে বড়জোর চোখের পলক
এত যে বিস্ময়গাথা, অতিক্রম, উন্মোচনগতি…
অসাফল্য কিছু তবু আছে—
মানুষ পারেনি যেতে পাশে থাকা নিজ নিজ ছায়াটির কাছে
পদ্যবীজ
কোমরে সাপের ঝাঁপি। বেদেনীর শুকনো ওষ্ঠ থেকে
ঝরে পড়া হাসিটির মতো
আমরা যা বলছি, আমরা যা করছি
এতে কিছু কপটতা থাকে
মাঝেমধ্যে আমরা তো এখনো
ডাঘরে যাই, চিঠি ফেলে আসি
পিওনের দেখা পেলে, চিঠি দুটো চার হাতে ভাগ করে পড়ি
তুৃমিই বলো, কোন মুখে ‘ছদ্ম’ বলি আমাদের এ পাগলামোটাকে!।
বৃষ্টিভোর
আকাশ ভাসিয়ে আজ মেঘ করে আছে
ভোর থেকে নেমে আছে সন্ধ্যা-সন্ধ্যা দিন
হাওয়াগুলো চলাচলে পাগল পাগল
চোখ ভরে যায়
আষাঢ়ের কালো মুখ স্মৃতিমুগ্ধ কত যে রঙিন!
আজ আর তন্দ্রা নয় আলস্যের বাসি বিছানায়
মুখস্থ কাজের পাশে অন্য আরও কাজ পড়ে রবে
চলো-চলো, এসো
বৃষ্টিটা শুরুর আগে আমাদের বাইরে যেতে হবে
সদ্য ফোটা পদ্যকুঁড়ি
হুহু মাঠ। নদীপাড়ে ভাঙা সেতু। পাশে, একা গাছে
নুয়েপড়া ডাল। উড়ুউড়ু শাখা। ফুল ফুটে আছে
হতে পারে কারও কারও অসাফল্য বিত্ত আহরণে
সে-ও কিন্তু পদ্য লেখে। চাঁদ ওঠে আধপোড়া মনে
এখনও মনের কোণে স্নেহপ্রীতি প্রেম জেগে থাকে
আনন্দে আনন্দ মেলে নদীসত্য মোহানার বাঁকে
এখনও তোমার চোখে উইঢিবি স্রোতস্বিনী আঁকা
আকাশ আগুন আলো ছুরি রোগী ফলভরা ঝাঁকা
কাঁটা কিছু থাকে…। কাঁকড়ের পথ– অবপরিপাটি
তবু হে জীবন, এসো, হাতে হাত, একসঙ্গে হাঁটি
কবি যদি
কবি যদি কাপুরুষ হয়
শব্দশূন্য হয়ে যায় সব অভিধানন
কবি যদি কৃতদাস হয়
থেমে যায় পাখিদের মধুক্ষরা গান
কবি যদি ভিক্ষাপাত্র হয়
লুপ্ত হয় ভালেবাসা– মান-অভিমান
কবি যদি নতশির হয়
মুছে যায় মানুষের বীরত্ববাখান
কবি যদি করজোড় হয়
শষ্যস্থান হয়ে যায় ঊষর-বিরাণ
কবি যদি দুর্বিনীত হয়
পুষ্পপত্র মরা ডালে ঝরা-মৃয়মান
কবি যদি শুদ্ধকণ্ঠ কবি হয়ে ওঠে
রোদনের সব দাহ ফুল হয়ে ফোটে
দুই হৃদয়ের নদী
১.
মামুষের কত রং! বদলে যায়। কত ভিন্ন হয়
তোমাকে আমার চেয়ে ভালো-বেশি আর কেউ জানে!
পুরোনো প্রেমের নদী ডুবে গেছে প্রতিকূল স্রোতে
দুজনের মন থেকে সরে গেছে মন…
ফুরাল হৃদয়গল্প। এসে গেছে অনিবার্য ভোলার সময়
২.
আগ্নির দহনতৃষ্ণা আমাদের সকলেরই জানা
তুৃমি যদি জ্বালো
অগ্নিকুণ্ড হয়ে ওঠে মনোহর আলো
তুমি যদি মধুপাত্রে ঢেলে দাও বিষ–
বিপুল আনন্দে হব মুগ্ধ সক্রেটিস