কবিতা

গুচ্ছ কবিতা// সৌম্য সালেক//

মেঠো স্বপ্নের পালা

কেবল দণ্ড চায়, শিকারীর তীক্ষ্ম হার্ফূণ শর শত শত
কেবল তৃপ্ত হতে অগণন লোকে বোঝা বাঁধে, ভারী বোঝা শির কশেরুকা কাঁপা
সাধে ও স্বপ্নে ওরা এই অসহ্য আয়োজন সয়ে যায় দিনে-রাতে
পরিশেষে অধিকৃত পটভূমি চায় মানুষের সারি, শক্তি ও সমাগম ভালোবেসে

ওরা আছে, উড়ু উড়ু– কামনার রং আছে, অনুকূল হিম আছে, হাড় আছে
বর্তুল দেহ জুড়ে যৌথ-যৌনতার শিস আছে পৃথিবীতে
শুধু অনিকেত অঘ্রানে মেঠো স্বপ্নের মগ্নতা নেই
নেই মধ্যগ্রীষ্মের-পটে হাটুরের গীত, বিচ্ছেদি

নতুন প্রস্থানের স্রোতে আজ কেউ নেই সৈকতে
উষ্ণ ফেনার মতো ভাঙবে চরম !

বিহযদ

বিহযদ ঘোড়ার কেশর এঁকেছিল।
খুরে খুরে ভাঙনের অগ্নিবেগ বয়ে
সেই তুঙ্গ ধ্বনিরা
ভুলেছিল পটের সীমানা।

ঘন-নীল ঊর্ধ্ব অঙ্গনে, যে ভাষা আলোর সাথে মিশেছিল গুচ্ছতারার প্রাণে
অতলান্ত বর্ণকুহরে
উতাল চন্দ্রক্ষণে কেঁপে কেঁপে নিশিদিন
বিহযদ, আঁকে সে রোদের গাথা
পাখিদের উদয়-রোদন!

সেইসব মধুমাসে ছিল বাহারি-গোলাপ শত
খুনসুখি পাখিদের আহাজারি, বিষাদের নগ্ন-কোলাজ, মুখোমুখি বিচ্ছেদ- বিগ্রহ
ছিল বুঝি খেপাদের ঘূর্ণি-মাতম

জাদুর মিনিয়েচার, দেখি
ফলভারে নুয়ে আছে আঙুর লতিকা
ঢেউ খেলে, অলি নাচে, বুলবুলি গায়
লেগুনের ঊর্ধ্বশ্বাস সোনারঙ ছড়ায় বাতাসে

পারে পারে, পাথারে- কান্তারে সব জড়ো হলে
কী থাকে বাকী আর
বিহযদ, বলো কী থাকে অবিকার!

পুরনো মানুষ

আমি এক পুরনো মানুষ
পুরনো দোহারা দেহ, লাঙল- জোয়াল ভালোবাসি
ভালোবাসি ঘুঘু ডাকা প্রভাতের স্নেহ
ঘর্মাক্ত কৃষাণবালার সহ্যশীল তামাটে শরীর ভালোবাসি
মাতামহীর কণ্ঠে কোমল রূপকথা শুনে কেটে যায় রাত
সোহরাব-রুস্তম- রাজমালা
আমি এক পুরনো মানুষ
টান্ করাতের শিত্ শিত্ শব্দ মর্মে বেঁধেছে স্বর অনাবিল সংগীতের তীব্রতায়
বটতলার উদাস আসরে আমি এক চির ভোলা
খেপা গায়েনের বিচ্ছেদি শুনে হয়েছি যে ঘরছাড়া
মধুমাসে কামনার ওম নদী রেঙেছিল বাঁকে
প্রীতির কাহন তার লাল ঠোঁটে মেখেছিল ফাগুনের সুধা
অচিন অভিলাষে হৃদয় ছন্ন ছিল, সবকিছু ফেলেছি প্রত্যাখানে
আমি এক পুরনো মানুষ
সোনালী আঁশের ক্ষেতে ডুবে আছে মুগ্ধ শরীর
লাখো লাখো পত্র ছেয়ে আমারি পালক যেনো ঝড় তোলে বাতাসের তালে
মীন-সুখী ধীবরের সাথে গভীর সাগরে যাবো আমি
গুচ্ছতারার সাথে জলের-কলহ দেখে মুগ্ধ হবো সারারাত

একদিন বর্শা হাতে দাঁড়াবো কান্তারে
ঝরাপাতা আগুনে পোড়াবো উগ্র শিখার পাশে ঘুমাবো অশেষ
আমি এক পুরনো মানুষ, পুরনো দোহারা দেহ
ঘর্মাক্ত কৃষাণবালার তামাটে শরীর ভালোবাসি
মাতামহীর কণ্ঠে কোমল রূপকথা শুনে কেটে যায় রাত
টান্ করাতের শিত্ শিত্ শব্দ মর্মে বেঁধেছে স্বর সুপ্রাচীন সংগীতের তীব্রতায়

আমি এক পুরনো মানুষ…

এইসব রেখে যাবো পশ্চিমে

এইসব আমি রেখে যাবো পশ্চিমে
এই তপ্তদিন, ধূলি, রক্তিম স্বপ্নভার
এই মেঘদল, অশ্রুস্বর, লেলিহান সাধ
ধূর্ত নগরপটে ক্ষমাহীন উগ্র-সন্তাপ
সব আমি রেখে যাবো পশ্চিমে

এইসব যূথচারণের দিন, তৃণদল, মত্ত-ফাগুন
এই ভোলা নদী, রমণীয় রাতের বেষ্টন
এই বনগৃহ, মধুমাসী ঝড়ের বিক্রম
ধূলায় গড়ানো স্বর, কানামাছি, কলহ-পুরান
হলুদ পাখির পিছে ধাওয়া বনবাসী দিনমান
সব আমি রেখে যাবো পশ্চিমে

এইসব কর্মময় দুপুরের নেশা, করুণ অক্ষর
এই কথার কুহক, উষ্ণ-চাহনি, অঙ্কুরিত কোলাহল
গীত ও ব্যথা বিনিময়, অবিরাম স্রোতের শীকর
এই প্রেম প্রেম চাওয়া, গুনগুন ধ্বনির-বাতিক
সব আমি রেখে যাবো পশ্চিমে

এইসব স্বপ্নময় রাতের গুঞ্জন আর ব্যাহত বিকেল
এই স্মৃতিখেলা, শৈশবের খোয়ানো বোতাম
এই তুঙ্গ বাসনার জ্বালা, রবাহূত আর্তনাদ
বিচ্ছেদের পরিভাষা, রূপ ও গন্ধবিলাস
এই বৃষ্টিদিন, মাটির মরমি গাথা, স্নেহভরা মাতৃদিন
মেঘনা- যমুনার বুকে বয়ে চলা মায়াবি-তরল
সব আমি রেখে যাবো পশ্চিমে

ভুলে যাবো প্রাচ্যসাধন-যত
একান্ত আস্থার দিকে বাড়াবো দুহাত
কোমল-কান্তি কেউ কাছে এসে বসবে নিরবে
শান্ত হবো তার কোলে রেখে মাথা
অথৈ কিনারে ডাকে বংশী, মধুমতি, দেলুতি- দখিনা
নীল-মজ্জনে মন দিশেহারাÑ অভিমুখে অনন্ত সাঁতার…

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *