নির্বাচিত কবিতা- খলিল আহমদ
পানাম নগরী
পোড়ামাটির গর্ভে স্থিত সবুজের কলমিলতা
মাটির দেয়ালে স্বাধীন প্রাণ সঞ্চারী স্বর্ণলতা
ভুলিয়ে দাও কন্যাকুমারী প্রেম আশালতায়
প্রতিদিন সম্ভাষণ থাকে প্রাণের বিশালতায়
বাড়ির আঙিনায় সেদিনও ছিল সবুজ ঘাস
সবুজ ঘাসের মাঝে ঘাসফুলের মিষ্টি ঘ্রাণ
ঘাসফুলেরা বিস্মৃতির স্মৃতির আনন্দলোকে
ঘাসের চাদরে পুরানো বছরের কবিতা শুনে
চুন সুরকির সূক্ষ্ম কারুকাজ ছোট্ট ভাস্কর্য
অজানা শিল্পীর সুন্দর চারুকলার নিসর্গ
হারানো সংস্কৃতির কারুসাজ ছোট্ট নিদর্শন
ভাস্কর্যের চোখ দু’টো তোমায় করে সম্ভাষণ
রোদ বাদলে ক্ষয়ে যাওয়া অপূর্ব স্মৃতি চিহ্ন
কালের ইতিহাস বলছে যেন গেঁথে গেঁথে বর্ণ
দর্শনধারী পথিকেরা ভেবেছে ইতিহাসের স্বর্ণ
ভাব আকাশে কল্প কথন শুনে পথিকের কর্ণে
শত শত বছর পূর্বেও ছিল সংগীত নৃত্যকলা
চুনসুরকির দেয়ালের মাঝে শোনায় শব্দমালা
পাথরের ছোট্ট মঞ্চে শোনায় যে নূপুরের ধ্বনি
পর্যটক যেন খুঁজে পায় মজার বিনোদন খনি।
আনন্দের আনন্দলোক
আমি কখন যে তোমার হৃদয়ে করেছি প্রবেশ
এখন আমি বুঝি ভালোবাসা কখন নিরুদ্দেশ
এখন বুঝতে কষ্ট হয় না কখন করো অভিমান
এখন আমি বুঝি কখন ভালোবাসার অবসান
আনন্দের রবি পশ্চিম আকাশ দেখে সারাক্ষণ
ফুলের কলিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে সুখে ভাসায় মন
বিষন্ন সময়ে অবসন্ন মনে আচ্ছন্ন কান্নার রোল
প্রসন্ন হৃদয় প্রচ্ছন্ন হাসি পরিচ্ছন্ন প্রাণের ডোল
তোমার আমার মনোবৈভব যে অভাবের শূন্যতা
সুখের তরে বিত্তবৈভব আনবে মানসিক দীনতা
তোমার ভিতরে আমি আমার ভিতরে রবে তুমি
কবির কল্পলোকে অংকন আনন্দলোকের ছবি।
কবিতার সাম্রাজ্য
সবুজ সাদা শাপলা শালুক আশায় বেঁচে থাকুক
অবুজ গাছের সাদা সাদা বকুল প্রাণের কথা বলুক,
কৃষ্ণচূড়ার লাল কলির গন্ধে ভরায় প্রেমের বাসর
কাঠঠোকরার ঠোঁটের আঘাত হৃদয় রাঙায় আসর,
ফুল ফুটবে তোমার মনের ফুলশয্যা রাঙ্গাবে ভুবন
রবি উঠবে ভোরের আলোয় দেখাবে রঙিন স্বপন,
আমার বাড়ি যাইও তুমি ফুলকলিদের সঙ্গে নিয়ে
তোমার সাথে থাকবো প্রেমের নীল বন্ধনটুকু নিয়ে,
রক্তজবার আলস্য নিবেদন থাকবে না বেশি দিন
ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে ফুরিয়ে যাবে সোনালী কর্মহীন দিন,
বানের পানি রং বদলায় কী যেন খেয়ালের আশায়
বানের জোয়ারে ফসলের ক্ষেত দুঃখ বালুতে ভাসায়,
অবসরের সমুদ্রে কর্মহীন কাগজের পাতায় লিখবো
কবিতার সাম্রাজ্যে রাজত্ব করে বাকি জীবন দেখবো।
কবিসত্তা
কবিদের নিয়ে লিখছেন চমৎকার
কবিতারা হাঁটতে থাকে পথে পথে
পথ থেকে কবি কুড়িয়ে নেয় কবিতাকে
কবিতাকে অন্তরে ধারণ করেই উপস্থাপন
কবিতা পথ ধরে হাঁটতে থাকে ততদিন
কবির কবিসত্তা বেঁচে থাকবে যতদিন
কবির পথ রুধিবার শক্তি নেই কারো
যুগে যুগে পথ রুদ্ধ করার চলছে প্রয়াস
ঘোরের কারাগারে কপাটবদ্ধ কারাগারে
অনর্গল কবিতা রচনা করে যায় কবি
পথ দেখায় কবি পথ দেখাতে চায় কবি
সব কবির কবিসত্তার ক্ষমতা এক নয়
সংস্কৃতি যখন অপসংস্কৃতিতে রূপান্তরিত
কবিদের কবিসত্তা সেখানে প্রশ্নবিদ্ধ
কবির আত্মদহনে কবিসত্তা কখন হয় নষ্ট
কবির কবিতাগুলো কখন হয় পথভ্রষ্ট?
সুরের আলপনা
তুমি এত যে সুন্দর চোখ ফেরাতে পারি না
তুমি এত যে সুন্দর মন হারাতে পারি না
তুমি এত যে সুন্দর কূল কিনারা পাই না
তুমি এত যে সুন্দর ঘরে থাকতে পারি না
রুপের ঝর্ণা করুনার বর্ণনা তোমার তুলনা
কথার বর্ণ আমার কর্ণে সুরের আলপনা
তুমি এত যে সুন্দর চোখ ফেরাতে পারি না
তুমি এত যে সুন্দর মন হারাতে পারি না
রুপের বন্যা নন্দিত ছলনা তোমার তুলনা
প্রেমের অর্ণব প্রাণের দর্পণ কুলের বাসনা
তুমি এত যে সুন্দর চোখ ফেরাতে পারি না
তুমি এত যে সুন্দর মন হারাতে পারি না
সন্ধ্যাতারা
রাতের অন্ধকারে কাননে তারার বর্ষণ
সমগ্র কাননে আলোয় ভরা আকর্ষণ
কানন জুড়ে খুঁজি তোমায় নেই দর্শন
হাজার তারার মাঝে কোনটি তুমি
হালকা আলোয় ভরা তারাটি কি তুমি
উজ্জ্বল আলোয় ভরা রূপের মাধবী
বিচ্ছেদ ক্লিষ্ট হৃদয়ে ভালোবাসার তৃষ্ণা
সবুজ ঘাসের মাঝে সাজে তারার মেলা
প্রেমের নিষ্পাপ আহ্বান এক সন্ধ্যাতারা
আলোয় আলোয় তারায় তারায় ভরায়
আমার ভুবন, অপূর্ণ জীবনের পূর্ণতা
আনবে তারায় তারায় আলোর ভুবন
সন্ধ্যা নামলেই বসি তারার আলোয়
রাতের ক্লেশ উবে যায় গুল্ম তারায়
জোনাকির আলো খুঁজে কোন তারা?
কাশবনে সাদা চরে
ফুল তুমি ফুটে যাও সময়ের ইচ্ছা অনিচ্ছায়
নদীর কূল ভাঙ্গে গড়ে নদীর অজানা ইচ্ছায়
চর নদীতে বিলীন চরের নিতান্ত অনিচ্ছায়
মন বাগিচায় ফুল ফুটেছে ভালোবাসো আমায়
ইচ্ছে নদী কূল ভেঙ্গেছে জাগবে নতুন আশায়
কাশবনে মহিষের পালে রাখাল বাঁশি বাজায়
নদীর কলকল শব্দ প্রেয়সীর স্বপ্ন জাগায়
গ্রামের প্রাণগলি লাঠি খেলার আসর জমায়
কলসি হাতে গ্রাম্য মেয়েরা খেলে নাগর দোলায়
ঘোড়ার গাড়িতে চরের বাড়িতে রাজসিক যাত্রা
বাউল গানের সুর প্রশান্তি ভরা মনের ইচ্ছা
বাঁশের নান্দনিক ছাউনি আনন্দের ফুলশয্যা
জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় চর মানুষের মায়ায়
মধুময় আনন্দের রেশ বাকি জীবন কাটায়।
যাপিত দিন
সময় তুমি বড়ই নিঠুর
সময়ের হাত ধরে ক্ষমা চাচ্ছি
সময়ের পা ধরে অপেক্ষা করছি
সময় তুমিই কেন বলো ধৈর্য ধরো
সময় তুমি বলো ধৈর্য ধরে কী হবে
সময় সময়কে বলে এভাবে আর কতদিন
তারপরও সময় বলে আর একটু ধৈর্য ধরো
বৃষ্টি আসবে ঝড় আসবে সুনামি আসবে
হিংসার যত তেঁতুলের রস টগবগ করবে
এক সময় রসের হাঁড়ি শুকিয়ে যাবে
দুঃসময় সময়কে কত অপবাদ দেবে
সময় দুঃসময়কে অতিক্রান্ত করবে
ভাবিতে ভাবিতে যাপিত জীবন
যত সাধু সব হয়ে গেল চলিত মনন
সময় এত নিঠুর বুঝিলে মন?
বকিলে মন সময় সাধন
অধম বলে সময় ধন
সময় সাধনা
পরম পাওনা
সময় সাধনা
অনন্ত সময়
পড়ন্ত সময়
জ্বলন্ত সময়
শান্ত সময়
মিষ্টি সময়।
মিষ্টি তেতুল
আমি কি রেখেছিলাম আঙিনা তোমারই জন্য
আমার অস্তিত্ব জুড়ে কি শুধুই তুমি ছিলে না?
পাশবিক চিন্তা কুড়ে কুড়ে খেয়েছে সাহিত্যরস
আজ আমি চলে যাচ্ছি তোমার নেই আক্ষেপ।
তেঁতুল গাছের মিষ্টি তেঁতুল ঝরে পড়ছে মাটিতে
একে একে আমলকি ঝরে পড়ছে বুকের মাঝে
শিউলি মিনি টগর কাঠ গোলাপ ঝরছে হৃদয়ে
ঝরছে কামরাঙ্গা গোলাপি নাশপাতি কাঠবাদাম।
কবুতর ছানাগুলো আর যেন পারছে না উড়তে
পুকুরের বড় তিনটি রঙিন মাছ মরে গেল দুঃখে
বাতাসে মে ফ্লাওয়ার ফুলগুলো ঝরছে অবিরত
হৃদয়ের ক্ষরণে ক্ষরণে সূর্যমুখী ফুল হয়েছে নত।
চিঠির পাতায় লেখা তোমার নাম ছিঁড়ে বাতাসে
একবার বলেছি আমি চলে যাচ্ছি দূরে কোথাও
প্রকৃতির হৃদয়ে করুণ সুর বিচ্ছেদের অভিমান।
আমার বিস্ময়ের রইল না শেষ সমাপ্ত জীবন
তোমার চোখের এক ফোঁটা জল ঝরলো না?
বন্ধুত্ব বিশ্বাসের আলো
যে দিন বন্ধু হলো সেদিন অন্তর হলো আলোকিত
বিশ্বাসের দ্বারে আত্মবিশ্বাসের আলোয় সঞ্চরিত
সেদিন হৃদয়ে সাদা রঙের ওপর দুপুরের সূর্যের
আলোর প্রতিস্থাপনে এক অনবদ্য রঙ প্রস্ফুটিত
উজ্জ্বলতর অনবদ্য রঙ প্রেমবিশ্বাসের প্রতিরূপ
নির্মল বন্ধুত্বের পবিত্র সম্পর্ক যেন স্বর্গবাস স্বরূপ
তুমি নও সুদর্শন পুরুষ তোমার কণ্ঠ ভরা মাদকতা
তোমার আবৃত্তির নৈপুণ্য হৃদয় ছেদিয়া উদ্বেলিত
তোমার ওই প্রসারিত বুকে প্রশান্তির অনন্ত সুখ
তোমার পেশিবহুল কাঁধে রাখলাম জীবনের ভার
বিশ্বাসী দু’বাহুর মাঝে নিশ্চিন্তে করলাম সমর্পণ
বন্ধুত্বের অন্ধ রসায়নে ভালোবাসার শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ।
যাপিত দিন কবিতাটি খুব ভালো লেগেছে, আপনার জন্য শুভকামনা